
* বিদেশে বাংলাদেশের অবশিষ্ট কয়েকটি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ
* কূটনৈতিক অঙ্গনে বিস্ময়, রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ও গুঞ্জন
* রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই: রিজওয়ানা
* সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মিশন ও উপমিশন রয়েছে ৮২টি
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো থেকে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্ত মৌখিকভাবে জানানো হলেও এর কোনো লিখিত প্রমাণ বা সরকারি আদেশ এখনো প্রকাশ পায়নি। এমন ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তে কূটনৈতিক অঙ্গনে যেমন বিস্ময় তৈরি হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর আলোচনা ও গুঞ্জন। এ নির্দেশনা কি রাষ্টপতি সরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত? এ প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন ও উপমিশন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টির বেশি মিশন ও উপমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায় থেকে বিদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ফোন করে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক কয়েকজন রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা অন্যান্য মিশনগুলোতেও এই বার্তা দ্রুত পৌঁছে দেন। এমনকি, নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়েছে কি না, তা তদারকির জন্য একজন রাষ্ট্রদূতকে বিশেষ দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সাধারণত বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতেও রাষ্ট্রপতির ছবি সম্মানসূচকভাবে প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য ও সম্মানবোধের অংশ হিসেবেই এই রীতি বহাল ছিল এতদিন। সেই প্রেক্ষাপটে এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন বলে মনে করছেন অনেকে।
বিদেশে কর্মরত একাধিক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে ভীষণভাবে বিস্মিত। কেউ কেউ সরাসরি এই নির্দেশ পেয়েছেন, আবার অনেকেই এখনো কোনো ধরনের লিখিত আদেশ পাননি। তাদের মতে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মৌখিকভাবে জানানো অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও প্রশাসনিকভাবে অসঙ্গত। এই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক অঙ্গনেও দেখা দিয়েছে নানা ধরনের আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, এটি রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের “নীরব বিদায়” এর সূচনাসংকেত হতে পারে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক চাপ বা কৌশল কাজ করছে।
এদিকে প্রবাসী সাংবাদিক ও ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন এই ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। রাষ্ট্রপতির একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, টাটা বাই বাই খতম, পরের ধাক্কা ক্যান্টনমেন্টে। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি সরানোর মতো সিদ্ধান্ত শুধুই প্রটোকলের বিষয় নয়, এটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতা ও প্রশাসনিক অবস্থানের প্রতিফলনও হতে পারে। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বা মর্যাদার ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না। তবে এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিদেশে বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন, কনস্যুলেট, কূটনীতিকদের কার্যালয় ও বাসভবন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর বিষয়ে শুনলেও কি কারণে এমনটা বলা হয়েছে তা জানেন না পরিবেশ উপদেষ্টা। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেছেন, বিদেশি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরানোর কথা শুনেছি, প্রেক্ষিত জানি না। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর সঙ্গে ভোটের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন কমিশনকে বলা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে চীনের সঙ্গে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ শুরু হবে। ১০ বছরের জন্য প্রকল্প নেয়া হবে। নদী ভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখাই প্রকল্পের বড় লক্ষ্য। তিনি বলেন, সিলেটে পাথর লুটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশ ছিল অথবা প্রশাসন নীরব ছিল। এ ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েকটি মিশনে টেলিফোনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিদেশে বাংলাদেশের অবশিষ্ট যেসব মিশনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি রয়েছে, তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। গত শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে ফোন করেন। ঢাকা থেকে বিদেশে বাংলাদেশের নির্ধারিত কয়েকজন কূটনীতিককে নিজেদের মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে নিতে ফোনে নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্য মিশন, উপমিশন থেকে ছবি সরানোর জন্য অন্যদের জানাতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন ও উপমিশন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৫টির বেশি মিশন ও উপমিশন থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওয়াশিংটন, দিল্লি, বেইজিংসহ বেশির ভাগ মিশন থেকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব ছবি সরানো হয়। ইউরোপ, আমেরিকা অঞ্চলে কর্মরত কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশে বাংলাদেশের যে মিশনগুলো রয়েছে, সেখান থেকে আগেই সরানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির ছবি। তবে এ ছবি রাখা না রাখার কোনো নির্দেশনাও ছিল না বলে জানান তাঁরা।