
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধীনে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীন সরকারের সহায়তায় নির্মিত এই পূর্ণাঙ্গ রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারকে দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম সেন্টার, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং স্নায়ুবিক জটিলতায় ভোগা অসংখ্য মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে উঠবে। গতকাল রোববার বিএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্বে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার গ্যালারিতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন, তখন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল রংপুরে নির্মাণের বিষয়ও রয়েছে। সেই সফরে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য মাত্র ১০-১২টি রোবট চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চীন আমাদের ৫৭টি রোবট উপহার দিয়েছে, যা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। একইসঙ্গে ২৯ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণও দিয়েছে তারা। এটি প্রমাণ করে-বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক কতটা গভীর ও সহযোগিতামূলক। তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানসহ দেশের বড় বড় দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় চীনের এই সহায়তা আমাদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই রোবোটিক সেন্টার যেন শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়-এ বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা চাই, বিএমইউ প্রযুক্তি স্থানান্তরের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠুক। উন্নত বিশ্বের যে চিকিৎসা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি দ্রুত বাংলাদেশে পৌঁছাতে হলে বিএমইউকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশ আমাদের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি-যে কোনো খাতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন। এই রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার সেই সহযোগিতার প্রতীক। আমরা চাই, ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রকল্প একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে। ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ শাকুর বলেন, এই সেন্টার ইতোমধ্যে জুলাই মাসের আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি স্ট্রোক ও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রোগী এবং যাদের দীর্ঘ মেয়াদে থেরাপি প্রয়োজন-তাদের জন্য এই সেন্টার হবে আশীর্বাদস্বরূপ। বিশেষ করে যারা হাত-পায়ের সূক্ষ্ম কাজের সক্ষমতা হারিয়েছেন, এআই-নির্ভর রোবটের মাধ্যমে তাদের সেই ক্ষমতা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, বিএমইউ একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। তারা সবসময় নতুনত্ব নিয়ে কাজ করে। এই রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের মাধ্যমে তারা রোগীদের বিশেষায়িত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। অনুষ্ঠান শেষে সেন্টার পরিচালনায় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। এর আগে লেকচার গ্যালারিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি প্রদর্শন করা হয়।