টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডকে ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার ঝড় ওঠে জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার চলমান টেস্টে। গতকাল সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং অলরাউন্ডার উইয়ান মুল্ডার এমন এক ইনিংস খেলেছেন, যা তাকে ইতিহাসের পাতায় তুলে দিয়েছে। তবে অবিশ্বাস্য এক সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি চমকে দিয়েছেন ক্রিকেটবিশ্বকে।
বুলাওয়েতে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় দিনের মধ্যাহ্ন বিরতিতে পৌঁছায় ৫ উইকেটে ৬২৬ রান নিয়ে। সেই সময় ক্রিজে ছিলেন মুল্ডার, যিনি ৩২৪ বলে অপরাজিত ৩৬৭ রান করে লাঞ্চে গিয়েছিলেন। রানের এই পাহাড়ে পৌঁছাতে মুল্ডার হাঁকিয়েছেন ৪৯টি চার ও ৪টি ছক্কা। অথচ লাঞ্চের পর যখন সবার আশা ছিল, তিনি হয়তো ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডটি নিজের করে নেবেন, তখনই বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। ইনিংস ঘোষণা করে দেন তিনি। ফলে তার রান থেমে যায় ৩৬৭-এ, আর ব্রায়ান লারার কিংবদন্তিতুল্য ৪০০ রানের রেকর্ড অক্ষত থেকে যায়।
টেস্টের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এদিন মুল্ডারই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই ব্যাট হাতে ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন। নেতৃত্ব পেয়েছেন বেশ নাটকীয়ভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়মিত অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা এবং প্রথম টেস্টের অধিনায়ক কেশভ মহারাজ দুজনেই চোটের কারণে বাইরে চলে যাওয়ায় এই দায়িত্ব এসে পড়ে মুল্ডারের কাঁধে। অথচ স্বীকৃত ক্রিকেটে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র এক ম্যাচ, সেটিও ২০২২ সালে রয়্যাল লন্ডন ওয়ানডে কাপে লেস্টারশায়ারের হয়ে।
এই টেস্টে প্রথম দিন টস হেরে ব্যাট করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনেই দলের স্কোর দাঁড়ায় ৪৬৫/৪, মুল্ডার অপরাজিত থাকেন ২৬৪ রানে। দ্বিতীয় দিনে ব্যাট চালিয়ে মাত্র ২৯৭ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান তিনি, যা টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি। এই তালিকায় সবার উপরে আছেন ভারতের বীরেন্দর শেবাগ, যিনি ২০০৮ সালে চেন্নাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৮ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন।
প্রোটিয়াদের হয়ে মুল্ডারই দ্বিতীয় ব্যাটার, যিনি টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন। এর আগে ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দা ওভালে ৩১১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন হাশিম আমলা। তবে মুল্ডার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে গেছেন। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক এখন মুল্ডার। একইসঙ্গে তিনি প্রথম প্রোটিয়া অধিনায়ক, যিনি টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন। এর আগে প্রোটিয়া অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল গ্রায়েম স্মিথের ২৭৭ রান, যা তিনি করেছিলেন ২০০৩ সালে এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
এক ইনিংসে মুল্ডারের চেয়ে বেশি চার আছে টেস্ট ইতিহাসে কেবল একজনের। ১৯৬৫ সালে হেডিংলিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৩১০ রানের ইনিংসে ৫২টি চার মেরেছিলেন জন এডরিচ।
মুল্ডারের ৩৬৭ রানের ইনিংস টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ। তার ওপরে আছেন মাহেলা জয়াবর্ধনে (৩৭৪), ব্রায়ান লারা (৩৭৫), ম্যাথু হেইডেন (৩৮০) এবং আবারও লারা, যার ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৪০০ রানের অপরাজিত ইনিংস এখনও শীর্ষে।
তবে অনেকের মনেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে-আর মাত্র ৩৩ রান দূরে থেকে কেন মুল্ডার ইনিংস ঘোষণা করলেন? হয়তো লারার রেকর্ডের প্রতি সম্মান, হয়তো দলের কৌশল। নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়। কিন্তু যা-ই হোক, ক্রিকেটবিশ্ব সোমবার মুগ্ধ হয়েছে মুল্ডারের ব্যাটিং প্রতিভায়, আর একইসঙ্গে কিছুটা হতাশও হয়েছে ইতিহাসের এক অনন্য মুহূর্তের সাক্ষী হতে না পারার বেদনায়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

লারার ৪০০ ছোঁয়ার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে মুল্ডারের বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত
- আপলোড সময় : ০৭-০৭-২০২৫ ০৯:১১:১৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৭-০৭-২০২৫ ০৯:১১:১৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ