
* পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি’র রিপোর্টের পরিপেক্ষিতে চলছে বিশেষ অভিযান ও তল্লাশি
* আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও ছদ্মবেশে তৎপর রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা
* আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইন ও অফলাইনে নৈরাজ্য সৃষ্টির শঙ্কা করছে পুলিশ
নৈরাজ্যের শঙ্কায় রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার ২৯ জুলাই থেকে আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১১ দিন সারাদেশে বিশেষ সতর্কতা থাকবে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও দেশে-বিদেশে ‘ছদ্মবেশে তৎপর’ রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। তারা অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। গোপনে তারা একত্রিত হয়ে সহিংসতা বা হামলার পরিকল্পনা করছে। সে কারণেই এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর দেশে-বিদেশে ছদ্মবেশে দলটির নেতাকর্মীরা বড় ধরণের হামলার আশঙ্কায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদেরও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশ পথসহ প্রায় প্রতিটি বড় রাস্তায় বসানো হয়েছে বাড়তি চেকপোস্ট। চেকপোস্টগুলোয় সন্দেহভাজন ব্যক্তি, বস্তু ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিভিন্ন গুজব ঠেকাতে কঠোর মনিটরিং চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগকে নিয়ে হঠাৎ নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। পুলিশের আশঙ্কা, এই রাজনৈতিক দলটি দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থায় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে বিভিন্ন ইউনিটকে জরুরি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এসবির আশঙ্কা, আওয়ামী লীগ গোপনে একত্রিত হয়ে হামলা বা সহিংসতার ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে চিঠি দিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এসবি আরও আশঙ্কা করছে, আগামী ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে। দলটির কিছু নেতা ও কর্মী এ সময় সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, বিশৃঙ্খলা কিংবা ভাঙচুর চালাতে পারে বলেও ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব বিষয় মাথায় রেখে গত সোমবার (২৮ জুলাই) দেশের বিভিন্ন পুলিশের ইউনিটে একটি বিশেষ সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে এসবি। এসবির রাজনৈতিক উইংয়ের ডিআইজি চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেন। এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছে ডিএমপি কমিশনার, সিটি এসবি, বিভাগীয় উপপুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম ও খুলনার স্পেশাল পুলিশ সুপারসহ দেশের সব জেলা পুলিশ সুপারের কাছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো পহেলা জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সময়ে বিতর্কিত ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো দেশব্যাপী অনলাইন ও অফলাইনে উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে বা উসকানি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টাও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব ইউনিটকে নিজ নিজ এলাকায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনের ওপর নজরদারি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার এবং সাইবার গোয়েন্দা কার্যক্রম তীব্র করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।
বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ সন্দেহভাজন সব যানবাহনে তল্লাশি, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন, বিমানবন্দরের আশপাশে নজরদারি এবং মোবাইল পেট্রোল বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল, সাইবার পেট্রোলিং এবং গোয়েন্দা নজরদারি জোরদারের নির্দেশও রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের কিছু যুব ও ছাত্র সংগঠনের নেতারা মাঠে না থাকলেও অনলাইনে ‘ভার্চুয়াল স্কোয়াড’ গড়ে তুলেছে, যারা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও ইউটিউবভিত্তিক চ্যানেল চালিয়ে সামাজিক অস্থিরতা ছড়ানোর কাজ করছে।
এসব বিষয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে এনে রাজনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন, তাদেরকে কঠোর হাতে দমন করা হবে। যারা দেশে-বিদেশে বসে পরিস্থিতি অশান্ত করার পরিকল্পনায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।