দেশে পরিচালিত মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ জমা পড়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি)। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে কলড্রপ, ইন্টারনেটে ধীরগতি, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি), অটো ইন্টারনেট প্যাকেজ অ্যাকটিভ ও রিচার্জিংয়ের মতো বিষয়। গত ৯ মাসে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় ছয় হাজার ৯৪৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগের তালিকার শীর্ষে রয়েছে রবি আজিয়াটা।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, গত ৯ মাসে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা প্রায় ছয় হাজার ৯৪৮টি অভিযোগ করেন। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে প্রায় দুই হাজার ৯৬টি, রবি আজিয়াটার বিরুদ্ধে প্রায় দুই হাজার ৭৩১টি, বাংলালিংকের বিরুদ্ধে প্রায় এক হাজার ২৪টি ও রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় এক হাজার ৯৭টি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বিটিআরসি জানায়, কলড্রপ, ইন্টারনেটে ধীরগতি, মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি), অটো ইন্টারনেট প্যাকেজ অ্যাকটিভ, রিচার্জিংসহ গ্রাহকদের বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে। এসময়ে ছয় হাজার ৯৪৮টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচ হাজার ৫২৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকি এক হাজার ১৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি কর্মকর্তা সাহেদ আলম বলেন, আমরা বর্তমানে সাড়ে পাঁচ কোটি গ্রাহককে ওয়্যারলেস বা মোবাইল সেবা দিচ্ছি। এরপরও প্রতিটি অভিযোগই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা ও সমাধান করি। কল ড্রপ এবং ইন্টারনেটে ধীরগতি সমাধানে সরকার ও বিটিআরসির সহযোগিতা প্রয়োজন। সুলভ মূল্যে তরঙ্গ এবং মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার নেটওয়ার্ক বসাতে দিলে এ সমস্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব-বলেন এ কর্মকর্তা। সাহেদ আলম আরও বলেন, উত্থাপিত অভিযোগগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি এরই মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুত সমাধানের প্রক্রিয়ায়। আমরা বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে চলছি। গ্রাহকদের চাহিদা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সেবা দিচ্ছি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অপারেটরগুলোর সেবা পেতে অনেক গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়লেও সবাই অভিযোগ করেন না। আবার অনেক গ্রাহক জানেনও না ভোগান্তির জন্য কোথায় কীভাবে অভিযোগ করতে হয়। এরমধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব গ্রাহক রয়েছেন তারা প্রতিনিয়ত নেটওয়ার্ক ও কলড্রপের মতো সমস্যায় ভুগলেও বিপুল সংখ্যক গ্রাহক অভিযোগ করতে চান না বা অভিযোগের সিস্টেম জানেন না। তাদের দাবি গ্রাহকদের প্রকৃত অভিযোগ অনেক বেশি। দেশে কম শিক্ষিত বা নিরক্ষর অনেক গ্রাহক রয়েছেন, যারা অপারেটরগুলোর কাছে প্রতারিত হলেও অভিযোগ জানাতে পারেন না-বলেন সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের বিভিন্ন রকম অভিযোগ থাকলেও অভিযোগ করেন মাত্র কয়েক শতাংশ গ্রাহক। অনেক গ্রাহক সময়ের অভাবে অভিযোগ করতে অপারগতা দেখান। আবার অনেক গ্রাহক জানেন না কোথায় কীভাবে অভিযোগ করতে হয়। গ্রাহকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে অপারেটরগুলোকে কোনো ছাড় নয়। বরং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, সব প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছেন আমাদের গ্রাহক। আমরা গ্রাহকদের প্রতিটি অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সমাধানের চেষ্টা করি। গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষের আস্থাভাজন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানে আমাদের নানান ধরনের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিরন্তর চলছে এবং চলবে।
জানতে চাইলে বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস গাজী তৌহিদ আহমেদ বলেন, বাংলালিংকের প্রতিটি গ্রাহকের অভিযোগ আমরা সেবা উন্নয়নের অনন্য সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি। গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমস্যা দ্রুত, কার্যকরী ও স্বচ্ছভাবে সমাধান করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও অভিযোগের পরিমাণ একটি সূচক মাত্র, আমরা বিশ্বাস করি সমাধানের গতি, গুণমান ও গ্রাহক সন্তুষ্টিই প্রকৃত মূল্যায়ক। তাই বাংলালিংক সম্প্রসারিত ফোরজি কাভারেজ এবং দ্রুততর ডিজিটাল সলিউশন নিশ্চিত করে ক্রমবর্ধমান গ্রাহক চাহিদা পূরণে আরও উন্নত সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-যোগ করেন অপারেটরটির এ কর্মকর্তা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

গত ৯ মাসে অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ৬৯৪৮টি অভিযোগ
গ্রাহকবান্ধব সেবায় নজর কম অপারেটরগুলোর
- আপলোড সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০৪:৩০:২৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০৬-২০২৫ ০৪:৩০:২৭ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ