
* ডাকসুতে বাকেরকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ালেন মাহিন
* ‘অভূতপূর্ব সাড়া’ পাচ্ছি আবিদুল ইসলাম
* গায়ে হাত তোলার চেয়ে অনলাইনে গালিগালাজ বেশি বিপর্যস্ত করে আব্দুল কাদের
* আবাসন-খাবারের মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেব : সাদিক কায়েম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে মিছিল, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছেন প্রার্থীসহ সমর্থকরা। জমজমাট প্রচারণা উপভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। পক্ষে-বিপক্ষে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এলেও এখন পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাবি ক্যাম্পাসের টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, কলাভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে— নিজেদের পক্ষে ভোট চেয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, মিলনায়তন ও অনুষদ-যেখানে শিক্ষার্থীদের পাচ্ছেন, সেখানেই ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মাহিন সরকার। তিনি এ পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) প্যানেলের প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারকে সমর্থন দিয়েছেন। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহিন এই কথা জানান। এসময় আবু বাকের মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। বাকেরের হাত উঁচিয়ে ধরে তার প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেন মাহিন। তিনি বলেন, আবু বাকের মজুমদারের বিজয়ই আমার বিজয় বলে সূচিত হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতি দায়বদ্ধতা ও ঐক্যের চিন্তা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে মাহিন সরকার বলেন, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে গণঅভ্যুত্থানের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে সুসংহত করার জন্য সবার দায়িত্ব রয়েছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নয়, সব জায়গায় গণঅভ্যুত্থানের শক্তির ঐক্য প্রয়োজন। তিনি বলেন, যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে পারে, তাহলে যে কারও চাইতে শিক্ষার্থীদের প্রতি তারা বেশি দায়বদ্ধতা অনুভব করবে। আবু বাকের মজুমদার গণঅভ্যুত্থানের একজন অগ্রসেনানী উল্লেখ করে মাহিন বলেন, তিনি যদি জিএস পদে নির্বাচিত হতে পারেন, সেটি আমার বিজয় বলে সূচিত হবে। আমার সমর্থন আমি আবু বাকের মজুমদারের প্রতি ব্যক্ত করছি। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আবু বাকের মজুমদারকে আপনারা জিএস পদে নির্বাচিত করুন। তার বিজয় মাহিন সরকারের বিজয় বলে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, এখন প্রার্থীর তালিকায় নাম প্রত্যাহারের সুযোগ নেই, তাই প্রার্থীদের তালিকায় আমার নাম থাকবে। এরপর আবু বাকের মজুমদার বলেন, ২০২৪ সালের ৬ জুন মাহিন সরকারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি বলেছিলেন,যেকোনো মূল্যে আন্দোলন (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) সফল করতে হবে। প্রয়োজনে ঈদে আমি বাড়ি যাব না। ’ সেখান থেকে তার সঙ্গে আমার যাত্রা শুরু। তিনি বলেন,গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি হলপাড়ার শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করেন। জুলাইয়ের শুরুর দিক থেকেই বলেছিলেন, আমাদের সংসদ ভবনের দিকে নজর দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে কঠিন সময়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, অনেকেই চেয়েছেন, আমরা যেন একসঙ্গে চলি, একসঙ্গে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে।
‘অভূতপূর্ব সাড়া’ পাচ্ছেন আবিদুল ইসলাম: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ‘অভূতপূর্ব সাড়া’ পাচ্ছেন দাবি করেছেন ছাত্রদল–সমর্থিত সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা যখন প্রচারে যাচ্ছি, ‘অভূতপূর্ব সাড়া’ পাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। এতদিন পরে এসে মনে হচ্ছে, আসলেই সঠিক ছাত্ররাজনীতির চর্চাটা করছি। শ্রদ্ধা, স্নেহ, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও জবাবদিহির আওতায় ছাত্ররাজনীতি করছি। একটি গোষ্ঠী ছাত্রদলের প্যানেলের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচারে নেমেছে ও সাইবার বুলিং করছে। আবিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনকে আমরা জানিয়েছি, যদি আপনারা এই সাইটগুলো বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে গোটা জাতিকে আপনারা সেটি জানান যে আসলে সেটি আপনারা পারছেন না। কারণ, ডাকসু নির্বাচন এখন আর শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নয়, গোটা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার বিষয়। গোটা বাংলাদেশের স্বার্থ এখানে জড়িত।
গায়ে হাত তোলার চেয়ে অনলাইনে গালিগালাজ বেশি বিপর্যস্ত করে: গায়ে হাত তোলার চেয়ে অনলাইনে বুলিং, ব্যক্তি-আক্রমণ ও গালিগালাজ বিপর্যস্ত করে দেয়। এমনটি বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। শুক্রবার জুমার নামাজের পর মাস্টার দা সূর্যসেন হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন। আব্দুল কাদের বলেন, ৫ আগস্টের আগে ভিন্নমত ধারণ করার কারণে অফলাইনে মারধর করা হতো। সরাসরি আক্রমণ করা হতো। গায়ে হাত তোলা হতো। কিন্তু এখন অনলাইনে বুলিং হচ্ছে। গায়ে হাত তোলার চেয়ে অনলাইনে নোংরা ভাষার ব্যবহার গালিগালাজ আরও বিপর্যস্ত করে দেয়। তিনি বলেন, কেবল আমার ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে না। ভিন্নমত ধারণ করেন, এমন সবার ক্ষেত্রেই এমন হচ্ছে। একটা সময় গিয়ে মনে হয়েছে, একটু বোধহয় ভেঙে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, অবশেষে আমাদের লড়াই-সংগ্রামের একটি গতি হতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছি। কীভাবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সমুন্নত রাখা যায়, সে কাজ করেছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বপ্ন মনে হয় সত্যি হচ্ছে। আমাদের নারীরা নির্ভয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করতে পারবে। করতে পারবে, আমাদের স্বপ্ন মনে হয় সত্যি হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করি, সাম্যর মত আর কাউকে যেন ক্যাম্পাসে জীবন দিতে না হয়। ক্যাম্পাস ভবঘুরেদের আড্ডাখানা হবে না। শিক্ষার্থীদের ভোটদানে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডাকসু থেকে আপনাদের মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। গণ-অভ্যুত্থানের পর যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার কথা, তা দীর্ঘ একবছর পর বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। আপনার প্রতিনিধি নির্বাচন করুন।
আবাসন-খাবারের মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেব: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ী হলে আবাসন সংকট নিরসন এবং খাবারের মান উন্নয়নে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্বাচনী প্রচারণার সময় এসব প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সাদিক কায়েম ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পক্ষ থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ অতিক্রম করলেও শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যাগুলোর কোনো টেকসই সমাধান হয়নি। বিশেষ করে আবাসন সংকট এখনো প্রকট। আমরা দায়িত্ব পেলে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রণয়ন করব, যাতে আবাসন সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান সম্ভব হয়। তিনি আরও জানান, এর আগেও তিনি আবাসন ব্যবস্থার সংস্কারে একটি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার মেয়েদের জন্য বিশেষ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, যেসব ছাত্রী হলে সিট পাচ্ছেন না, তাদের জন্য বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। খাবারের মান নিয়েও বক্তব্য দেন সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, হলের খাবারের মান বর্তমানে সন্তোষজনক নয়। আমরা খাদ্যমান উন্নয়নে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করব। দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনা হবে এবং ‘মিল ভাউচার’ সিস্টেম চালু করা হবে, যেন কেউ অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে না হয়। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। এক নেতা বলেন, আমরা প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতে চাই না। বরং শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা বাস্তবায়নে ডাকসুর অবস্থানকে কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সাদিক কায়েমের মতে, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তব সংকট বিবেচনায় নিয়ে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই দায়িত্ব পেলে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ভোটিং প্রক্রিয়া নিয়ে চারটি সচেতনতামূলক সভা করবে ডাকসু নির্বাচন কমিশন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোটিং প্রক্রিয়া নিয়ে সকল ফ্যাকাল্টি ও ইনস্টিটিউট মিলে চারটি সচেতনতামুলক সভা করবে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সভাগুলো অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। শুক্রবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ভবনে অবস্থিত ডাকসু নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।