
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত জাতীয় সেমিনারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার শক্তিশালী বার্তা দেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনিভিত্তি না থাকলে আগামী নির্বাচনে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি জোর দেন, পিআর (প্রতিনিধিত্বমূলক) পদ্ধতিতে নির্বাচন ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। গোলাম পরওয়ার উল্লেখ করেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু নির্বাচিত দলের নেতারা তা বাস্তবায়ন করেননি। তাই তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে তা কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে নতুন সংবিধানের বিকল্প নেই এবং ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত অধিকাংশ বিষয় সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি এই আলোচনাগুলো বাস্তবায়ন হয়, বর্তমান সংবিধানের অস্তিত্ব তেমন থাকবে না। সেমিনারে জামায়াতের নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচন যে কোনও মাসে হলেও তার আপত্তি নেই, তবে ঐকমত্য অনুযায়ী আলোচিত বিষয়গুলো নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, “সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন”শৃঙ্খলায় এখন সংস্কার কোথায়? এই বিষয়টি কি খেলা করা হচ্ছে? পিআর পদ্ধতির প্রাধান্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গণভোটে ৭২ শতাংশ ভোট পিআর পদ্ধতির পক্ষে এসেছে। পিআরের মাধ্যমে সরকার গঠন করা উচিত, প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের তারিখও নির্ধারণ করা যায়। তিনি সতর্ক করেন, যারা মেজরিটি না মেনে ক্ষমতায় যেতে চায়, তারা স্বৈরাচারিক মনোভাবের পরিচয় দেয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানান, ঐক্যবদ্ধ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যদিকে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জুলাই সনদ ঘোষণা যথেষ্ট নয়, এটাকে আইনি ভিত্তি ও কাঠামোয় রূপ দিতে হবে। আইনি ভিত্তি ছাড়া দেশের জনগণকে বোকা বানানো হবে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তিনি সরকারকে তার করণীয় ঠিক করতে এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের অপূর্ণতাগুলো পূর্ণ করতে আহ্বান জানান। তিনি অতীতের অভিজ্ঞতা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর রূপরেখা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু ৯১ সালে ক্ষমতায় আসা সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি। তাই এখনও একই ষড়যন্ত্র চলতে পারে, যা জনগণ মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ঐকমত্যের বিষয়গুলো আইন হিসেবে ঘোষিত ও স্বীকৃতি দিতে হবে, সেই ভিত্তিতেই নির্বাচন হবে। বৈধ আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।