যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে আজ রোববার সারা দেশে ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র আশুরা পালন করা হচ্ছে। আশুরার দিনটি ইসলামী পরম্পরায় একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এটি একটি পবিত্র ও সম্মানিত দিন, যা মুসলমানদের কাছে নানা ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আরবি ‘আশারা’ শব্দের অর্থ দশ। আর আশুরা মানে দশম। আর মহররম অর্থ সম্মানিত। হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারবালার প্রান্তরে ফোরাত নদীর তীরে নির্মমভাবে শহীদ হন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। সত্য ও সুন্দরের পথে চলার প্রেরণা জোগায়। শিয়া সম্প্রদায় এদিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে তাজিয়া মিছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, এই দিনে ইবাদত-বন্দেগির বিশেষ ফজিলত রয়েছে। যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইসলামপূর্ব আরব জাহেলি সমাজে এবং আহলে কিতাব-ইহুদী-নাসারাদের মাঝেও ছিল এ দিনের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা। আল্লাহ তায়ালা আশুরার দিন কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদের নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরেছেন। হাদিসে এসেছে, আশুরার দিন রোজা রাখলে আল্লাহ তা’আলা আগের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেন। উত্তম হলো: ৯ ও ১০ মহররম, অথবা ১০ ও ১১ মহররম রোজা রাখা। মুসলিম উম্মাহ এ দিনটিকে বিশেষ আমল তথা রোজা পালনের দিন হিসেবে শ্রদ্ধা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। সব নবী-রাসুলের যুগেই আশুরার রোজা আমল ছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পেলেন, ইহুদিরা এই দিনে রোজা রাখছে। তিনি রোজা রাখার কারণ জানলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ইহুদিদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। সুতরাং তোমরাও আশুরায় রোজা রাখো। তবে তাদের অনুকরণ বা সাদৃশ্য যেন না হয় সে জন্য তিনি আগের কিংবা পরের ১ দিন রোজা পালনের কথাও বলেছেন। এ দিনটি তওবার জন্য বিশেষ উপযোগী। নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা, পরিবারের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা এবং দান করা উত্তম। একটি হাদিসে এসেছে: যে ব্যক্তি আশুরার দিনে নিজের পরিবারের ওপর ব্যয় বাড়াবে, আল্লাহ তা’আলা সারা বছর তার রিজিক বাড়িয়ে দেবেন। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান) অতিরিক্ত নফল ইবাদত, তাহাজ্জুদ ও কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। এদিন কুরআন পড়া, দোয়া ও দরুদ শরিফ পাঠে মনোযোগী হন মুসলিমরা। পবিত্র আশুরা-১৪৪৭ হিজরি উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ রোববার দেড়টায় (বাদ যোহর) বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দিন। এতে সভাপতিত্ব করবেন দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

পবিত্র আশুরা আজ
- আপলোড সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ০৩:৩২:২৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ০৩:৩২:২৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ