
* সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় আসকের নিন্দা, দ্রুত বিচারের দাবি * হিন্দু নারীকে ধর্ষণ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পিসিপি’র * ধর্ষণ-ভিডিওকাণ্ডে ধর্ষক ফজরসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ * ধর্ষণের ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে বিচার করা হবে : আইন উপদেষ্টা * আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা দায়ী: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা * সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জামায়াত আমীরের
মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড়
- আপলোড সময় : ৩০-০৬-২০২৫ ০৪:১২:৪৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-০৬-২০২৫ ০৪:১২:৪৮ অপরাহ্ন


কুমিল্লার মুরাদনগরে একটি গ্রামে সংখ্যালঘু নারীকে (২৫) ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক এবং নগর-মহানগরের চায়ের স্টলেও রীতিমতো চলছে ঘৃণা ও প্রতিবাদ। যে যেভাবে পারছে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ফুঁসে উঠেছেন এই বর্বর ঘটনার প্রতিবাদে। এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা এবং এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল সোচ্চার হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে জড়িতদের দ্রুত কঠোর শাস্তি দাবি করছে রাজনীতিবিদরা। প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানানোর পাশাপাশি কঠোর বিচার দাবি জানিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। অনেকেই অপরাধীর দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। এরআগে শনিবার রাতে এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ধর্ষক ফজরসহ গ্রেফতার ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী। জানা গেছে, কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে এক নারী মামলা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার দুপুরে মামলাটি করা হয়। ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর শনিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। শনিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লার মুরাদনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী (৩৮) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে। দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠা এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ একাধিক মামলা করেছে এবং দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) রাতে রামচন্দ্রপুর পাঁচকিত্তা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, তিনি প্রায় ১৫ দিন আগে হোমনা উপজেলার স্বামীর বাড়ি থেকে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ২৬ জুন রাত আনুমানিক ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে, তার বাবা-মা বাইরে গেলে অভিযুক্ত ফজর আলী তার ঘরের দরজায় গিয়ে খোলার অনুরোধ করেন। তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে, ফজর আলী দরজা ভেঙে অথবা কৌশলে ভিতরে ঢুকে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন। নারীর দাবি, টাকা ধার নেয়ার সূত্র ধরে ফজর আলীর সঙ্গে তাদের পারিবারিকভাবে পরিচয় ছিল। সেই সম্পর্কের আড়ালে সে এই জঘণ্য কাজ করে। ধর্ষণের সময় ওই নারীর চিৎকার শুনে পাশের বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে এসে দরজা ভাঙা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে এবং ফজর আলীকে আটক করে মারধর করে। এ সময় কিছু ব্যক্তি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে। পরে আহত অবস্থায় ফজর আলী পালিয়ে যায়। পরদিনই (২৭ জুন) ওই নারী মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন, এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়। ঘটনার সময় ধারণ করা ভিডিও পরে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে দেশ-বিদেশে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ভিডিওতে ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখা যায়, যা তার সম্মানহানির পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলা পুলিশ অনিক, সুমন, রমজান ও বাবু নামের চারজনকে গ্রেফতার করে। তাদের সবাই মুরাদনগরের একই এলাকার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আলাদা মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান। ঘটনার তিনদিন পর, গতকাল রোববার ভোরে রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ফজর আলীকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের ভাষ্যমতে, গ্রেফতারকৃত অবস্থায় তিনি আহত ছিলেন। তাকে চিকিৎসা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে। মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান জানান, ধর্ষণের ঘটনার মূল আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করা হয়েছে। ধর্ষণের পাশাপাশি ভিডিও ধারণ ও ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু নারীর বিবস্ত্র ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকার সংস্থা ও সাধারণ জনগণ এই ঘটনার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এই ঘটনার সামাজিক, মানবিক ও আইনগত দিক বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে, কারণ এটি একদিকে নারীর ওপর যৌন সহিংসতার নির্মম চিত্র, অন্যদিকে ডিজিটাল মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত সম্মান ভঙ্গের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
আসকের নিন্দা, দ্রুত বিচারের দাবি : কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একইসঙ্গে এই ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকারভিত্তিক এই সংগঠনটি। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিবৃতিতে আসক বলেছে, এ ঘটনা শুধু একটি ভয়াবহ অপরাধই নয়, বরং নারীর প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও বিদ্বেষের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। যা দেশের সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মৌলিক ভিত্তিকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে। আসকের বিবৃতিতে ‘গণমাধ্যম সূত্রে জানা তথ্য’ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২৬ জুন রাতে মুরাদনগরের বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে ফজর আলী নামের এক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি একটি সংখ্যালঘু নারীর ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন। এ সময় ভুক্তভোগী তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ঘটনার পর ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়, যা ভয়ংকরভাবে অপমানজনক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। বিবৃতিতে আসক আরও বলেছে, এই অপরাধের পেছনে শুধু একজন ব্যক্তির দায় নয়, বরং বিচারহীনতার সংস্কৃতি, প্রভাবশালীদের রক্ষায় আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা এবং রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা কাজ করেছে। একজন নারী যদি নিজের ঘরে, নিজের পরিচয়ে নিরাপদ না থাকেন, তা রাষ্ট্রের ব্যর্থতা ও নিরাপত্তাহীনতা স্পষ্ট করে। সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, অতীতে নারীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় অপরাধীদের বিচার না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে বারবার। সেই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনারও বিচার না হলে নারীর অধিকার ও মর্যাদা আরও বিপন্ন হবে। আসক জোরালোভাবে দাবি জানিয়েছে, ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযুক্ত ফজর আলীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি, মানসিক ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই বর্বরতার ঘটনায় কঠোর বার্তা দেয়া জরুরি এ দেশে এমন ঘৃণ্য অপরাধের কোনও স্থান নেই। দায়সারাভাবে নয়, বরং স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে যে, আইনের শাসন ও নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সে বদ্ধপরিকর।
দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির দাবি এমজেএফের : কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার একটি গ্রামে একনারীকে (২৫) ঘরের দরজা ভেঙে ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। একাধিক অভিযুক্ত গ্রেফতার হলেও এই জঘন্য অপরাধের দ্রুত বিচার এবং সকল আসামির কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি। গতকাল রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ সব তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, একই সাথে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের ভিডিও ধারণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অমানবিক ও ঘৃণ্য প্রবণতারও তীব্র নিন্দা জানায় এমজেএফ। নিপীড়নের ভিডিও ধারন করে ছড়িয়ে দেয়া, নারীর প্রতি আরেক দফা নির্যাতনের শামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি অপরাধের শিকার নারীর সামাজিক ও মানসিক স্থিতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ শাস্তিযোগ্য অপরাধ সামাজিক সহিংসতাকে উৎসাহিত করে। এমজেএফ প্রত্যেক নাগরিককে এই নিষ্ঠুরতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে জানানো হয়, নারীর প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় এমজেএফ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এ বিষয়ে আরও সচেষ্ট আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর আইনের যথাযথ প্রয়োগ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক মূল্যবোধের উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এমজেএফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানায়, মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার নারীর দ্রুত আরোগ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা নিশ্চিত করতে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে এবং নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে। ঘটনার সত্যতা উন্মোচন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
মুরাদনগরের ঘটনা নিয়ে কী বলছেন তারকারা : কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে এক নারীর (২৫) ওপর বসতঘরে ঢুকে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও শনিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ফুঁসে উঠেছেন এই বর্বর ঘটনার প্রতিবাদে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন। অনেকেই অপরাধীর দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। চরম নিন্দনীয় এমন ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, মিশা সওদাগর, শাহরিয়ার নাজিম জয়, রাফিয়াত রশীদ মিথিলা, মৌসুমি হামিদ, আরশ খান, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি, নুসরাত ফারিয়া, তমা মির্জা প্রমুখ। অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভিক্টিমের নয়, অপরাধীর ছবি ছড়িয়ে দিন, এই বার্তা সংবলিত একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে লিখেছেন : সারা দেশ যখন আছিয়ার জন্য পথে নেমে এসেছিল তখন ফজর আলী কি ঘুমিয়ে ছিল? কিছুই দেখে নাই? নাকি সে মিছিলের ভিড়েই ছিল মুখোশ পরে? সব অপরাধী ধরা পড়ে শুধু অপরাধটা হয়ে যাওয়ার পর। অপরাধ করতে ভয় পাওয়ার প্রবণতা না বাড়ানো গেলে অপরাধ হতে থাকবেই। মব কিংবা ধর্ষণের মতো অপরাধের পর অপরাধী ধরা পড়া আর ছোটবেলার সেই ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগীর মারা যাওয়া’ ঘটনার সমতুল্য। তার এই পোস্টে নেটিজেনরা ব্যাপকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অধিকাংশই ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন। অনেকে লিখেছেন, প্রকাশ্যেই কার্যকর হোক এদের শাস্তি, যাতে সমাজে ভয় জন্মায় এবং ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘন্য কাজ করতে সাহস না পায়। খ্যাতিমান খল অভিনেতা মিশা সওদাগর এমন ঘটনার প্রতিবাদে তার ফেসবুকে লিখেছেন, দেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে থাকুক। প্রতিটি নারী নিরাপদে থাকুক। প্রতিটি অন্যায়ের ন্যায় বিচার হোক। প্রতিটি ধর্ষকের ফাঁসি হোক। মুরাদনগরে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের তীব্র ঘৃণা এবং নিন্দা জানাচ্ছি। ফেসবুক পোস্টে অভিনেত্রী তমা মির্জা লিখেছেন, মুরাদনগর, কুমিল্লা! বীভৎসতা! লজ্জা’। অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ লিখেছেন, মানুষ আর মানুষ নেই। পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ আর কোনো মানুষ থাকবে না। খুব শিগগিরই।’ প্রার্থনা ফারদিন দীঘি লিখেছেন, ধর্ষণকে না বলুন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। নীরবতাই সমর্থন। ধর্ষণ বন্ধ করুন। ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন অভিনেত্রী রাফিয়াত রশীদ মিথিলা। তিনি তার পোস্টে ঘটনাটির জন্য ধিক্কার জানিয়েছেন। তিনি লিখেন, ধিক্কার। এরপর হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অভিনেত্রী লিখলেন, ধর্ষকের শাস্তি চাই। ধর্ষণের প্রতিবাদ জানিয়ে নুসরাত ফারিয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘স্টপ রেপ।’ সংগীতশিল্পী ও অভিনয়শিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী লিখেছেন, ‘বিবস্ত্র বাংলাদেশ। অভিনেতা জিয়াউল রোশান দীর্ঘ একটি পোস্টে লিখেছেন, কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনায় ধর্ষকদের একটাই শাস্তি চাই। জনসম্মুখে ফাঁসি। তারা কোন দল করে, আর কোন ধর্মের সেটা জানা দরকার নাই, জানতেও চাই না, জাস্ট জনসম্মুখে ফাঁসি চাই। অভিনেতা আরশ খান এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, কাপুরুষত্ব যখন চরম পর্যায়ে পৌছায়, তখন তা কুপুরুষত্বে রূপ নেয়। জন্ম পরিচয়হীন না হলে একজন নারীর সঙ্গে এমন করা সম্ভব না। একজন যারজ সব সময় যারজই থাকে। অভিনেতা শিমুল শার্মা এক পোস্টে লিখেছেন, কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর? মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর। অভিনেতা সাইদুর রহমান পাভেল ফেসবুক লাইভে বলেন, ধর্ষকদের মেরে ফেলুন। প্রকাশ্যে ফাঁসি দিন। এছাড়া দেশের সার্বিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে জানিয়ে পাভেল বলেন, এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি, এটা তো আরও খারাপ হয়ে গেল। এখন দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেছে। এখন তো মনে হচ্ছে ভুল করেছি ভাই। ভুল করেছে সবাই।
হিন্দু নারীকে ধর্ষণ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পিসিপি’র : কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরে ঢুকে হিন্দু নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে পিসিপি। একইসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। গতকাল রোববার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (কেন্দ্রীয় কমিটি) তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুভাষ চাকমা। তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরে ডুকে এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ মনে করে, দেশে অতীতে ধর্ষণের কোন ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ না থাকা তথা দেশে বিচারহীন সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার এ ধরণের ঘটনা ঘটাতে উৎসাহিত হচ্ছে। তাই গ্রেফতারকৃত ধর্ষক ফজর আলী (৩৮) ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং যারাই ভুক্তভোগী (ধর্ষিত) মহিলাকে মারধর করেছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।
মুরাদনগরের ধর্ষণের ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবো : আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের ঘটনার বিচার করবো। এতে আমরা বদ্ধপরিকর। রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। আসিফ নজরুল বলেন, ওই ধর্ষণের ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের মতো আমরাও মর্মাহত। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান আসামিসহ যারা ছবি ছড়িয়ে দেয়ার কাজে জড়িত ছিল, অত্যন্ত দায়িত্বহীন অপরাধমূলক কাজ করেছে। সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করেছি। দ্রুততম সময়ে আপনারা মাগুরার ঘটনার বিচার দেখেছেন। মুরাদনগরে ঘটনাও আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবো।
মুরাদনগরের ঘটনায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা দায়ী : কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরে ঢুকে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের দায়ী করেছেন স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। শনিবার দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ অভিযোগ করেন তিনি। আসিফ মাহমুদ লেখেন, মুরাদনগরের সকল আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, পুনর্বাসন এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে যারা ছেড়ে দিয়েছেন, তারাই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এর আগেও চাঁদাবাজকে হাতেনাতে গ্রেফতার করায় তাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা-ভাঙচুর করে এক মাফিয়ার বাহিনী। তিনি আরও লেখেন, আজকে আমি লজ্জিত, আমার বলার ভাষা নেই। এলাকার লোকজন দেখা হলেই বলে গণ-অভ্যুত্থানে দেশ মুক্ত হয়েছে। কিন্তু মুরাদনগর আরও বড় মাফিয়াদের দখলে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ধর্ষকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে মূল মাফিয়াদের লাগাম টেনে না ধরা গেলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।
কুমিল্লায় নারী ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ : কুমিল্লায় এক নারীকে ধর্ষণ ও পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা এবং এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল সোচ্চার হয়েছে। এ ইস্যুতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে একজন নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন একান্তই লজ্জাজনক একটি ঘটনা। রোববার সকালে সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি। তিনি লিখেছেন, লম্পটদের যেকোনো মূল্যে পাকড়াও করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং কঠোর শাস্তি দিতে হবে। খুঁটির জোর যাই হোক, তাকে কোনোভাবেই পাত্তা দেয়া যাবে না। অন্যথায়, এই সমাজ আপাদমস্তক একটি জংলি সমাজে পরিণত হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে অপতৎপরতা চলছে
-মির্জা ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নারী নির্যাতনসহ সহিংস সন্ত্রাসের গোপন অভিযান চালিয়ে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্টর জন্য তারা বিপজ্জনক গোপন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। শক্তিশালী পক্ষের আশির্বাদ আছে বলেই দুর্বৃত্তরা সহিংস কার্যাবলি চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে। তবে সত্যের জন্য, সম্মানের জন্য ও আত্মমর্যাদার জন্য ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলকে দুস্কৃতিকারী পাষণ্ডদের প্রতিহত করতে হবে সুস্থ সমাজ ও নিরাপদ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য।
কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওই নারীর শ্লীলতাহানি ও সহিংসতা মনুষ্যত্বহীন, অমানবিক, পাশবিক ও মহল বিশেষের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের অভিসন্ধি। আবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার আওয়ামী নোংরা কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীকে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতন এক নির্মম কলঙ্কজনক ঘৃণ্য ঘটনা। এই বর্বরোচিত ঘটনা দেশের মানুষকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। অথচ একটি কুচক্রী মহল এই কাপুরোষিত ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আমলের মতো নিজেরাই সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি দখল ও নির্যাতন করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। ওই এলাকার একজন উপদেষ্টা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুরাদনগরে ক্রমাগত ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন। দুস্কৃতিকারীরা আশকারা পেয়ে সমাজবিরোধী নানা অপকর্মে মেতে উঠেছে। আর এ ক্ষেত্রে তারা দেশ-বিদেশ থেকে অবিরাম মদদ পাচ্ছে। উপদেষ্টা যদি জনসেবার চেয়ে আত্মসেবাতেই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত হবে। মুরাদনগরের বাসিন্দা উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী এমপিদের মতো এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত রয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নারী নির্যাতনকারী অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। তারা মানবসভ্যতার শত্রু, আমি অবিলম্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনকারী দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ