
* মিডিয়া সেলে দক্ষদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত
* বিএনপি-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বেশি অপপ্রচার
* প্রচার-অপপ্রচার সামনে রেখেই এগোচ্ছে বিএনপি
স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান ধরনের অপপ্রচার চলছে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তাদের অভিযোগ, হত্যা, হামলা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ কোনো অপরাধ ঘটলেই বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনেক সময় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আবার ‘যশোরে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে চাঁদা আদায়’ বা ‘মহাখালীতে যুবদল নেতার নেতৃত্বে হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর হামলা’ এ জাতীয় কিছু ঘটনার কারণে বিরোধীরা বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সুযোগ পাচ্ছে বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরে অপপ্রচার খণ্ডণ এবং সাইবার সেলে দক্ষ জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ আগস্ট চট্টগ্রামে ভাইরাল হওয়া এক চিকিৎসকের ভিডিও নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘ভিডিওটি দেখে আমি এবং সংশ্লিষ্টরা তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছি। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। ওই চিকিৎসকের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হয়নি। নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ করায় ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার ওপর কেউ হামলা করেনি। তিনি নাকে রং লাগিয়ে লাইভে এসে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। সামনে নির্বাচন, একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এসব করা হচ্ছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, ‘বর্তমানে বিএনপি ও ছাত্রদল অতিমাত্রায় অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে। এর একটি কারণ রাজনীতির অসহিষ্ণুতা। বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কর্মীরা প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে মিডিয়ায় অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আরেকটি কারণ হচ্ছে আমরা মিডিয়ায় শক্তভাবে এর প্রতিবাদ করতে পারছি না। আমরা মিডিয়ায় অপপ্রচার ও গুজবে বিশ্বাসী নই, যতটা সম্ভব বাস্তবচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশাকরি, ভবিষ্যতে শক্তিশালী গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি সেল করে আরও শক্ত প্রতিবাদ করবো।’
ভোলা-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা একটু অ্যাবসেন্ট, উদাসীন ছিলাম। এরই মধ্যে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অপপ্রচারের বিপরীতে সঠিক বিষয়টা জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। জনগণও জানে যে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল হাসান বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা প্রযুক্তি সচেতন। রাজপথের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ভূমিকা রাখছে। এআই প্রযুক্তির সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে।
ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, দুর্বলেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালায়। কিন্তু এটা শেষ পর্যন্ত টেকে না।
ঢাকা-১৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘মিথ্যাচার তো মিথ্যাচারই। আমাদের দলের মধ্যে যদি কোনো নেতাকর্মী অনৈতিক আশ্রয় নেয়, আমরা ব্যবস্থা নেই। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। কিছু মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। এসবের বিরুদ্ধে আমরা সজাগ আছি।’
গোপালগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির সহআইনবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, গুটিকয়েক লোকের জন্য দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় কিছু লোক চাঁদাবাজিদখলবাজির সঙ্গে জড়িত। পুলিশ প্রশাসন সঠিকভাবে কাজ করছে না। আমার মনে হয় দল আগে থেকে কঠোর অবস্থানে থাকলে সে সুযোগ পেত না। তবে রাজনীতিতে অপপ্রচার থাকবে, সেটাকে বিবেচনা নিয়েই সতর্ক থাকতে হবে।
গোপালগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা প্রবল হয়। যেমন মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার ঘটনায় অপপ্রচার হয়েছিল, বিএনপি কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছিল। পরে দেখা যায়, তারা জড়িত নয়। যাচাই-বাছাই করে এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। নির্বাচন সামনে রেখে পতিত স্বৈরাচারের দোসর ও স্বাধীনতাবিরোধী দুপক্ষ সক্রিয় হয়ে অপপ্রচার করছে। নেতাকর্মীদেরও সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হওয়া দরকার।
নাটোর-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, গত ১৭ বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা নানান ধরনের অপপ্রচারের শিকার হয়েছে। জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই, তারাই এসব করে। বিএনপির সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক রয়েছে। দিন শেষে জনগণ বোঝে এগুলো অপপ্রচার।
টাঙ্গাইল-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘অপপ্রচারের জবাব বিএনপি নেতাকর্মীরা ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে দেবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে বেশি সোচ্চার। অপপ্রচারের ফলে সাময়িক ক্ষতি হয়, তবে দল তদন্তসাপেক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।’
ঢাকা-১৩ আসনে সম্ভাব্যপ্রার্থী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বিএনপির মিডিয়া সেল ও বিএনআরসি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার) রয়েছে। সেখানে আরও দক্ষ ও অভিজ্ঞদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা পর্যায়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকা-৮ ও ৯ আসনে বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের সঙ্গে একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি। অনুরোধ করেছি, কাদা-ছোড়াছুড়ি বন্ধের জন্য। এতে পতিত স্বৈরাচারের সুযোগ হবে। নেতাকর্মীদের বলেছি, অপপ্রচার হলে তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে জবাব দিতে।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে সম্ভাব্যপ্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা বিএনপিকে ভালোভাবে চেনে। কোনটা অপপ্রচার, কোনটা সম্প্রচার, কোনটা গ্রহণীয় এটা তারা জানে। অপপ্রচারের মধ্যদিয়ে যদি বিএনপিকে ধ্বংস করা সম্ভব হতো, শেখ হাসিনা সেটা করতে পারতেন। প্রচার ও অপপ্রচার দুটোকে সামনে রেখে বিএনপি এগোচ্ছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘অপপ্রচার হলো যা সত্য নয়। সততা থাকলে তা প্রকাশ পায়। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে, নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে চেষ্টা করছি। সমাজে অস্থিরতা বেড়েছে, কেউ কারও কথা শুনছে না। এ পরিস্থিতিতে আমরা সত্য ও সঠিক তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, অপপ্রচারের পাল্টা অপপ্রচারের নীতি বিএনপির নেই। অপপ্রচারের জবাবে দলীয় বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন, মিডিয়া সেল এবং অফিসিয়াল পেজের মাধ্যমে সঠিকটা তুলে ধরা হয়।