এবার পার্বত্য তিন জেলাতেই অবরোধের ঘোষণা, নতুন ৮ দাবি

আপলোড সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ১১:৩৫:২০ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ৩০-০৯-২০২৫ ১১:৩৫:২০ পূর্বাহ্ন
খাগড়াছড়িতে চলমান অবরোধ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের বাকি দুই জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানকে। এবার তিন পার্বত্য জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা ফ্রন্ট। এ ফ্রন্টের ব্যানারে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিন জেলায় অবরোধের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তবে এটিতে স্বাক্ষর নেই কোনো ছাত্র নেতার। শুধু অবরোধের আওতা বাড়েনি, নতুন বিজ্ঞপ্তিতে বাড়ানো হয়েছে দাবির সংখ্যাও। এর আগে একটি ধর্ষণ সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করলেও অবরোধ পালনকারী জুম্ম ছাত্র-জনতা ফ্রন্ট এবার সেখান থেকে সরে এসে আট দফা দাবি উপস্থাপন করেছে। দাবিগুলো হলো- ১। আলোচনার প্রারম্ভকাল থেকে পরবর্তী সময়ে পর্যন্ত যেকোনো প্রকার হামলা, সহিংসতা বা ভীতি প্রদর্শন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আইনিভাবে বাধ্য থাকবে এবং সেই নিশ্চয়তা প্রদান করবে। ২। ধর্ষণ মামলার অবশিষ্ট দুই আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার আসামি চয়ন শীলের বিচার ত্বরান্বিত করে দণ্ড কার্যকর করা ও তা সরকারি গেজেটে বিজ্ঞাপন করে প্রকাশ করতে হবে। ভুক্তভোগীকে পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। ৩। ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ঘটে যাওয়া সেনা-ও-সেটলারদের দ্বারা লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণের ঘটনাসহ সমস্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ সংবেদনশীল আইনি তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। এই বিষয়ে একটি অফিসিয়াল তদন্ত প্রতিবেদন আমাদেরকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে। ৪। নিরীহ ও নিরস্ত্র জুম্ম ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত হামলা, দোকানপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগে সৃষ্ট ক্ষতির পূর্ণ ক্ষতিপূরণ প্রদান রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আহত সবার সুচিকিৎসার দায়ভার জেলা/রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে। ৫। শান্তিপূর্ণ অবরোধ ক্ষুণ্ন করা, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বিনা উসকানিতে আক্রমণ এবং জুম্ম আদিবাসীদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে সে সবের পূর্ণ ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিকার দিতে হবে। ৬। চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আটক সব জুম্ম ছাত্র-জনতাকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হামলাসমূহের স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্ত সম্পন্ন করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭। আলোচনার টেবিলে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছাত্র-জনতা প্রতিনিধির এবং অন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৮। ১৪৪ ধারা বাতিল করতে হবে। উপরোক্ত দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে তারা আরও কঠোর এবং সুসংগঠিত আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জুম্ম ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে খাগড়াছড়িতে তারা শান্তিপূর্ণ অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ সততার সঙ্গে পালন করে আসছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে খাগড়াছড়ি শহরজুড়ে সেনাবাহিনীর ব্যাপক তল্লাশি, মারধর ও ধারপাকড়ের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে- যা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। তদুপরি গুইমারায় জুম্ম ছাত্র-জনতার ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ এবং সেটলারদের দ্বারা দোকানপাট ও বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের নির্মম প্রতিবেদন এসেছে। সেনা ও সেটলারদের হামলায় ‘চার জন নিহত’ এবং বহু জন আহত হয়েছেন দাবি করে এই বর্বরতা ও ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতির কঠোরভাবে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন অবরোধকারীরা। তারা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, তাদের বোনের প্রতি হওয়া ন্যায়হীনতা, সাম্প্রদায়িক উৎপাত, সেনাবাহিনীর গুলিতে হত্যা অথবা সেটলারদের নির্মমতাগুলো সুস্থ বিচার না হওয়া পর্যন্ত লড়াই জারি রাখবেন এবং তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় তাদের সড়ক অবরোধ অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হলো এবং সব পর্যটন কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকবে। ১৪৪ ধারা বলবৎ: এদিকে খাগড়াছড়ি জেলার দুই উপজেলায় (সদর ও গুইমারা) জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হয়নি। ফলে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। অনেক বিসিএস পরীক্ষার্থী, যাদের ঢাকায় ভাইভা পরীক্ষা চলছে তারাসহ অনেক পর্যটক খাগড়াছড়িতে আটকে আছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত থাকলেও ভুক্তভোগীদের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। নিহত ৩ জনের লাশ মর্গে: গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) অবরোধ চলাকালে গুইমারার রামসু বাজার ও আশপাশের এলাকায় নিহত তিন জনের লাশ খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে আছে মর্মে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের। তবে তিনি তাদের নাম-ঠিকানা ও পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। গতকাল সোমবার লাশগুলোর ময়নাতদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন। অস্ত্র উদ্ধার: গত রোববার বিকালে বান্দরবান থেকে কাপ্তাই ও রাঙামাটি হয়ে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে কাপ্তাই বিজিবি কর্তৃক ওয়াগ্গাছড়া চেকপোস্টে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল। তিনি জানান, পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ এসব দেশীয় অস্ত্র, বিশেষ করে ধারালো রামদা খাগড়াছড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ের চলমান পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করা। এ ঘটনায় উদ্ধার অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে প্রক্রিয়া চলছে। স্থবির জনজীবন: খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় অবরোধ সম্প্রসারিত হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অফিস আদালত খোলা থাকলেও উপস্থিতি নেই বললেই চলে। থমথমে পরিস্থিতি চারদিকে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টার রোববারের দেওয়া নির্দেশনার আলোকে প্রতিটা পয়েন্টে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে অবরোধ শিথিল: খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে শিথিল করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ শিথিল ঘোষণা করেছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। সকালে জুম্ম ছাত্র-জনতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের অফিসিয়াল পেজ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক বাদে বাকি সব জায়গায় নিয়মিত অবরোধ চলবে বলেও বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়। অবরোধ শিথিল হওয়ার পর থেকেই খাগড়াছড়ির বিভিন্ন টিকিট কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা যায়। শহর থেকে দূরপাল্লার বাস, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য গাড়ি দুপুর ১২টার পর থেকে ছেড়ে যেতে শুরু করেছে। যাত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগই খাগড়াছড়ি, সাজেকসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণে আসা পর্যটক। তিন দিন ধরে আটকে থাকা সুলতান আহমেদ, রাজীব রহমান, নাজিম উদ্দিনসহ আরও বেশকিছু পর্যটক তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে ভ্রমণের জন্য আসলে অবরোধের কারণে আটকে যান। সাজেক থেকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় খাগড়াছড়িতে এসেছেন। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজ গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছেন। তবে যেকোনো ধরনের ভোগান্তি এড়াতে, পাহাড়ের শান্তি, সম্প্রীতি, পর্যটন, অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য অবরোধ ও সহিংসতায় না জড়িয়ে সবার সমন্বয়ে শান্তি স্থাপন করার অনুরোধ জানান তারা। জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, খাগড়াছড়ির শহর, পৌর শহরসহ প্রতিটি উপজেলায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবরোধের কারণে যে সমস্ত পর্যটক ও যানবাহন আটকা পড়েছিল, তাদেরকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net