
বৈষম?্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনকে ঘিরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় টানা দুদিন সাক্ষ্য প্রদান শেষে নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জেরা করেছেন আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ নাহিদ ইসলামের সাক্ষগ্রহণ ও শেষে আংশিক জেরা অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, মামুনুর রশীদ প্রমুখ। জেরাকালে সাক্ষী হিসেবে নাহিদ ইসলামের দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাখ্যান করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এসময় আমির হোসেন বলেন, সারা দেশে আন্দোলনে কোনো বাধা দেয়নি সরকার। শেখ হাসিনাও আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলেননি। তার কথার মর্ম সঠিকভাবে না বুঝে আন্দোলন তীব্রতর করা হয়েছিল। তখন সাক্ষী বলেন, মূলত আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলে আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের উসকানি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। জবানবন্দির প্রসঙ্গ টেনে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট বলে দেওয়া বক্তব্যটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত অভিমত। জবাবে নাহিদ বলেন, সেক্রেটারির বক্তব্য কি কখনও ব্যক্তিগত হয়? দলের পক্ষ থেকে তিনি বলেছেন। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেহেতু তার বক্তব্য দলের ও দলীয় প্রধানের বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নির্যাতন চালায়নি ছাত্রলীগ। আন্দোলনে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসায় বাধাও দেওয়া হয়নি। এছাড়া জানমাল রক্ষার স্বার্থেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বরং আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও ঘেরাও করা হয়েছিল বলে জানান সাক্ষী। আইনজীবী আমির হোসেনের দাবি, সরকারকে বেআইনিভাবে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে গত বছরের ১৮ জুলাই সর্বস্তরের জনগণকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সমন্বয়করা। জেরা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের অপমানিত করেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলতে চেয়েছিলেন- যদি কোনো রাজাকারের নাতিপুতি থাকে, কথাটা এমন ছিল। কিন্তু তা ঢালাওভাবে ছাত্ররা নিজেদের গায়ে নিয়ে আন্দোলন বেগবান করেছে। অর্থাৎ বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য তাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল। এর আগে সকালে ট্রাইব্যুনালে ৪৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি প্রদান করেন নাহিদ ইসলাম। দুপুরে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিরতি দেওয়া হয়। বিরতি শেষে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল-১।