রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সমঝোতা

নির্বাচনের মহোৎসব ফেব্রুয়ারিতেই

আপলোড সময় : ১৪-০৯-২০২৫ ১০:৩০:৩৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৪-০৯-২০২৫ ১০:৩৩:১৭ অপরাহ্ন
রাজনৈতিক ঐকমত্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ : আলী রীয়াজ


আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচনের মহোৎসব হবে। জাতির সত্যিকার অর্থে নবজন্ম হবে। গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এই সমঝোতা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনাকে দেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অধ্যায়। এ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের একটি মাইলফলক তৈরি হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই একমাত্র সুযোগ এবং আমাদের এটা গ্রহণ করতেই হবে। এটা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো উপায় নেই। সমঝোতা বলেন, ঐক্য বলেন আর যাই বলেন, যখন নির্বাচনে যাবো তখন একমত হয়ে সবাই যাবো। এর মধ্যে কোনো দ্বিমত আমরা রাখবো না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতেই হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে, নির্ধারিত ছয় মাস সময়ের আগেই নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক অর্থসচিব ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান। গতকাল রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় বেতন কমিশনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধান উপদেষ্টাকে এ তথ্য জানানো হয়। পরে বৈঠকের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়াতে ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ গঠন করে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে ২৩ সদস্যের এ কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপন গত ২৭ জুলাই প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বৈঠকে জাতীয় বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন, গত এক দশকে মূল্যস্ফীতি-জিডিপি বাড়লেও সে অনুপাতে বেতন বাড়েনি। একটি সময়োপযোগী বেতন কাঠামো নির্ধারণের পাশাপাশি কমিশন বিশেষায়িত চাকরির জন্য আলাদা বেতন কাঠামো গঠন; আয়কর পরিশোধ বিবেচনায় বেতন কাঠামো; বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও যাতায়াতসহ অন্যান্য ভাতা নিরূপণ; মূল্যস্ফীতির সঙ্গে বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ; সময়োপযোগী পেনশনসহ সুবিধা নির্ধারণ; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মান মূল্যায়নে কাজ করছে। মূল্যায়ন অনুযায়ী একটি বেতন কাঠামো প্রণয়ন, টেলিফোন, গাড়ি ও মোবাইল ফোনসংক্রান্ত বিষয়ে আর্থিক সুবিধা নগদ ও রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণ, বেতনের গ্রেড ও ইনক্রিমেন্টে অসঙ্গতি থাকলে তা দূরীকরণে সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি। কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এরই মধ্যে পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। বেতন কাঠামো নির্ধারণে ছয় মাস সময় দেওয়া হলেও এর আগেই আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো বলে আশা করছি। বৈঠকে বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি যৌক্তিক বেতন কাঠামো নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে কর্মকর্তাদের জন্য স্বাস্থ্য বিমার বিষয়ে জোর দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ। বেতন বাড়ালেও দেখা যায় এক অসুখেই অনেকে সম্বল হারিয়ে ফেলেন। ইন্স্যুরেন্স থাকলে পরিবার নিশ্চিন্তে থাকে। এ ধরনের কিছু মডেল প্রতিবেশী দেশগুলোতেও আছে। এক দশক পর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
এ কমিশন জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান।
অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মানুষ কারো চাকরি করার জন্য নয়, বরং নিজের উদ্যোগ তৈরি করার জন্য জন্মগ্রহণ করেছে। তিনি গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবন-২ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষকে তার সক্ষমতার ভিত্তিতে নিজের পথ চিহ্নিত করার সুযোগ দেওয়া উচিত। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোক্তা উদ্ভূত হয়েছে এবং প্রযুক্তির বিকাশের কারণে আরও নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। প্রযুক্তি আমাদেরকে বিশ্বের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে যুক্ত করেছে। এখন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করার সময় এসেছে, তিনি উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা চাই প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব সক্ষমতার আলোকে যেখানে যেতে চায় সেখানে পৌঁছাতে পারুক। পিকেএসএফ নতুন ভবন উদ্বোধনের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের নতুন যাত্রা শুরু করবে। তিনি যুব সমাজের উদ্ভাবনী শক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বর্তমান প্রজন্ম আগের দিনের মতো নয়; তারা অনেক দূর এগিয়েছে, কয়েক লাখ নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে। পিকেএসএফ-এর প্রতিষ্ঠার স্মৃতি তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস জানান, প্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয়েছিল বিশ্বব্যাংক থেকে আসা ২০ কোটি টাকার ফান্ডকে কেন্দ্র করে। তিনি বলেন, ওই ফান্ড না হলে পিকেএসএফ জন্ম পেত না। সেই সময় প্রেসিডেন্ট এরশাদ ফান্ড রাখার জন্য আমাকে সমর্থন করেছিলেন। আমরা লক্ষ্য করেছি, মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে পারলে, ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষকে সত্যিকারের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা সম্ভব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পিকেএসএফ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানসহ অন্যান্য সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এছাড়াও গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনাকে দেশের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব অধ্যায়। এ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের একটি মাইলফলক তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে তিন দফায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রথম দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় ২ জুন প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এবং ৩ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ২৩টি অধিবেশনে বিস্তৃত আলোচনা চলে। বর্তমানে তৃতীয় দফায় সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ৩০টি দল সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইন, দুর্নীতি ও জনপ্রশাসন নিয়ে যে আন্তরিক ও সারগর্ভ আলোচনা করেছে তার মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার বাস্তবায়ন করা। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা যে সহিষ্ণুতা, শ্রদ্ধাবোধ ও ভিন্নমতের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন, তা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের সম্মিলিত প্রতিষ্ঠান একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করেছে, যা রাজনীতিবিদদের ঐক্যের দলিল। যে ঐক্য ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করেছে, জাতীয় সনদ তারই ধারাবাহিকতা। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তোলনের মাধ্যমে এমন এক রাষ্ট্র নির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ, যেখানে জবাবদিহিমূলক শাসন থাকবে, নাগরিকের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকবে এবং সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা এ প্রক্রিয়া ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যে রক্তের ওপর দিয়ে আমরা এগিয়েছি, তার কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই অঙ্গীকার রক্ত দিয়ে লেখা। তিনি বলেন, সামনের মাসগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আলোচনার চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আমরা যা অর্জন করেছি তা সামনে এগিয়ে নিতে হলে ঐক্য বজায় রাখা জরুরি। কমিশনের জন্য প্রয়োজন সবার সহযোগিতা।

 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net