আগামিকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন জোটের শরিক দলগুলো। দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ মাস পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এই বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এবং সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতিমণ্ডলীর কয়েকজন নেতাও বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়েছেন। বৈঠকে জোটের প্রতিটি শরিক দলের দু’জন করে শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ১৪দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি জানা গেছে। জানা গেছে, গত ৫ বছরে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক হয়েছে দেড় ডজনের মতো। এসব বৈঠকের সিংহভাগই হয়েছে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর বাসায়। সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে কয়েকটি সমাবেশ হয় ১৪ দলের ব্যানারে। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে গত ৪ ডিসেম্বর জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার। নির্বাচনের আগে আসন ভাগাভাগি নিয়ে গত ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে গত নির্বাচনের পর ১৪ দলের জোটগত কর্মসূচি নেই, সেভাবে কোনো বৈঠকও হয়নি।
১৪ দলীয় জোট শরিকরা বলছেন, ১৪ দলের দীর্ঘদিনের পথচলা আরো দীর্ঘ হবে নাকি ছন্দপতন ঘটবে- এমন রাজনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যে জোটের বৈঠক ডাকায় আশার আলো নতুন করে দেখাছেন নেতারা। সকল মান-অভিমান ভুলে অপশক্তির বিরুদ্ধে ফের ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থাকার স্বপ্ন দেখছেন তারা। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে মান-অভিমান দেখা দেয়। নির্বাচনের পর সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও অভিমান ভাঙানোর কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় চরম হতাশা হয়ে পড়েন জোট শরিকরা। শরিক নেতাদের মতে, বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে মোটামুটি ভালো অবস্থানেই ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা। একাদশ জাতীয় সংসদেও ছয়টি আসন ছিল শরিক চার দলের। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসে হোঁচট খেয়েছে জোটগত নির্বাচনী রাজনীতি। দ্বাদশ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের ছয়টি আসন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ওই আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থী দেয়নি সরকারি দলটি। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ছয়টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটিতে বিজয়ী হয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। ‘ভাগ্য বিপর্যয়’ ঘটেছে শরিক দলের শীর্ষ ও হেভিওয়েট নেতাদেরও। পরাজিত হন হেভিওয়েট নেতা হাসানুল হক ইনু এবং ফজলে হোসেন বাদশা। এমন পরিস্থিতির জন্য মূলত আওয়ামী লীগের কৌশলগত নির্বাচনী রাজনীতিকেই দায়ী করছে জোট শরিকরা। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে রেখে দেয়া এবং সর্বোপরি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর শরিক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধাচরণ করাতেই ছিটকে পড়তে হয়েছে তাদের। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে চরম ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি থেকে টানাপোড়েন শুরু হয় এ জোটে। এ অবস্থায় ১৪ দলের বৈঠক ডেকে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ও পরবর্তী সময়ে কর্মসূচি নির্ধারণের তাগিদ ছিল জোট শরিকদের। তাদের মতে, ১৪ দল নির্বাচনী জোট নয়; আদর্শিক জোট। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে এক সঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠন নীতি নিয়ে প্রায় দুই দশক পথ চলছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির এই জোটটি। এই চলার পথে বিভিন্ন সময় ভুলভ্রান্তি, জোটের কার্যক্রমের ছন্দপতন এবং মান-অভিমান হলেও ১৪ দলের প্রয়োজনীয়তা এখনো প্রাসঙ্গিক। কেননা এখনো সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নির্মূল করে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। ফলে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বৈঠকে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনবো। তারপর সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনার পর নিশ্চয়ই পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জোটনেত্রী শেখ হাসিনাই তো বলেছেন, ১৪ দল আছে, থাকবে। এখন দেখা যাক কী হয়। একইসুরে কথা বলেছেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি বলেন, ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমাকে কল করে ২ জনের কথাই বলা হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর জোটের বৈঠক হচ্ছে, সেখানে নানান বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই বৈঠক হবে। সে কারণে আগে থেকে কিছু বলা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক (ইনু) বলেন, যে আদর্শিক কারণে জোট হয়েছিল, তা এখনো প্রাসঙ্গিক। আমাদের লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। সরকার-রাষ্ট্র-সমাজে কিছু সমস্যা রয়েছে যা অনভিপ্রেত। শেখ হাসিনা জোটকে গতিশীল করার কথা বলেছেন। কীভাবে গতিশীল হবে, এটি চিন্তা করতে হবে। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। নির্ভর করবে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। জাসদ কি ভাবছে সেটি বড় কথা নয়, শেখ হাসিনা জোট নিয়ে কি ভাবছেন, সেটিই বড় কথা। একদিকে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে মোল্লাতন্ত্র, অন্যদিকে সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় গুণ্ডাতন্ত্র জনগণকে অস্বস্তিতে রেখেছে। এসব সমস্যা ভাবার পাশাপাশি স্বস্তির জায়গা তৈরি করা বড় চ্যালেঞ্জ। একইসুরে কথা বলেছেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, আগামিকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে জোটের বৈঠক ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জোটের প্রধান নেত্রী। তিনি বৈঠকে কী বলেন, সেদিকেই আমাদের দৃষ্টি থাকবে। বর্তমান অবস্থায় ১৪ দলের প্রয়োজন আদৌ আছে কিনা, থাকলে জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে সেসব নিয়ে আলোচনা হতে পারে। দীর্ঘদিন পরে বৈঠক হচ্ছে, অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হতে পারে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে জোটের সকল নেতাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ১৪দলের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ, ১১ দল, জাসদ ও ন্যাপকে নিয়ে ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এরপর তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতার পর থেকে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ১৪-১৬টি আসনে ছাড় দেয়া হয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে জয়ী হওয়ার পর ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত মহাজোট সরকারে ঠাঁই মিলেছিল শরিক নেতাদের। একাদশ এবং দ্বাদশ সংসদে সরকারে ঠাঁই হয়নি জোট শরিকদের। এই অবস্থায় জোটকে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকেই তাকিয়ে আছেন জোট নেতারা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪দলের বৈঠক আগামিকাল বৃহস্পতিবার
নতুন করে আশার আলো দেখছে ১৪ দল
- আপলোড সময় : ২২-০৫-২০২৪ ০৪:১১:৪৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২২-০৫-২০২৪ ০৪:১১:৪৮ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ