ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫ , ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নারী শ্রমিককে ভারতে পাচার দু’জনের যাবজ্জীবন ক্ষমা চেয়েও শেষ রক্ষা হলো না, কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা পূর্বাঞ্চলের ট্রেন যাত্রীদের বেড়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি জাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পুনর্বহালের দাবি মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার প্রাণদণ্ড মিরপুরে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাই গ্রেফতার ৬ রাজধানীতে বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচি পালন নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অনিয়ম চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হাইকোর্টের ৪৯ বেঞ্চ গঠন, আগামী রোববার থেকে বিচারকাজ তথ্য গোপন করে জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধা নিলে ২ বছরের কারাদণ্ড ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ সঙ্কট সেনাপ্রধানের সঙ্গে ডব্লিউজিইআইডির ভাইস চেয়ারপারসনের সাক্ষাৎ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি ইশরাকের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না-নুরুল হক নুর ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ রিজভীর রমজানের আগে নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য আছে পর্যবেক্ষক নীতিমালা চূড়ান্ত ‘ভুয়া’ সংস্থাকে নিবন্ধন নয়-নির্বাচন কমিশন ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যাচ্ছে না জামায়াত
* বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপিসহ সম্ভাব্য প্রর্থীরা ভোটারদের মনজয়ে দৌড়ঝাঁপ * নির্বাচনের পর বিরোধী দল নিয়ে চলছে নানা আলোচনা * তারেক রহমানকে স্বাগত জানাতে ঢাকায় ১০ লাখ লোক সমবেত হবে * ত্রয়োদ্বশে ২৯৬ আসনে প্রার্থী ঠিক করেছে জামায়াত

ভোটের রাজনীতিতে জটিল সমীকরণ

  • আপলোড সময় : ১৮-০৬-২০২৫ ০৬:৫১:০৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৮-০৬-২০২৫ ০৬:৫১:০৬ অপরাহ্ন
ভোটের রাজনীতিতে জটিল সমীকরণ
সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা-তারেক রহমানের বৈঠকের পর বেশ উচ্ছ্বসিত বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জটিল সমীকরণে রূপ নিচ্ছে ভোটের রাজনীতি। আগামী ফেব্রুয়ারিকে ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলগুলো। এবার মিত্রদের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা করার সম্ভাবনা বেশি বিএনপির। আবার জামায়াতও ইসলামপন্থি দলগুলো নিয়ে ‘নির্বাচনী ঐক্য’ গঠনের চেষ্টা করছে। তবে মতাদর্শিক দূরত্বের কারণে জামায়াতের সঙ্গে বড় ইসলামি দলগুলোর ঐক্য নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে অনেকে মনে করছেন, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততই নানা মেরুকরণ দেখা যাবে। বিগত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ‘ওয়ানম্যান শো’-এমন অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দলও আছে, যাদের ভোটের আগে তৎপরতা বাড়বে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জোট ভারী করতে তাদেরও সঙ্গে রাখতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ওইসব দলের তেমন কোনো ভোট নেই।
তবে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ঘোষণা এসেছে, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী মহল ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন তাকে স্বাগত জানিয়েছে। সেই হিসেবে নির্বাচন কমিশনের হাতে সময় খুবই কম। তাদের ডিসেম্বরের প্রথমে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের মধ্যেও একটা ঐক্য তৈরি হতে পারে। আবার বিএনপির জোটে এনসিপিকেও দেখা যেতে পারে। জোট বা সমঝোতা নিয়ে পর্দার আড়ালে দলগুলোর নানা তৎপরতা চলছে। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর সবকিছু দৃশ্যমান হবে। ইসলামী আন্দোলনসহ ৫টি ইসলামী দল অনেকটা সমঝোতার পথে। আবার এবি পার্টির সঙ্গে এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দলের হতে পারে ‘অ্যালায়েন্স’। মতাদর্শিক দূরত্বের কারণে জামায়াতের সঙ্গে বড় ইসলামী দলগুলোর ঐক্য না হলে এনসিপিসহ ইসলামপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গে হতে পারে ‘সমঝোতা’। এর আগে জাতীয় সংসদের আসনগুলোর সীমানা নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, আরপিও সংস্কার করতে হলে সে বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি, পর্যবেক্ষক নীতিমালা, অন্যান্য নির্বাচনী বিধি-বিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ আরো কিছু জরুরি কাজ করতে হবে। অন্যদিকে এরই মধ্যে সারা দেশেই সম্ভাব্য প্রার্থী বা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। ফলে এখন থেকে দেশব্যাপী নির্বাচনী হাওয়া ক্রমেই জোরদার হতে থাকবে।
এদিকে আগামী নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে-তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা। তবে বিরোধী দল হওয়া নিয়ে নাটকীয় কিছু ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামী এককভাবে বা বিএনপির বাইরে কোনো জোট গঠন করলেও ভোটের মাঠে সেভাবে সুবিধা নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রে জামায়াত অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায়ও তাদের প্রার্থীদের জয়ী হতে বেগ পোহাতে হতে পারে। কারণ কিছু আসনে জামায়াতের ভোট বেশি থাকলেও সেখানে যদি বিএনপির ধানের শীষ ও আওয়ামী লীগপন্থি কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়, তাহলে ভোট তিন ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থী জয়ী হওয়া কঠিন হবে। তারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ যতই ফ্যাসিস্ট হিসাবে চিহ্নিত হোক না কেন, আমাদের দেশে ভোটের রাজনীতি বড়ই বিচিত্র ও কঠিন। মানুষ ভোটের সময় অনেক কিছু মনে রাখে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, নিবন্ধনও স্থগিত। ভোটে অংশ নিতে হলে স্বতন্ত্র অথবা অন্য কোনো দলের প্রতীকেই তো নিতে হবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে এখন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এ তিন দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। আবার এর মধ্যে দুই দল একসঙ্গে ফ্রন্ট করতে পারে। আর তারেক রহমান তো আগেই বলেছেন জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করবে।
এ বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করেছে। আমরা বলেছি, জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে পারলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকা দলগুলো নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ করব। এখনো নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করা হয়নি। সাধারণত তফশিলের পর জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা-যাই বলা হোক না কেন, তা হয়ে থাকে। সব দলের সঙ্গে বিএনপির সুসম্পর্ক আছে। তবে এখনো এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক কিছু হয়নি। তবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আলাপ-আলোচনা চলছে, কীভাবে কী করা যায়। অনেকে প্রার্থী ঠিক করেনি, নির্বাচনটা ঠিক কীভাবে হবে-অনেকগুলো বিষয় আছে। ঐকমত্য কমিশনের ‘জুলাই সনদ’ ফাইনাল হলেই তখন এর অগ্রগতি বোঝা যাবে। সময় গেলে তা আরও স্পষ্ট হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বলেন, এনসিপি এখনো নিজেদের স্বাতন্ত্র রক্ষা করে কাজ করে চলছে। নির্বাচনের জোট হবে কী হবে না তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি। যদি বাস্তব পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচি মিলের কথাগুলোকে বিবেচনায় রেখে জোটের সম্ভাবনাকে আমরা একেবারেই নাকচ করি না। তবে এখনো জোটের বিষয়ে এনসিপি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। কথা হয় ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা যে পথে অগ্রসর হচ্ছি তা হলো আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থি ভোট যাতে বিভক্ত না হয়। জোট নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সমঝোতা-সমন্বয়টাও কীভাবে হবে-তা হয়তো আরও পরে প্রকাশ পাবে। অর্থাৎ দৃশ্যমান হবে যৌক্তিক সময়ে। একইসুরে কথা বলেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, সব ইসলামী দল এবং ইসলামী মত ও পথ যারা ইসলামের নামে কাজ করে সবাইকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আগামী ২৫ জুন ৫টি রাজনৈতিক দল-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মসলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিসের বৈঠক হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লষকরা বলছেন, দেশের রাজনীতির আকাশের কালোমেঘ কেটেছে হাজার মাইল দূরে লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক বৈঠকের মাধ্যমে। এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণার পর বিএনপি শিবিরে যে হতাশা দেখা দিয়েছিল, লন্ডনে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের ইঙ্গিতে শক্ত বরফ গলেছে এই বৈঠকে। বিএনপির দৃষ্টি এখন জাতীয় নির্বাচনের দিকে। একই সঙ্গে এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের অধীর অপেক্ষা, দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিকে। সময়োপযোগী এমন বৈঠকে চাঙ্গা বিএনপি। বেশ উৎফুল্ল দলটির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে লন্ডন বৈঠকের পর কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। যারা আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার আভাস দিচ্ছে। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে আগামী রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ও সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এত দিনের মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়। লন্ডন বৈঠক সফল হওয়ায় বিএনপির পাশাপাশি তাদের সমমনা দলগুলোও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর হয়েছে। নির্বাচনের পথ সুগম হয়েছে। বিএনপির দলীয় সূত্রগুলোও বলছে, তাদের দৃষ্টি এখন নির্বাচনের দিকে। সে লক্ষ্যে পরবর্তী দলীয় কার্যক্রম ঠিক করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, মনে হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বে একটা জোট হবেই। পাশাপাশি এবার সমমনা ইসলামী দল পৃথক জোট করবে। আবার যারা কর্তৃত্ববাদবিরোধী বামদল তাদেরও একটা জোট থাকবে। আরেকটা সমীকরণ হতে পারে। সেটি হলো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা যুক্ত ছিল তাদের সঙ্গে পুরাতন কিছু দল মিলে জোট হবে। ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও জামায়াত থাকতে পারে। আবার এনসিপির সঙ্গেও জামায়াত থাকতে পারে। যদি এনসিপির সঙ্গে জামায়াত থাকে তাহলে ইসলামী দলগুলো একসঙ্গে হয়ে যেতে পারে। তখন আবার জোটের সংখ্যা কমে যাবে। এমনও হতে পারে জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামী দলগুলো মিলে একটা জোট করে ফেলতে পারে। তবে বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের পাল্লা যে ভারী হবে সেটি নিশ্চিত বলা যায়।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা নিয়ে ‘অস্থির’ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এ ব্যাপারে সবাইকে ‘সহনশীল’ হতে ও ‘ধৈর্য’ ধারণ করতে বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সব দলের মধ্যে ঐকমত্য আছে। কোথাও দ্বিমত আছে বলে আমরা মনে করি না। আর দিনক্ষণ যেটা, সেটা তো নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিক্লেয়ার করবে। সেটা তো আর সরকার বলতে পারবে না, আমরাও বলতে পারবো না। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো ডায়াস ফেরেসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে (রমজানের আগে) একটা জাতীয় ঐকমত্য আছে। এটা সবারই মতামত, এ জায়গায় কোথাও দ্বিমত আছে বলে মনে করি না। বিভিন্ন কারণে এ জায়গাটায় আমরা এসেছি এবং জাতীয় ঐকমত্য পোষণ করছি। লন্ডনে (ইউনূস-তারেক) বৈঠকের পর জাতি অত্যন্ত আনন্দিত এবং সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে আসবে এবং আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করবো।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দ্রুতই বিএনপির এই শীর্ষ নেতা দেশে ফিরছেন। ৫ আগস্টের আগেই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন। অথবা নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরপরই দেশে ফিরবেন। সেদিন তাকে স্বাগত জানাতে কমপক্ষে ১০ লাখ লোক সমবেত হবে ঢাকায়। সারা দেশ থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ধরে রাখাই কঠিন কবে। রাজনৈতিক এক মহানায়কের আগমনে উপচে পড়া সে ঢেউ সারা দেশে নির্বাচনি জোয়ারে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করবে অনায়াসে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে। বিএনপিকে জনগণ যদি ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনে, তাহলে অবশ্যই দেশের জন্য ড. ইউনূসকে কাজে লাগানো হবে। দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এ ব্যাপারে তার পরামর্শ নেওয়া হবে। এ রকম আরও যারা আছেন, তাদের মতামত নিয়ে কাজ করতে চান তারেক রহমান।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত সময় ধরেই সব আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এরই অংশ হিসাবে অন্তত ২৯৬ আসনে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করেছে দলটি। ধাপে ধাপে আসনভিত্তিক সম্ভাব্য এসব প্রার্থীর নাম অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন দলের নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ এলাকায় নানা কৌশলে গণসংযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় নেতারা। বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে করছেন সভা-সমাবেশও। মূলত ভোটারদের আস্থা অর্জনে দিচ্ছেন একের পর এক প্রতিশ্রুতিও। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে কী কী উদ্যোগ নেবে সেটিও জানান দিচ্ছেন নেতারা। এছাড়া বিগত সরকারের আমলে দল ও দলটির নেতাকর্মীদের ওপর নানা দমন-পীড়নের বিষয়টিও জনগণের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। এমনকি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামি দলগুলো নিয়ে জোট গঠনেরও প্রস্তুতি আছে জামায়াতের। সে ক্ষেত্রে জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিও হতে পারে। দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আসন সংখ্যাটি আমরা এখনো অফিশিয়ালি ঠিক করিনি। এটা (সম্ভাব্য আসন সংখ্যা) প্রাথমিক ঘোষণা। নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা বিষয়ে সমঝোতার বিষয় আছে। তাই এখনই এটা আমরা বলতে চাচ্ছি না। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যারা আছেন, তারা কাজ করছেন। আমাদের যে কোনো সিদ্ধান্ত, যে কোনো সময় আমাদের প্রার্থীরা মানবেন, ইনশাআল্লাহ। নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী দল হিসাবে আমরা সব সময় প্রস্তুত। জাতীয় নির্বাচনসহ যে কোনো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি আছে।
সূত্র জানায়, জামায়াত এককভাবেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সে হিসাবে ৩০০ আসনেই প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। প্রাথমিকভাবে ২৯৬ জনের একটা তালিকা প্রস্তুত করেছে। কোনো কোনো আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নামও রয়েছে। এই তালিকায় যাদের নাম এসেছে তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য তারা মাঠ প্রস্তুত করছেন। কোথাও কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি না সেটিও দেখা হচ্ছে। ’২৪-র গণ-অভ্যুত্থানের পরপরই জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেন। নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা উঠলে প্রস্তুতি শুরু করেন নেতাকর্মীরা।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স