রাজস্ব বোর্ডের অধ্যাদেশে আসছে সংশোধন

আপলোড সময় : ২২-০৮-২০২৫ ০২:৫৫:১৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২২-০৮-২০২৫ ০২:৫৫:১৬ অপরাহ্ন
* ১১ ধারা-উপধারায় আসতে পারে পরিবর্তন
* নিশ্চিত করা হবে সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নিয়োগ
* অবহেলা সংক্রান্ত বিষয়ে বৈষম্য দূর করতে জোর দেওয়া হবে

ব্যাপক আন্দোলন ও আপত্তির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন অধ্যাদেশে সংশোধন আসছে। ২০২৫ এর ১১টি ধারা ও উপধারায় পরিবর্তন আনা হতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা যায়। নিশ্চিত করা হবে সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নিয়োগ। অবহেলা সংক্রান্ত বিষয়ে বৈষম্য দূর করতে জোর দেওয়া হবে। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ গঠন করা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ নিয়ে দুই মাসেরও বেশি সময় আন্দোলন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী দুই বিভাগের সচিব এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়োগে শুল্ক ও আবগারি এবং কর কর্মকর্তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
খসড়া সংশোধিত অধ্যাদেশে নিয়োগ পদ্ধতি ও জনবল কাঠামো সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারা-উপধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মেধা, ন্যায়নিষ্ঠতা, সততা, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি বিবেচনা করে সচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ নিশ্চিত করা যায়। নিয়োগ কিংবা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কাউকে অগ্রাধিকার কিংবা কাউকে অবহেলা করার বিষয় যাতে না থাকে-নতুন অধ্যাদেশে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে বলে এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এর বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন।
এনবিআরে সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন কেন্দ্র করে গত ১২ মে’র পর থেকে মূলত আন্দোলন শুরু হয়। তারা কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করেন। দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের দুই মাসের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরে সরকার পিছু হটে অধ্যাদেশটি স্থগিত করে সংশোধনের আশ্বাস দেয়। এরপর নেমে আসে আন্দোলন। অধ্যাদেশটি সংশোধনের জন্য উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত ১৩ জুলাই অধ্যাদেশটির বিষয়ে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যাদেশটিতে কিছু মৌলিক ত্রুটি আছে। আমরা বলবো এখানে কিছুটা চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন যারা এটি প্রণয়ন করেছেন। যেমন ধরেন, অধ্যাদেশে আছে সরকার উপযুক্ত কোনো যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগ দিতে পারবেন। এখন উপযুক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন কে? এক্ষেত্রে তো আপনি যে কোনো লোককে সচিব করতে পারবেন। এটা একটা সমস্যা। সরকারি রাজস্ব আহরণের কাজে অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। আমাদের চিহ্নিত করা ত্রুটিগুলো সংশোধনের জন্য আমরা সরকারকে পরামর্শ দেবো। বিদ্যমান ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ধারা-৪ এর উপ-ধারা (৩)-এ বলা হয়েছে, সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ করবেন। সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়ায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, পরিকল্পনা, রাজস্ব নীতি বা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকতাকে রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেবে। ধারা-৪ এর উপ-ধারা (৪) এ রয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসা প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে।
এ উপধারাটি সংশোধন করে করা হচ্ছে। খসড়া অধ্যাদেশে এ বিষয়ে বলা হয়েছে- রাজস্ব নীতি বিভাগের আয়কর নীতি, দ্বৈতকর পরিহার চুক্তি, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও মতামত, শুল্ক নীতি, মূল্য সংযোজন কর নীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কাস্টমস সংক্রান্ত চুক্তি অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। এছাড়া ধারা-৪ এর উপধারা (৪ক) নামে একটি উপধারা যুক্ত হবে। এতে বলা হয়েছে- রাজস্ব নীতি বিভাগের অন্য অনুবিভাগের পদগুলো জনপ্রশাসন, অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, হিসাব ও নিরীক্ষা, তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা বা ব্যক্তিদের থেকে পূরণ করা হবে। বর্তমান অধ্যাদেশের ধারা-৫ এর দফা (চ) এ রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে-কর আইন প্রয়োগ এবং কর আহরণ পরিস্থিতি মূল্যায়ন। এখন সেখানে সংশোধন করে করা হচ্ছে- রাজস্ব নীতি, কর ব্যয় ও রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতির প্রভাব বিশ্লেষণ (ইম্প্যাক্ট অ্যানালাইসিস)। ধারা-৭ এর উপধারা (৩) এ রয়েছে-সরকার রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন যোগ্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেবে। এ উপধারায় সংশোধন এনে করা হচ্ছে-সরকার রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন যোগ্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ করবে। খসড়া অধ্যাদেশে ধারা-৭ এর উপধারা (৪) এ সংশোধন এনে বলা হয়েছে- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস আইন বাস্তবায়ন এবং মাঠ পর্যায়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। বিদ্যমান আইনে এ ধারায় বলা হয়েছে-রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস আইন বাস্তবায়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন পদে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর) ক্যাডারে কর্মরত জনবলের মধ্য থেকে নিয়োগ করা হবে। ধারা-৭ এর উপধারা (৫) এ রয়েছে-রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডার এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মরত কর্মচারীদের থেকে পূরণ করা হবে।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে এ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ রাজস্ব আহরণ ও জনপ্রশাসন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণ হবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের তফসিলে বর্ণিত আইন মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নিয়োজিত পদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর), বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তারা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে থেকে পূরণ হবে বলে বিদ্যমান আইনের ধারা-৭ এর উপধারা (৬)-তে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশোধিত অধ্যাদেশে খসড়ায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে-রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের তফসিলের আইনগুলো বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের পদসমূহ রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে থেকে পূরণ করা হবে। ধারা-৮ এর দফা (জ) এ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্য পরিধিতে বলা হয়েছে- রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত পদ্ধতি প্রণয়ন। সংশোধিত অধ্যাদেশে এ দফায় পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে-রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান, প্রজ্ঞাপন, রুলিং, নীতিমালা, স্থায়ী আদেশ ও অন্য নির্দেশাবলি প্রণয়ন, সংশোধন ও এর ব্যাখ্যা প্রদান। ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের আন্তঃউইং এবং রাজস্ব নীতি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সার্বিক অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার কথা বিদ্যমান অধ্যাদেশের ধারা-৮ এর দফা (ট)-তে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখানে পরিবর্তন এনে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের অটোমেশন কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আন্তঃউইং ও রাজস্ব নীতি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠা। খসড়া সংশোধিত অধ্যাদেশের ধারা-৯ এ বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে এবং এভাবে ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। পদায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অধ্যাদেশে ‘বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতির’ বিষয়টি উল্লেখ ছিল না।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net