
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন
রাজধানীর উত্তরা ও তুরাগের অবৈধ ফুটপাতকে কেন্দ্র করে দখল-বেদখল, চাঁদাবাজী, দখলবাজী, দলবাজী, টাকার ভাগবাটোয়ারা, চুরি, ছিনতাই, খুন, অপহরণ ও ডাকাতিসহ অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে জাতীয় দৈনিক জনতা পত্রিকায় সম্প্রতি ধারাবাহিক সিরিজ রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর নড়েচড়ে বসেছে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সেক্টর কল্যাণ সমিতি, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা গেছে, দৈনিক জনতায় সংবাদ প্রকাশের পর গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার উত্তরার কর্মব্যস্ততম নগরী আজমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাজউক কর্মাশিয়াল মার্কেটের সামনে ও পিছনে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অভিযান চালিয়ে ফুটপাতের ওপর গড়ে উঠা কমবেশি প্রায় ৪০টি অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে দিয়েছে। এতে করে ওই এলাকার জনসাধারণ, পথচারী, ব্যবসায়ী কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ দৈনিক জনতা কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে এবং বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও পথচারীদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, উত্তরা আজমপুর রাজউক মার্কেটের আশপাশের ফুটপাত হকার মুক্ত করেছে মার্কেটের দোকানদার ও ব্যবসায়ী মহল। এসময় তাদের সঙ্গে ৭নং সেক্টর কল্যাণ সমিতি এবং সচেতন মহলের নেতৃবৃন্দরা সাথে ছিলেন। পথচারী ও সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ব্যবসায়ীদেরকে প্রশংসা করে বলেন, সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ফুটপাতকে হকার মুক্ত করায় দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ লাঘব করেছে মার্কেট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। জনস্বার্থে তাদের প্রশংসনীয় এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় লোকজনও। সংশ্লিষ্ট ও সচেতন মহলের কেউ কেউ বলেন, জনবহুল এই এলাকায় ফুটপাতকে হকার মুক্ত করাটা ছিল বড় ধরনের একটা চ্যালেঞ্জ। এ ধরনের পদক্ষেপ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার রাজউক কর্মাশিয়াল মার্কেটের দোকানদাররা সবাই এক সাথে মিলে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে তাদের নামি দামি মার্কেটের সামনে থেকে সমস্ত ভাসমান হকার উচ্ছেদ করেন। এ সময় মার্কেটের দোকানদার ও হকারদের সাথে কয়েকদফা বাকবিতণ্ডা ও কথাকাটি হয়। হকাররা বলছে, তারা সেখানে দোকান বসাবে। ইতিপূর্বে এখানে বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য দোকানপাট ছিল। অপরদিকে মার্কেট কর্তৃপক্ষ বলছে, লাখ লাখ টাকা খরচ করে এখানে দোকান নিয়ে ব্যবসা করছি। বর্তমানে ব্যবসা মন্দ যাচ্ছে। বেঁচাকেনা কম। ক্রেতারা মার্কেটে আসতে পারছনা। অবৈধ হকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে তারা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দৈনিক জনতাকে বলেন, রাজউক মার্কেটের সামনের সড়ক ও ফুটপাত অনেকটাই জবর দখল করে সেখানে হকাররা জোরপূর্বক ভাবে দোকানপাট বসিয়েছে। ফুটপাত ও সড়কে তিল ধারণের জায়গা থাকে না, ফলে কোন ধরনের যানবাহন রাখা যায় না। মানুষ চলাচল করতে পারে না, মার্কেটের ভেতর লোকজন তথা ক্রেতা সাধারণ ঢুকতে পারে না। বেঁচাবিক্রি কম হয়, অনেক সময় হয়ও না। ক্রেতারা আসতে না পারার কারণে তাদেরকে লোকসান গুণতে হয়।
এদিকে রাজউক কর্মাশিয়াল মার্কেটের সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা আনছার কমান্ডার ফরিদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সবুজ নামে জৈনিক এক ব্যক্তি তাকে হুমকি প্রদান করেছে। এ ঘটনায় তারা আশংকা প্রকাশ করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে। সূত্র বলছে, ব্যবসায়ীদের সাহসী নেতৃত্বের কারণে অভিযানকালে ফুটপাতের ওপর থেকে ৩০টির অধিক ভাসমান দোকান অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখানকার নান্দনিক ফুটওভার ব্রিজে পথচারী চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। পাশাপাশি মার্কেটের সামনে লেগে থাকা দীর্ঘদিনের যানজটের সমস্যাও অনেকটা কমে গেছে। স্থানীয় জনগণ ও পথচারীরা এই পদক্ষেপে স্বস্তি প্রকাশ করে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
রাজউক কর্মচারী বহুমুখী দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দরা সাংবাদিকদের জানান, দীর্ঘদিন হকারদের দখলে থাকা এখানকার ফুটপাতে ভীড়ের কারণে প্রায়ই চুরি ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকতো। ফুটপাত হকারমুক্ত হওয়ায় পথচারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারছেন।
উত্তরা ৭ নং সেক্টর কল্যান সমিতির কয়েকজন নেতৃবৃন্দ বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। আমরা আশা করছি, এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দোকানদারদের সাথে স্থানীয় কল্যাণ সমিতি ও পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করলে আগামী দিনে উত্তরার ফুটপাতকে হকার মুক্ত করা সহজলভ্য হবে।
উল্লেখ্য যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট, ২০২৪ ইং তারিখ রাজউক কর্মাশিয়াল মার্কেটের পশ্চিম পাশে গড়ে উঠা অবৈধ একটি দোকান থেকে দু’টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করেছিল।