টানা বৃষ্টির অজুহাতে সিন্ডিকেটের খেলা, চাষিরা পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য

১৬০ টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা

আপলোড সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ০৪:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ০৪:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন
রাজধানীর বাজারে কাঁচামরিচের দাম পৌঁছেছে আকাশছোঁয়া উচ্চতায়। গতকাল সোমবার সকালে কারওয়ান বাজারের পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে খুচরা বাজারে গিয়ে সেই একই মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। পাইকারি থেকে খুচরায় দাম দ্বিগুণ হওয়ার এ চিত্রই প্রশ্ন তুলছে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণ? ভোর ৫টায় কারওয়ান বাজারের পাইকারি অংশে এক পাল্লা (৫ কেজি) মরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকায়। সেই হিসাবে প্রতি কেজি মরিচের দাম দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। কিন্তু সকাল ৮টার পর একই এলাকায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মরিচের দাম হয়ে যায় ২২০-২৪০ টাকা। কাছের কাঁঠালবাগান বাজারে ২৮০ টাকা এবং হাতিরপুলে গিয়ে দাঁড়ায় ৩২০ টাকায়। মাত্র আধা কিলোমিটার দূরত্বের তিনটি বাজারে তিন রকম দাম এ নিয়ে ভোক্তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে সার, কীটনাশকসহ সব কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমিকের বাড়তি মজুরি। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। কৃষকরা বলছেন, তারা যে দামে ফসল বিক্রি করেন তার চেয়ে রাজধানীতে গিয়ে সেই একই পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। এতে মূল ভোগান্তিতে পড়ছেন ভোক্তারা, অথচ প্রকৃত লাভ করছে মধ্যস্বত্বভোগী ও বাজার সিন্ডিকেট। ঢাকার ব্যবসায়ীরা সোমবার পাইকারি বাজার থেকে ১৫৫ টাকা কেজি দরে মরিচ কিনেছেন। এক মণ মরিচের সঙ্গে অতিরিক্ত দুই কেজি নিয়ে গেছেন। আমরা শুনছি ঢাকায় ৩০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু আমাদের সেই দাম মেলে না। আসল লাভ করছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এতে স্পষ্ট, উৎপাদক পর্যায়ে দাম কম থাকলেও ভোক্তা পর্যায়ে দ্বিগুণ দাম আদায় করা হচ্ছে। বিক্রেতারা দাবি করছেন, টানা বৃষ্টিতে সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া পরিবহন, বোট ভাড়া, রিকশাভাড়া—সব মিলিয়ে খরচ বাড়ছে। তাই খুচরায় দাম বেশি। কাঠালবাগান কাঁচাবাজারের বিক্রেতা রকি বলেন, এখন পাইকারি বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি। উপরন্তু পাইকারি থেকে মাল তুলতে বোট ভাড়া, রিকশাভাড়াসহ নানা অতিরিক্ত খরচ হয়। ফলে খুচরায় দাম বেড়ে যায়। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমলে খুচরায়ও সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে। পাইকারি দরদাম নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। একই ধরনের মন্তব্য করেন কারওয়ান বাজারের আরেক বিক্রেতা মিশু। অন্যদিকে হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন জানান, টানা বৃষ্টির কারণে গত চার-পাঁচ দিন ধরে মরিচের দামে ওঠানামা চলছে। সোমবার সকালে পাইকারি বাজারে দাম ছিল তুলনামূলক বেশি, ফলে তারা বেশি দামে কিনে এনেছেন। পরে দাম কিছুটা কমতে পারে বলেও জানান তিনি। তবে কোন দামে কিনেছেন সেটি প্রকাশ করতে রাজি হননি। শুধু বলেন, এখানে দাম পার্টি বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা একমত নন। হাতিরপুল বাজারে সাব্বির আহমেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, যখনই কোনো পণ্যের সরবরাহ কমে যায়, তখনই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম দ্বিগুণ করেন। পাইকারিতে ১০ টাকা বাড়লে খুচরায় ২০ টাকা বাড়ে। তদারকি না থাকায় এভাবে প্রতিদিন দাম বাড়ানো হচ্ছে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মনে করে, তদারকির অভাবেই বাজারে এই বিশৃঙ্খলা। সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, অথচ খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ দাম আদায় হচ্ছে। এটা ন্যায্য ব্যবসা নয়, ডাকাতির মতো অবস্থা। ভ্যান থেকে শুরু করে করপোরেট সব স্তরেই বেশি দাম নেওয়া এখন সামাজিক সংক্রমণে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইকারি বাজারে ১৬০ টাকার মরিচ, খুচরায় এসে ৩২০ টাকার দ্বিগুণ ব্যবধানের দায় একদিকে সরবরাহ সংকটের হলেও বড় কারণ হলো বাজার সিন্ডিকেট ও তদারকির দুর্বলতা। উৎপাদক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, অথচ ভোক্তারা দ্বিগুণ দাম গুণছেন। ফলাফল সিন্ডিকেটের পকেট ভরছে, ভোক্তার হাঁড়ি ফাঁকা হচ্ছে বলছেন ভোক্তারা। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাজারের দাম নির্ধারণ করার দায়িত্ব আমাদের নয়, এটি করে কৃষি বিপণন অধিদফতর। কাঁচাবাজারের দরদাম সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের সঙ্গেই কথা বলা উচিত। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও কৃষি বিপণন অধিদফতর উভয়ই বাজার মনিটরিংয়ের কথা বললেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার এখতিয়ার না থাকায় সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারছি না। জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে সীমিত কার্যক্রম চালাচ্ছি।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net