
* ফেনী-পরশুরাম যান চলাচল বন্ধ, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা
ডুবে গেছে উপকূলীয় অঞ্চল
- আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০৪:৪৭:১৫ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০৪:৪৭:১৫ অপরাহ্ন


* ফেনীর তিন নদীর বাঁধ ভেঙে ৩০ গ্রাম প্লাবিত, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
* ফেনীতে দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির সংকট
* নোয়াখালীতে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা
* চট্টগ্রামে ফের উন্মুক্ত নালায় পড়ে প্রাণ গেল শিশুর
* টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা, পাহাড় ধসের শঙ্কা
* বাড়ছে গোমতী নদীর পানি, কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা
* উপকূলীয় অঞ্চলের আশ্রয় কেন্দ্রেগুলোতে ছুটছে মানুষ
* বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ফেনীর মুহুরী-সিলোনিয়া নদীর পানি
ভারতীয় উজানের পানি, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপ ও সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পানিতে ফেনীসহ উপকূলীয় জেলাগুলো ডুবে গেছে। ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও খুলনায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ জলের সংকট দেখা দিয়েছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতে বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরপানি। শহর-গ্রাম সব সড়কই পানির নিচে। তলিয়ে আছে ফসলি জমি, আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। টানা দিনভর বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে গেছে জীবনযাত্রা। জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে নিচু এলাকায়। বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে, টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ে বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, দেশের প্রায় সকল নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানায়, টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ। এছাড়া রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পরশুরাম উপজেলা। স্রোতের কারণে ফেনী-পরশুরাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে ব্যাহত হচ্ছে যানচলাচল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানিয়েছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরামের জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি, শালধর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পাড়া এলাকার দুই স্থানে ভেঙেছে। এছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের এক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে এসব স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। গত মঙ্গলবার রাতে ১৩১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এগুলোতে ১১৫ পরিবারের ৩৪৭ জন আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা ও শুকনো খাওয়ার বিতরণ করছে প্রশাসন। পানির স্রোতের কারণে ফেনী-পরশুরাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জানান, মাঠপর্যায়ে থেকে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসছে না। বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, উপজেলায় তিনটি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চারটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। এরইমধ্যে শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে। তাদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া গতকাল বুধবার উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা দুই দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরে সর্বোচ্চ। গতকাল বুধবার ও আজ (বৃহস্পতিবারও) জেলাজুড়ে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরও বাঁধ ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে।
অপরদিকে টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজানের পানিতে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবারের জন্য সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলায় ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পরশুরাম উপজেলায় ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখায় ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ করে মোট ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্গতদের মাঝে রান্না করা খাবার সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানায়, নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাত নাসিমা হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ৯ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন এবং চলমান দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তারা প্রস্তুত থাকবেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানায়, টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। ফলে জেলার কয়েকটি উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে গোমতী নদীর পানি ৮ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। যা বিপৎসীমার ৩ মিটার নিচে। গোমতী নদীর বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আকস্মিক ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত ২৪ ঘণ্টায় গোমতীর পানি ৫ মিটারের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। কুমিল্লা অঞ্চলের পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ওই রাজ্যের পানি গোমতী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুমিল্লা অংশের দিকে নামছে। কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, টানা ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টি থেমে গেলে এবং উজানের ঢল বন্ধ হলে বিপদ কাটতে পারে। নতুবা বন্যার শঙ্কা রয়ে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে কুমিল্লা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে আজ (বুধবার) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১২৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একটি ভারী বর্ষণের সংকেত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।
কুমিল্লা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। সাগরে একটি লঘুচাপ আছে, তবে সেটি অনেক দূরে ভারতের অংশে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আবহাওয়ার একই পূর্বাভাস রয়েছে। গোমতীর পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যার আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানায়, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরে নালায় পড়ে মরিয়ম নামে ৩ বছর বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুর ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হালিশহরের আনন্দপুর এলাকায় শিশুটি বাড়ি। সে পাশের একটি দোকানে যাচ্ছিল। পথে একটি নালার স্ল্যাব ছিল না এবং এর ওপরে পানি জমে ছিল। ফলে সেখানে নালা আছে সেটি বোঝার উপায় নেই। অসাবধানতাবশত শিশুটি সেখানে পা রাখলে নিচে পড়ে যায় এবং পানির স্রোতে ভেসে যায়। প্রথমে স্থানীয়রা এবং পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উদ্ধার অভিযান চালায়। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে আগ্রাবাদ স্টেশন থেকে দ্রুত ডুবুরি টিম পাঠানো হয়। তারা অল্প সময়ের মধ্যে শিশুটিকে উদ্ধার করে। তবে তাকে প্রাণে বাঁচানো যায়নি।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে নগরীর আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কেবি আনাম আলী রোড়, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, রাহাত্তারপুল, বহদ্দারহাট এলাকায় কোথাও কোথাও সড়ক ও অলিগলির রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। এরপরও বৃষ্টির মধ্যে সকালে কর্মস্থল ও স্কুল-কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়ে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির কারণে সকালে গণপরিবহন কম থাকায় ভোগান্তি বেশি হয়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাইল ভূঁইয়া বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানায়, বান্দরবানে গত কয়েক দিনের মতো গতকাল বুধবারও বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিলো। বৃদ্ধি পেয়েছে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর পানি। এ অবস্থায় নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারীদের দিন কাটছে উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলা সদরের লাঙ্গিপাড়া, বালাঘাটা, কালাঘাটা, ক্যাচিংঘাটা, সাইঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি পাহাড় অধ্যুষিত এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এদিকে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা না মেনে কাটা পাহাড়াগুলোতে ধস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বান্দরবান কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মন্ডল জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকবে। পাহাড়-ঘেঁষা এলাকাগুলোর বাসিন্দারা বেশ ঝুঁকিতে আছেন। বান্দরবান জেলা সদরের সঙ্গে অন্য উপজেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো স্বাভাবিক আছে। তবে বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসে রাস্তার ওপর মাটি চলে আসায় যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব সড়কে যেকোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, রুমা উপজেলার ২নং সদর ইউনিয়নের আশ্রম পাড়া এলাকায় একটি পাহাড় ধসে পড়েছে। গভীর রাতে টানা বৃষ্টিতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে পাহাড় ধসে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অনিয়ন্ত্রিতভাবে পাহাড় কাটার কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা বেড়েছে জেলা সদরসহ লামা, থানচি, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাহাড় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানায়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট বৈরি আবহাওয়ায় বরিশালে একদিনে ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরো দুই-তিনদিন এই বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল বুধবার দুপুরে এই তথ্য জানিয়েছেন বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর এবং নদী বন্দরকে এক নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আরো দুই-তিনদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এর আগের চব্বিশ ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় জানিয়ে আনিসুর রহমান বলেন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। এটি মৌসুমি বৃষ্টিপাত। বর্ষায় সাধারণত এভাবেই বৃষ্টি হয়।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে পানি না নামতে পারায় ফসলি ক্ষেত, লোকালয় এবং সড়কে তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পাঁচদিনের অবিরাম বর্ষণে নাকাল হয়ে পড়েছেন বরিশালবাসী, ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কর্মজীবী, নিম্নআয়ের মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। বৃষ্টিতে অনেকেই ঘরবন্দি সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ বিরাজমান থাকায় বরিশাল বিভাগের তিন নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ নদীসমূহে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার বিরাজমান আছে। গতকাল বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশালের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দপ্তরটির দেওয়া তথ্য মতে, ঝালকাঠি জেলার বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার, ভোলা জেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার এবং পটুয়াখালী জেলার পায়রা নদী মির্জাগঞ্জ উপজেলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাজুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদূসমূহের ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের গেজ স্টেশনের পানির উচ্চতা পর্যালোচনা করে। এসব স্টেশনের দেওয়া তথ্যের পর্যালোচনায় তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বাকি ১৬টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পাঁচ দিন ধরে টানা বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে যাচ্ছে। পানি নামতে শুরু করলে এসব এলাকায় নদী ভাঙণ দেখা দিতে পারে। তবে পানি বৃদ্ধি আর বৃষ্টি কোন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করবে না। বর্ষা মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে নদী, খালের এটি স্বাভাবিক চরিত্র। টানা বৃষ্টিতে বরিশাল শহর ও শহরের উপকণ্ঠে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়ক, গলি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা পানিতে ডুবে আছে। এতে মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপকূলীয় উপজেলাসমূহরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদী তীরবর্তী বসতিতে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী এবং পিরোজপুর জেলার নদী তীরবর্তী লোকালয়ে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ