
চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে ওসমান গনি
চান্দিনায় সরকারি অর্থে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট। বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে নামমাত্র কাজ করে লুটে নেয়া হচ্ছে সরকারি বরাদ্দের টাকা। উপজেলা দুই প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশই গায়েব হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চান্দিনা উপজেলার একটি খাল খনন প্রকল্পে সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৭ লাখ টাকা, অথচ প্রকল্পের বাস্তবায়নে খরচ করা হয়েছে মাত্র ৭ লাখ টাকা! প্রকল্প এলাকার বাস্তব অবস্থা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, খননের পরিমাণ অত্যন্ত সামান্য, এমনকি অনেক স্থানে খাল খননের কোনো চিহ্নও নেই। আরেকটি প্রকল্পে উপজেলা পরিষদের সরকারি পুকুরের একটি পাড়ে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণের জন্য ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করে জেলা পরিষদ। মাত্র পৌঁনে ৬ লাখ টাকার ওয়াল নির্মাণ করে ৭ লাখ টাকাই হাতিয়ে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
স্থানীয়দের অভিযোগ-এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি, ঠিকাদার ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সরকারি বরাদ্দ লুটপাটের এমন দৃষ্টান্ত চরম উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের নীরবতা ও নজরদারির অভাবেও এ ধরনের অনিয়ম দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়-২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে পানি সম্পদ মেরামত ও সংরক্ষণের আওতায় চান্দিনার উপজেলার চেংগাছিয়া থেকে ঘাটিগড়া হয়ে হরিণা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের জন্য তিন ভাগে ২৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে আঁতাত করে ওই প্রকল্পের মাত্র ৭ লাখ টাকার কাজ করে ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ একটি মহল। ওই খাল পুনঃখননের দায়িত্ব নেয় চিংগাছিয়া সমবায় সমিতি নামের নাম সর্বস্ব একটি সমিতি। ৩ কিলোমিটার ওই খালকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাকির হোসেনকে সভাপতি করে ১৪০০ মিটার খাল পুনঃখননের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৯ লাখ ৮ হাজার ৫১৬ টাকা, দ্বিতীয় অংশে মো. আনিছুর রহমানকে সভাপতি করে ৮০০ মিটার খাল পুনঃখননের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৮ লাখ ৭২ হাজার ৩১৬ টাকা এবং তৃতীয় অংশে শারমিন আক্তারকে সভাপতি করে ৮০০ মিটার খাল পুনঃখননের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮৯৫ টাকা। অথচ খানটি পুনঃখনন কাজে জসিম উদ্দিন নামে এক এক্সেভেটর মালিকের সাথে চুক্তি করা হয়েছে ৭ লাখ টাকা। তিনি জানান, খালে বাধ দিয়ে পানি সেচ এবং ভেকু (এস্কেভেটর) দিয়ে মাটি কাটা পর্যন্ত আমার বিল হয়েছে ৭ লাখ টাকা।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, খাল পুনঃখনন করতে হলে খালের পানি শুকিয়ে করার কথা থাকলেও পানির মধ্যেই খালের পার থেকে ভেকু দিয়ে কাজ করেছে। এতে কি পরিমাণ খনন করা হয়েছে তা বুঝার যেমন কোনো সুযোগ নেই তেমনি পানিসহ কাদামাটি খালের পাড়ে ফেলাতে সেগুলোও আবার খালে চলে গেছে।
এদিকে, সম্প্রতি জেলা পরিষদের ১৩ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ থেকে উপজেলা পরিষদের ভিতরের একটি পুকুরের ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২.১ মিটার উচ্চতার একটি রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স দীপ্ত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১২ হাজার ইটের কংক্রিট, ২শ ব্যাগ সিমেন্ট ও ২টন রডের ওই রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে মাত্র পৌঁনে ৬ লাখ টাকা। অথচ ওই রিটার্নিং ওয়াল করে হাতিয়ে জেলা হয়েছে ১৩ লাখ টাকা! তিন কিলোমিটার খাল পুনঃখননের জন্য প্রায় ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ কীভাবে করেছেন জানতে চাইলে চান্দিনা উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, এটা আমরা লেন্থ হিসাবে ধরে তিন ভাগে ভাগ করে নিয়েছি।
খালে বাঁধ দিয়ে পানি সেচ এবং পুরো তিন কিলোমিটার এস্কেভেটর দিয়ে কাটা এবং সমান্তরাল করাসহ সব মিলিয়ে ঠিকাদার ৭ লাখ টাকা চুক্তিতে সমাপ্ত করতে পারলে আপনারা এ কাজের জন্য ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৭২৭ টাকা বরাদ্দ করেছেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, এস্কেভেটরওলার সাথে আমার কনট্রাক্ট না, সে কয় টাকা দিয়ে কাজ করেছে আমি এটা দেখব না, আমাদের সরকারি রেটসীট অনুযায়ী বিল করতে হয়। উপজেলা পরিষদের ভিতরের পুকুরের রিটার্নিং ওয়াল সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, রিটার্নিং ওয়ালের দৈর্ঘ্য প্রস্থ মেপে দেখেছি সিডিউল-এর সাথে ঠিক আছে। ওই রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ করতে কত টাকা খরচ হয়েছে বা অন্যান্য মালামাল কি পরিমাণ ব্যবহার করা হয়েছে সেই হিসেবে আমার কাছে নেই।