ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণায় ব্যবসায়ী মহলে স্বস্তি

আপলোড সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ১২:১৫:৫১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ১২:১৬:২০ অপরাহ্ন
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষণা স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে দেশের ব্যবসায়ী মহলে। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সরকার পরিবর্তন এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিনিয়োগ ও ব্যবসা কার্যক্রমে যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল, তা কাটিয়ে উঠতে এই ঘোষণাকে আশার আলো হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করবো। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাবো, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর এ বিষয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত নিয়েছে। বাংলাদেশ চেম্বার অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা নিঃসন্দেহে দেশ ও ব্যবসায়ী সমাজের জন্য একটি আশাব্যঞ্জক খবর। আমরা এ সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির একটি বার্তা নিয়ে এসেছে। এই ঘোষণা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সহায়তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘তবে একই সঙ্গে আমি বলতে চাই, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নির্বাচনের আগে-পরে যেন কোনো অস্থিতিশীলতা না ঘটে, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই পারে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে, যা বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য অপরিহার্য। আমরা আশা করি, নির্বাচন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে এবং এর মাধ্যমে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’ শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়। অর্থনীতির চাকা সচল করতে একাধিক সংস্কারমূলক উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে টানা রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংস আন্দোলনের ফলে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এবং কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে, যা একটি আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতেও কিছুটা ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে। সরকারের কিছু কার্যকর উদ্যোগ ও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে মোট ১৫৭ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, একজন রফতানিকারক হিসেবে আমি ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি বা তার আশপাশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এ ঘোষণা ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সব মহলের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বার্তা। একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার শুধু দেশীয় জনগণেরই আস্থা অর্জন করে না, বরং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা তৈরি করে—যা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা নীতিনির্ধারণে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, যা অর্থনৈতিক নীতিতে স্থিতিশীলতা ও পূর্বাভাসযোগ্যতা বজায় রাখে। এতে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণ, উৎপাদন সম্প্রসারণ ও নতুন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্যোক্তারা আরও আত্মবিশ্বাসী হন। পাশাপাশি, একটি নির্বাচিত সরকার সাধারণ মানুষের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে কাজ করতে পারে, যা অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে-যেখানে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক বাজারের চাহিদা দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছ সরকারব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, আসন্ন নির্বাচন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে এবং একটি টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করবে, বলেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এই মুহূর্তে একটি নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-শৃঙ্খলা ও সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার গঠিত হলে দেশের অর্থনীতির জন্য একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা তৈরি হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষমাণ অবস্থায় আছেন। তারা নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চান। নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হলে আমরা আশা করি বড় আকারের বিনিয়োগ-বিশেষ করে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ দেশে প্রবাহিত হবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা সব সময় একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই আস্থা রাখে। তাই নির্বাচন যত দ্রুত ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে, তত দ্রুত দেশের অর্থনীতি পুনরায় গতি পাবে। আমরা আশাবাদী, নির্বাচন দেশকে একটি ইতিবাচক পথে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন গতি সৃষ্টি করবে, মন্তব্য করেন ইনামুল হক খান।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net