অক্টোবরে ১২ দিনের কর্মসূচি দিলো জামায়াত

আপলোড সময় : ০১-১০-২০২৫ ০২:৪৭:২৭ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০১-১০-২০২৫ ০২:৪৭:২৭ অপরাহ্ন
পিআর পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবিতে দ্বিতীয় ধাপে অক্টোবর মাসে ১২ দিনের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল  মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
লিখিত বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণের দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, জনগণের আন্দোলনের কোনো প্রতিফলন হচ্ছে না। সরকারের উচিত ৫ দফা দাবি মেনে নেওয়া। সরকার যদি জনগণের দাবি উপেক্ষা করে, তাহলে দেশের জনগণ ন্যায্য দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে বাধ্য হবে। সে জন্যই আমাদের এই দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি। তিনি বলেন, ৫ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপে আমাদের কর্মসূচি হচ্ছে– ১-৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গণসংযোগ; ১০ অক্টোবর ঢাকায় ও বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া।
জামায়াতের ৫ দফা দাবি হলো-১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। ২. নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। ৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। ৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাঁবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের বিচার করতে হবে, বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সব পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সঙ্গে দু’একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। তিনি আরও বলেন, এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দুইটি প্রস্তাব করেছে। প্রথমত– জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করা, দ্বিতীয়ত– এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের আয়োজন করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা। সেটা না হলে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। জামায়াত সেক্রেটারি ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, মানসম্মত পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়-ভিত্তিক ও জবাবদিহি-মূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের ৫ দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষিত কর্মসূচিতে সারাদেশে বিপুলসংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। এজন্য আমরা দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আজ আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমাদের ৫ দফা গণদাবি ইতোমধ্যে জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই দেশের জনগণ এ দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে শামিল হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত অবিলম্বে জনগণের ৫ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। সরকার যদি জনগণের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে এবং বিদ্যমান সমস্যার দ্রুত সমাধান না করে তাহলে দেশের জনগণ তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য কঠোর হতে বাধ্য হবে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net