কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ‘চাঁদা না পেয়ে’ বাস টার্মিনালের ইজারাদারের ওপর হামলা অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টার লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি সোলাইমান শেখ। তিনি বলেন, টার্মিনালে টোল ইজারাদার রাকিবের উপর হামলার ঘটনায় তার বোন রোমানা আক্তার নিশি বাদি হয়ে কুমারখালী থানার জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনের নামসহ ৯ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টার লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে জামায়াত নেতার দাবি ইজারাদারের লোকজনের হামলা ও মারধরের শিকার হয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুললে এই ঘটনা ঘটে। গত বুধবার বিকালে কুমারখালী বাস টার্মিনালে হামলার শিকার হন টার্মিনালের বৈধ টোল ইজারাদার রাকিব হোসেন। মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহতবস্থায় তিনি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।পেশায় ব্যবসায়ী রাকিব উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে। আহত রাকিব বলেন, “কুমারখালী পৌর প্রশাসকের দপ্তর থেকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ দরপত্রের মাধ্যমে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার রাজস্ব দিয়ে চলতি বছরে আমি পৌর বাস টার্মিনাল ও পৌর পার্কিং (অটো সিএনজি স্ট্যান্ড ও লোড আনলোড) টোল ইজারা অনুমোদন লাভ করি। রাকিব হোসেনের অভিযোগ, “তবে শুরু থেকেই উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসেন ওই ইজারা নিজের দলের লোকজনের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেন। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় প্রতিমাসে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন তিনি। অন্যথায় আমাকে এবং আমার লোকজনদের টোল আদায় করতে দেয়া হবে না এমন হুমকি দিচ্ছিলেন।” জামাত নেতা আফজাল ‘দাঁড়িয়ে থেকে হুকুম’ দিয়ে ‘১৫/২০জনের সন্ত্রাসী বাহিনী’ দিয়ে তার ওপর হামলা করে দাবি করে তিনি বলেন, “গতকাল (বুধবার) তাদের দাবিকৃত টাকা কেনো দিচ্ছি না এসব বলে চাপ সৃষ্টি করে তারা। কিন্তু আমি এবং আমার লোকজন তাদের দাবি মেনে না নেয়ায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। “তারা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একটি দোকানের মধ্যে ঢ়ুকে পড়ি এবং আমি কুমারখালী থানায় ফোন করে সাহায্য চাই।” হামলার প্রত্যক্ষদর্শী গ্যারেজ শ্রমিক রবিউল ইসলাম বলেন, “বুধবার বিকালে জামায়াত নেতার ছেলে শুভন মোটরসাইকেলে টার্মিনালে এসে একটি অটো থেকে টোল আদায়ে বাধা দেয়। এ সময় বাক বিতণ্ডার একপর্যায়ে টোল আদায়কারীরা শুভনকে মারধর করে। “এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর জামায়াত নেতা আফজাল হোসেন তার লোকজনসহ টোল আদাকারীদের রসিদ বই ছিনিয়ে নিয়ে মারধর শুরু করে দেয়।” ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শল্যচিকিৎসা বিভাগের চিকিৎসক সাকিব বলেন, “বুধবার সন্ধ্যায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখমের শিকার রাকিব নামের রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অপারেশন করে তার মাথায় প্রায় ৭ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে ক্ষতস্থানে সেলাইসহ প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ওই রোগীর কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ চলছে। এ মুহূর্তে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তবে যে কোনো সময় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।” তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসেন মোবাইলে বলেন, “টোল আদায়ের নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত এলাকায় অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করার প্রতিবাদ করতে গেলে ওরা আমার ছেলে শুভনকে মারধর করে। “এই অবৈধ চাঁদার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মধ্যে পূর্ব থেকেই ক্ষোভ বিরাজ করছিল, পরে ইজারাদারের লোকজন হামলা করায় এলাকাবাসী তাদের প্রতিরোধ করতে গেলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।” হামলার ঘটনার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কোনো যোগসূত্র নেই দাবি করে তিনি বলেন, “ওরা রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন।” কুমারখালী থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, “হামলা ও মারধরে যারাই জড়িত থাক তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
