
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পারিবার থেকে উত্থাপিত অভিযোগের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শুনানি চায় বিএনপি। আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে গতকাল রোববার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে দলের বক্তব্য তুলে ধরেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তিদের গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে আছে। গণবিচ্ছিন্ন সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষের জীবনের নিরাপত্তা চরমভাবে সংকটাপন্ন। মানুষের কণ্ঠরোধ করার জন্য একের পর এক কালো আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সেজন্য গুমকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়ে দেশকে এক ভীতিকর জনপদে পরিণত করেছে। একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকার গুমের মতো মনুষ্যত্বহীন পন্থা অবলম্বন করছে। ফলে, গভীর শঙ্কা, ভয় ও শিহরণের মধ্যে বাস করছে জনগণ।’ মির্জা ফখরুল বলেন, গুম মানবসভ্যতার পরিপন্থি। বিশ্বব্যাপী একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের পথের কাঁটা সরানোর জন্য গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কাউকে গুম করে দেওয়া মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতি পায়।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বাকশাল কায়েম করার পর বিএনপিসহ বিরোধী দলের যেসব নেতা-কর্মী গুম হয়েছে তাদের বাপ-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে গুমের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রবল প্রতিবাদী হলেও আওয়ামী সরকার কোনো কিছুকে তোয়াক্কা করছে না। গণতন্ত্রকামী মানুষ গুমের আতঙ্কে দিন-রাত উদ্বিগ্ন থাকছে। সবার চোখের সামনে থেকে ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গুম করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই গুমের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্লজ্জের মতো অস্বীকার করে আসছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বর্তমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষেই সম্ভব সকল মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ, নির্বাচিত সরকারকে জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হয়।’ অবিলম্বে এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ন পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাকিরসহ গুম হয়ে যাওয়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি- ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারকে আইনি ও নৈতিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি শুনানির আয়োজন করা প্রয়োজন।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ জন ব্যক্তি গুম হয়েছে। এদের মধ্যে কাউকে মৃত, কাউকে অনেকদিন পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আবার অনেকের কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।