মহাসপ্তমীতে পূজামণ্ডপে কলাবউ স্নান শুভবোধ জাগ্রত হওয়ার প্রত্যাশা

আপলোড সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ১২:২৬:০৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ১২:২৬:০৪ অপরাহ্ন
অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির জয়ের আকুতি জানিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমীতে দুর্গতিনাশিনী দেবীর কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন সপ্তমীতে পূজা দিলে ‘সাত জনমের পাপ মোচন হয়ে যায়’। গতকাল সোমবার নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে সপ্তমী পূজায় অংশ নিয়েছেন ভক্তরা। মহাসপ্তমীর রীতি অনুযায়ী সকালে প্রথমে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে দিয়েই মূলত শুরু হয় দেবীর পূজা। এদিনের আয়োজনে রয়েছে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এই নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়। পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’। ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে সকালে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার পর কলাবউয়ের মহাস্নানের মাধ্যমে সপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা চলে। নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ মূলত দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গা নমোঃ’ মন্ত্রে পূজিত হন। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়। বেলা ১১টার পর ভক্তরা দেবীদুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন এবং প্রসাদ গ্রহণ করেন। এর আগে আরতির পর দেবীর পদজলে উপবাস ভেঙে প্রার্থনা করেন ভক্তরা। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় ও উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী পূজা পরিচালনা করেন। ষষ্ঠী তিথিতে রোববার মর্ত্যলোকে ঘুম ভেঙেছিল দুর্গার, প্রতিমায় চক্ষুদানের মধ্য দিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ত্রিনয়নী দেবীর। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, সপ্তমীতে পূজা দিলে সপ্তজনমের, মানে সাত জনমের পাপ মোচন হয়ে যায়। আর অষ্টমীতে ‘অষ্টমঙ্গল লাভ’ করা হয়। নবমীতে ‘পূর্ণপূজা’র পর দশমীতে দেবী ‘অপরাজিতা’ হন। দশমীতে দেবীকে বিদায় জানানোর বেদনাও জেগে ওঠে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, শনি ও রোববার বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বোধন হল উপলব্ধি করা যে তিনি এসেছেন। আর ষষ্ঠীতে অধিবাস হল আমন্ত্রণ জানানো যে আমরা পূজা করব। সপ্তমী থেকে মূলত পূজা শুরু। দুর্গোৎসবকে ঘিরে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে শাঁখা-সিঁদুরসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। একটি বইয়ের দোকানও দেখা যায়। ভক্তদের কেউ কেউ পূজায় এসে পছন্দের পণ্যও কেনেন। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ বলেন, আমাদের সকলের প্রত্যাশা অশুভ শক্তির যেন ‘দমন’ হয়। শুভ শক্তির জয় হয়। অশুভ শক্তি আমাদের সবার মধ্যেই থাকে। রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতি-সব জায়গায় অশুভ শক্তি বিরাজমান। আবার শুভ শক্তিও সবার মধ্যে থাকে। অশুভের যেন জয় না হয়। শুভশক্তির যেন জয় হয়। এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধরায় আসেন। সন্তানদের নিয়ে কয়েকটি দিন পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। তারা বিশ্বাস করেন, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমণের সময়ই দুর্গোৎসব। রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত। এবারের পূজায় কেবল ঢাকাতে গতবারের তুলনায় ৭টি বেড়ে মোট ২৫৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর সারাদেশে মোট মণ্ডপের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৩৫৫টি, যা গতবারের তুলনায় প্রায় হাজারখানেক বেশি। আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হবে মহাষ্টম্যাদি কল্পরাম্ভ ও মহাষ্টমী বিহিত পূজা। দুপুর ১টা ৫০ মিনিট থেকে ২টা ৩৮ মিনেটের মধ্যে হবে সন্ধিপূজা এবং মধ্যাহ্নে মহাপ্রসাদ বিতরণ। এদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষভাবে হবে ‘কুমারী পূজা’। ঢাকায় সবচেয়ে বড় পরিসরে মহাঅষ্টমীর কুমারী পূজা হবে রামকৃষ্ণ মিশনে। এদিন ফুল, জল, বেলপাতা, ধূপ-দীপসহ ষোড়শ উপচারে কুমারীরূপে দেবী দুর্গারই আরাধনা করা হয়। রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল ১১টায় কুমারী পূজা হওয়ার কথা রয়েছে। বুধবার সকালে ঢাকেশ্বর মন্দিরে হবে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও মহানবমী বিহিত পূজা। সন্ধ্যায় হবে আরতি প্রতিযোগিতা। এদিন সকালে তর্পণে দুর্গার মহাস্নান হবে, ষোড়শ উপচারে পূজা করা হবে। পুষ্প, অর্ঘ্য নিবেদন শেষে দেবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি দেবেন ভক্তরা। কোনো কোনো মণ্ডপে নবমীতে যজ্ঞের আয়োজন হয়। মহানবমীতে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠতে শুরু করে ভক্তদের হৃদয়। বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর দিন সকালে হবে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন। দুপুর ১২টায় থাকবে স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং বিকেল ৩টায় বের হবে বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া দশমীতে একদিকে ‘আনন্দময়ী মাকে’ বিদায় জানানোর পালা, আবার আসন্ন বছর ‘মা’ আবার আসবেন সেই অপেক্ষার শুরু। সেদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net