
সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুরসহ দেশের ১২ জেলায় এখন থেকে আটটি আইনে সরাসরি মামলা গ্রহণ করবে না আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই বিধান কার্যকর করা হয়েছে। নতুন বিধি অনুযায়ী এসব মামলা দায়েরের আগে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত বুধবার সিলেটে নতুন এই বিধির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এর আগে গত মঙ্গলবার এ নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। গণ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- আইন সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ (২০২৫ সনের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) এর ধারা ১ এর উপ-ধারা (২) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি জেলায় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ (২০০০ সালের ৬ নং আইন) এর ২১ খ ধারার বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বিধান কার্যকরের দিন ধার্য করা হয়েছে। ধার্য দিন অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই বিধান কার্যকর করা হয়েছে। সংশোধিত আইনের তফসিল অনুযায়ী যে আট আইনের অধীনে উদ্ভূত বিরোধ বা অভিযোগের বিষয়ে আদালতে সরাসরি মামলা করা যাবে না, সেগুলো হলো- পারিবারিক আদালত আইন (২০২৩ এর ধারা ৫ -এ উল্লিখিত বিষয়), বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৯১-তে উল্লিখিত বিরোধ), সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বণ্টন সম্পর্কিত বিরোধ, স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ট্যানেন্সি অ্যাক্ট (১৯৫০ এর সেকশন ৯৬ এ উল্লিখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ), নন এগ্রিকালচারাল ট্যানেন্সি অ্যাক্ট (১৯৪৯ এর সেকশন ২৪ এ উল্লিখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ), পিতামাতার ভরণপোষণ আইন (২০১৩ এর ধারা ৮ অনুসারে পিতা-মাতার ভরণপোষণ সম্পর্কিত বিরোধ), যৌতুক নিরোধ আইন (২০১৮ এর ধারা ৩ ও ৪ এ বর্ণিত যৌতুক সম্পর্কিত অভিযোগ) ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (২০০০ এর ধারা ১১(গ) বর্ণিত যৌতুকের জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত অভিযোগ। গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়- উল্লিখিত ধারার বিধানমতে চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার (বিচারক) কর্তৃক প্রত্যায়িত প্রতিটি মধ্যস্থতা চুক্তি চূড়ান্ত, বলবৎযোগ্য এবং পক্ষগণের ওপর বাধ্যকর ও আদালতে ডিক্রি অথবা ক্ষেত্রমত, চূড়ান্ত আদেশ হিসেবে গণ্য হবে। বিচার ব্যবস্থায় নতুন এই অধ্যায়ের যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে গত বুধবার বিকেলে সিলেটের গ্র্যান্ড সিলেট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আমরা যে পরিবর্তন করেছি, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার যদি তা ধরে রাখে তাহলে দেশে ন্যায়বিচার আরও বৃদ্ধি পাবে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের আইনগত প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ অনেক বেশি বাড়বে। তিনি বলেন, আমরা সিভিল আদালত এবং ক্রিমিনাল আদালতকে পৃথক করে দিয়েছি। যাতে সিভিল আদালতে মামলার নিষ্পত্তি বাড়ে। তাছাড়া বিচারিক পদ সৃজনের যে ক্ষমতা আগে রাজনৈতিক মন্ত্রীদের কাছে ছিল সেটিকে আমরা প্রধান বিচারপতি কাছে নিয়েছি। মামলার জট কমাতে মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক কার্যক্রম চালুর উদ্যোগকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে দরিদ্র মানুষের জন্য অপূর্ব সুযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কয়েকটি নতুন পরিবর্তন এনেছি। প্রথমত, মামলা দায়েরের আগে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেখানে সমাধান না হলে আদালতে যেতে কোনো বাধা থাকবে না। দ্বিতীয়ত, কয়েকটি আইন সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যেখানে লিগ্যাল এইডে যাওয়া বাধ্যতামূলক। তৃতীয়ত, আগে লিগ্যাল এইডে দায়িত্বে থাকতেন একজন সিনিয়র সহকারী জজ। এখন থাকবেন সিনিয়র যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ। আসিফ নজরুল বলেন, এই কার্যক্রমে আমরা অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের যুক্ত করেছি। কারণ তারা শারীরিকভাবে সক্ষম, অভিজ্ঞ এবং সম্মানীয় ব্যক্তি।