যেসব কারণে সিংক হোল তৈরি হয়

ঠিকাদার-প্রকৌশলীদের গাফিলতি ‘সিংক হোল’ আতঙ্কে নগরবাসী

আপলোড সময় : ২৭-০৯-২০২৫ ০২:১৬:১২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৭-০৯-২০২৫ ০২:১৬:১২ অপরাহ্ন

* ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেলে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে
* পুরোনো ড্রেন বা পাইপলাইনের লিকেজে মাটি ধুয়ে গিয়ে ফাঁপা তৈরি হয়
* ভেঙে পড়া সেপটিক ট্যাংক বা পাইপলাইনের কারণে নিচে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়
* কিছু এলাকায় চুনাপাথর বা দ্রবণীয় কয়লা পানিতে গলে এমন গর্ত তৈরি করে।

রাজধানীতে যেকোনো সময় ঢাকার রাস্তায় তৈরি হতে পারে ‘সিংক হোল’, যে কেউ সিংক হোলে পড়ে জীবন হারাতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারের অনিয়ম ও প্রকৌশলীদের অবহেলায় তৈরি হয়েছে এমন বিপদের আশঙ্কা। তবে প্রাকৃতিকভাবে সিংক হোল হওয়ার আশঙ্কা নেই বাংলাদেশে। ঠিকাদারের-প্রকৌশলীদের এসব অনিয়ম-অবহেলা রোধ করা গেলে ঢাকার রাস্তায় সিংক হোল হওয়ার ঝুঁকি দূর করা সম্ভব বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের।
২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে হুট করে সুন্দরবন হোটেলের সীমানাপ্রাচীর ও বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কের একাংশ ভেঙে পড়ে । এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজধানীর সুন্দরবন হোটেল। সিংক হোলের ধরন বিশ্লেষণ করলে ঘটনা একই রকম। তখনও সিংক হোলের বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অজানা। পরে ধানমন্ডির একটি সড়কে হুট করেই রাস্তা ধসে পড়ে। সে ঘটনায়ও হতাহত হয়নি কেউ। তবে সেই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পায় সিংক হোল। সিংক হোল কি? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার দিকে তাকালেই ব্যাপারটি অনেকাংশে পরিষ্কার হয়ে যায়।
সিংক হোল হলো একটি গভীর খাদ বা গর্ত যা ভূ-পৃষ্ঠের ওপর তৈরি হয় যখন নিচে থাকা মাটি বা শিলার স্তর ধসে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি হাসপাতালের সামনের সড়কে হুট করেই তৈরি হয় সিংক হোল। এ ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি এখনও। তবে প্রশ্ন রাজধানী ঢাকার সড়ক নিয়ে। যদি এমন ঘটনা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হয় তাহলে হতাহতের সংখ্যা চিন্তা করেই আতকে ওঠে অনেকে। সরকারী প্রকৌশলীদের নজরদারি ও ঠিকাদারের দুর্নীতি কমানো গেলে বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রকৌশলীরা। নির্মাণকাজের ত্রুটি রোধ করতে থার্ড পার্টি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া গেলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যেতে পারে বলেও মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
গত ২৮ মে রাজধানী ঢাকায় প্রথমবারের মতো একটি সিংক হোলের ঘটনা ঘটে। ওইদিন সকালে ধানমন্ডির পাশের শংকর এলাকার সাত মসজিদ রোডে শংকর বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি হঠাৎ একটি বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা বিষয়টি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ঐ অংশে যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে নগরবাসীর সামনে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ঢাকা শহরের অবকাঠামো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালের ব্যস্ত সময়ে হঠাৎ রাস্তায় একটি বড় গর্ত দেখা যায়। রাস্তাটি ধসে পড়ার পর থেকেই সেখানে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ঘটনাস্থলের পাশেই চায়ের দোকানি মো. জাসিম বলেন, বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ করেই রাস্তায় গর্ত তৈরি হয়। প্রথমে আশপাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়া শুরু করে, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গর্ত বড় হয়ে যায়। পানি পাইপে লিক করার কারণে এমন হয়েছে। আমি রাত ১০টার দিকে বাসায় চলে যাওয়ার সময়ও রাস্তা ঠিক করা হয়নি। তবে বিকাল ৪টার পরপরই এই রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়কটিতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এএসআই মো. হাফিজ বলেন, ৪টার পরপর রাস্তায় গর্ত তৈরি হওয়ায় সংকর মোড়ের আগে থেকেই ডাইভারশন করে দেই। এই গর্তের জন্য আশেপাশের এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছিল। রাতে ঠিক করার পর আবারও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সিংহল হলো হঠাৎ ধসে যাওয়া একটি গর্ত, যা মাটির নিচে ফাঁপা জায়গা তৈরি হলে এবং ওপরের স্তর ভেঙে পড়লে তৈরি হয়। এতে মনে হয় যেন রাস্তা হঠাৎ করেই মাটি গিলে ফেলছে। তাদেরমতে, সিংক হোল হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। ১.ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেলে মাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। ২.পুরোনো ড্রেন বা পাইপলাইনের লিকেজে মাটি ধুয়ে গিয়ে ফাঁপা তৈরি হয়। ৩.ভেঙে পড়া সেপটিক ট্যাংক বা পাইপলাইনের কারণে নিচে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়। ৪.কিছু এলাকায় চুনাপাথর বা দ্রবণীয় কয়লা পানিতে গলে এমন গর্ত তৈরি করে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যেমন : ফাটল ধরা বা পানি জমে থাকা রাস্তায় ভারী যানচলাচল নিষেধ। হঠাৎ ধস বা গর্ত দেখলে দ্রুত সরে যাওয়া উচিত। পুরোনো পাইপলাইন ও ড্রেনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। ভূগর্ভস্থ জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকায় প্রথমবারের মতো সিংক হোলের এ ঘটনা একটি বড় অ্যালার্ম বা সতর্কবার্তা। এখনই যদি অবকাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net