ঢাকা , রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
‘স্কুইড গেম’-এ ক্যামিও দিয়ে চমকে দিলেন কেট ব্লানচেট ফের পর্দায় ফিরছেন সোনাক্ষী সিনহা শেফালীর মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন জ্যোতিষী! টোকিওতে পুরস্কৃত হলো ‘নীলপদ্ম’ মুরাদনগরের ধর্ষণের অভিযোগে যা বললেন বাঁধন অসুস্থ অবস্থায় তাণ্ডবের সেটে শুটিং করেছিলেন শাকিব অসুস্থতায় ভুগছেন অভিনেতা জোভান বেনফিকার সাথে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো চেলসি সৌদি লিগের প্রশংসায় রোনালদো ট্রায়ালে আসা প্রবাসী তরুণদের নিয়ে যা জানা গেলো আরসিবি পেসার যশ দয়ালের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ আম্পায়ারের সমালোচনা করে শাস্তির সম্মুখীন হলেন স্যামি অবশেষে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এশিয়া কাপ আইসিসির কাছ থেকে ভারতের আরো লভ্যাংশ পাওয়া উচিত: রবি শাস্ত্রী ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন টাইটেল নিয়ে গায়ানায় যাচ্ছে রংপুর ‘যে কারণে মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না সরকার’ বন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনায় সবার অংশগ্রহণ জরুরিÑ পরিবেশ উপদেষ্টা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪ করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু শনাক্ত ৭ ব্যাটারিচালিত রিকশাকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
* মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢল * এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হলেও জটিলতা ও অসন্তোষ কাটেনি * আজ রোববারও কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি চলবে

এনবিআর কমপ্লিট শাটডাউন

  • আপলোড সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০৩:১৩:৪৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ০৩:১৩:৪৯ অপরাহ্ন
এনবিআর কমপ্লিট শাটডাউন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ ও সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে রাজস্ব খাতের সংস্কার দাবিতে গতকাল শনিবার কমপ্লিট শাটডাউন ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করেছেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ রোববারও কমপ্লিট শাটডাউন ও মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা করেছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এই ঘোষণা দেয়। তবে এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের পরও রাজস্ব সংস্কার প্রক্রিয়ায় অনাকাক্সিক্ষত জটিলতা ও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। চলমান আন্দোলনে আমদানি-রফতানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। রাজস্ব খাতে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অভিযোগ সরকারের সদিচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান একের পর এক বাধাসৃষ্টিকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। ফলে এনবিআরের আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল শনিবার থেকে সারা দেশে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করে আসছে। গতকাল শনিবার সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে কমপ্লিট শাটডাউন ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সকাল থেকে এনবিআরের ঢাকা কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কর্মকর্তারা রাজধানীর এনবিআর ভবনের সামনে সমবেত হন। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, ২৮ জুন শনিবার থেকে এনবিআরের সব অফিসে লাগাতার শাটডাউন ছিলো এবং ২৯ জুন রোববার সারাদেশ থেকে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালিত হবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবার বাইরে সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ঐক্য পরিষদের দাবি, গত ২২ মে মধ্যরাতে জারি করা রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রেক্ষিতে সরকার ২৫ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। সরকার জানায়, এনবিআরকে স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে রক্ষা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন না আনা পর্যন্ত অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হবে না। কিন্তু ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, এনবিআর চেয়ারম্যান শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা দিয়ে চলেছেন। সংগঠনের নেতাদের অভিযোগ, এনবিআর চেয়ারম্যান একের পর এক পদক্ষেপের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী চরিত্রের পরিচয় দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— সংস্কারের বিষয়ে সেমিনার আয়োজনের জন্য অফিস কক্ষ বরাদ্দ না দেওয়া, বরং সংশ্লিষ্ট চিঠি ছুড়ে ফেলা। রাজস্ব ভবনের গেট বন্ধ করে কর্মকর্তা, সেবাগ্রহীতা ও সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা। আলোচনাবিহীন একতরফাভাবে রাজস্ব অধ্যাদেশ সংশোধন কমিটি গঠন এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি। সংস্কারপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি, হয়রানি ও বদলির মাধ্যমে প্রতিহিংসা চরিতার্থের অভিযোগ। ঐক্য পরিষদ দাবি করছে, ২১ ও ২২ জুনের আদেশে যেসব কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, তারা পেশাদার ও দক্ষ ছিলেন এবং সংস্কার কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। এসব বদলিকে ‘অবৈধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলে অভিহিত করেছেন তারা। সংগঠনের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকার সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ছাড়া টেকসই ও বাস্তবধর্মী রাজস্ব সংস্কার সম্ভব নয়। তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং দেশবাসী, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সমাজের সহানুভূতি কামনা করেছেন। ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, ব্যবসায়ী সমাজ বলেছে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনো মতেই কাম্য নয় এবং তাতে কোনো সফলতা আসবে না। আমরা পরিতাপের সঙ্গে বলছি যে, কী কারণে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর একজন আমলার অপসারণ ব্যবসায়ী সমাজ কাম্য নয় বলছে সেটি তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে খোলাসা করে বলেনি। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ী সমাজসহ পুরো দেশবাসীর কাছে এরই মধ্যে আগের প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং শনিবারের প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে খোলাসা করেছি যে, রাজস্ব ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ, প্রকৃত, টেকসই ও বাস্তব সম্মত সংস্কারের স্বার্থে কেন ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানকে অপসারণ করতে হবে। কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ঘোষিত ২৮ জুন থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। অর্থাৎ আজ রোববার কমপ্লিট শাটডাউন যথারীতি চলবে। তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া আজ রোববার এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিও পালিত হবে। সংগঠনটির মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা বলেন, আগামী মঙ্গলবার আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। আলোচনার সদিচ্ছা থাকলে এই কর্মসূচির মধ্যেই ডাকা যেত। মঙ্গলবার অনেক লম্বা সময়। তাদের আলোচনার আদৌ কতটা ইচ্ছা আছে আমরা জানি না। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের ডাকলে আমরা নিশ্চয়ই আলোচনায় যাব। কিন্তু আলোচনায় যাব কী নিয়ে আমরা যৌক্তিক রাজস্ব সংস্কারের দাবি নিয়ে যাব। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এই দাবির প্রথম প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের মধ্য দিয়ে এই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। ব্যবসায়ীরা এনবিআরের কাছে জিম্মি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, তারা এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মি হওয়ার কথা। এর আগে, ২৭ জুন শুক্রবার রাতে ঐক্য পরিষদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একই দিন থেকে সারাদেশের এসব দপ্তরে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কার্যকর থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে। গত ১২ এপ্রিল রাতে জারি করা এক অধ্যাদেশে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ—‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ গঠনের ঘোষণা দেয় সরকার। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় ওই অধ্যাদেশ অকার্যকর ঘোষণা করলে কর্মীরা কাজে ফেরেন। তবে ২৯ মে’র মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে অপসারণের দাবি জানানো হয়। নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলে তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর গত ২২ জুন পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলির ঘটনায় আন্দোলন আবার তীব্র হয়। আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। শুক্রবার এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ বা দেরিতে উপস্থিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত কর কমিশনার ও সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মির্জা আশিক রানা বলেন, বিগত তিন দিন ধরে এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এখানে জলকামান রাখা হয়েছে। সরকারি একজন আমলা (এনবিআর চেয়ারম্যান) সকাল ৬টায় সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তায় এনবিআর ভবনে কেন আসতে হবে? বাংলাদেশের কোনো সচিব সকাল বেলা সশ্রস্ত্র পাহারায় তার দপ্তরে প্রবেশ করে? আর তার কর্মচারীরা বাইরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে। এ সময় তিনি এনবিআর ভবন অবরুদ্ধ করা এবং ভবনে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ তোলেন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স