* ১০ ইসরায়েলীর মরদেহ উদ্ধার, আহত হয়েছেন তিন শতাধিক
* কোনো পারমাণবিক আলোচনা হবে না  ইরানের প্রেসিডেন্ট
* আক্রমণে বিপর্যস্ত ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
* ইসরায়েলের বিশ্বখ্যাত গবেষণাকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে
* একযোগে ইসরায়েলে ইয়েমেন-ইরানের মিসাইল হামলা
* ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
* ইরানের অস্ত্র কারখানার আশেপাশে অবস্থানরতদের সরে যাওয়ার নির্দেশ
* ইরানি হামলা মোকাবিলায় ইসরায়েলকে সহায়তার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যের
* ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলে আমাদের প্রতিক্রিয়াও বন্ধ হবে ইরান
ইরানের মিসাইল হামলায় বিপর্যস্ত ইসরায়েল। শনিবার রাতে এ যাবতকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয়েছে ইসরায়েল। সারারাত ধরে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তামরা, বাত ইয়াম, রামাত গান, হাইফা ও তেল আবিবসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তেহরান। গতকাল রোববার ভোরের আলো ফুটতেই সেই ক্ষত দৃশ্যমান হয়। চারদিকে শুধু ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা। ধ্বংসস্তূপ থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক ইসরায়েলী নাগরিক। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ধ্বংস করা হয়েছে ইসরায়েলের বিশ্বখ্যাত গবেষণাকেন্দ্রে। ইসরায়েলে ভয়াবহ এই হামলায় যোগ দিয়েছে ইয়েমেন। কোনো পারমাণবিক আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলে ইরানের প্রতিক্রিয়াও বন্ধ হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে ইরানের হামলা মোকাবিলায় ইসরায়েলকে সহায়তার ইঙ্গিত যুক্তরাজ্যে। টানা কয়েকদিন ধরে ইরান এবং ইসরায়েলের হামলা ও পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। গত শুক্রবার ভোরে তেহরানসহ ইরানের বেশ কিছু স্থানে পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালায়। পরে তীব্র শক্তি নিয়ে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরানও। এমন অবস্থায় ইরানের আক্রমণে কার্যত বিপর্যস্ত ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাতে ইসরায়েলে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তেহরানের জ্বালানী সরবরাহকেন্দ্র এবং সংরক্ষণকেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা চালানোর পর ইরান এই হামলা চালায় হাইফা এবং তেল আবিবসহ আরও বেশ কয়েক জায়গায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানান, আমরা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছি। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১ টার পর পরই ইসরায়েলে হামলা শুরু করে ইরান। এ হামলায় ড্রোনের পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইরান। গত শুক্রবার রাতে তেল আবিবে শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এই হামলায় চারজন নিহত এবং বহু আহতের খবর পাওয়া যায়। তবে শনিবার রাতের ভয়াবহ হামলায় তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে বলেও জানা গেছে।
এরমধ্যে শুধু উত্তর ইসরায়েলের তামরা শহরে প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে চারজন। নিহতরা আরব ইসরায়েলি বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। তারা খাতিব পরিবারের সদস্য। শহরটি ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি অধ্যুষিত। এছাড়া তেল আবিব নগরীর বাত ইয়াম শহরে ইরানি হামলায় নিহত হয়েছে আরও অন্তত ছয়জন। তাদের মধ্যে একজন ৬০ বছর বয়সী নারী ও একজন ১০ বছরের শিশু রয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে ৩৫ জন নিখোঁজ ছিল। তবে তাদের মধ্যে অনেককেই উদ্ধার করা হয়েছে। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অন্তত সাতজন নিখোঁজ ছিল। ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা ‘মাগেন ডেভিড আডম’ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, রেহেবোতে দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ইরানের এ হামলার আগে সব ইসরায়েলিকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয় দখলদার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। তবে এখন তারা সেই নির্দেশনা তুলে দিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের ওই আরব শহরটিতে হতাহতের সংখ্যা বেশি কারণ সেখানে আশ্রয় নেয়ার মতো খুব বেশি সুবিধা নেই। এই ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের নাগরিক হলেও তাদের বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখে ইসরায়েল। এছাড়া ইরানের সর্বশেষ মিসাইল হামলায় মধ্য ইসরায়েলের রেহোবতের ‘ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের’ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানি হামলায় পাবলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়টির ল্যাবরেটরিতে আগুন ধরে যায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আহত হয়েছেন তিনশতাধিক। তাদের হাসপাতালে নেয়া ভর্তি করা হয়েছে।
ইরান সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্বখ্যাত ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউটে। গতকাল রোববার এ হামলায় ইনস্টিটিউটের একটি ল্যাবরেটরিতে অগ্নিকাণ্ড হয় এবং সেখানে কয়েকজন আটকা পড়েছে বলেও আশঙ্কা করা হয়। দমকল ও উদ্ধারকারী দল তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনো পর্যন্ত হতাহতের তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। রেহোভোতে অবস্থিত ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট হচ্ছে ইসরায়েলের অগ্রবর্তী বৈজ্ঞানিক ও সামরিক গবেষণার কেন্দ্র। এখানে পারমাণবিক প্রযুক্তিতে গবেষণা চলে, যা অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ড্রোন নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থায় ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সেখানে এমন সেন্সরও তৈরি হচ্ছে যা মানবত্বকের মতো স্পর্শ অনুধাবন করতে পারে, যা যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ ও সেনা কর্মকর্তা এই ইনস্টিটিউট থেকে বের হন ও পরে সেনাবাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করে দেশকে সমৃদ্ধ ও নিরাপদ রাখতে সহায়তা করেন।
ইরানের মিসাইল বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রাতের ঘুম হারাম করে ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দিকে ছুটতে হয়েছে। তবুও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতে একের পর এক হামলা হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ হামলায় যখন ইসরায়েল দিশেহারা তখন জানা গেল ইয়েমেন থেকেও মিসাইল আঘাত হেনেছে। গতকাল রোববার দ্য টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। একই সময় ইরানের হামলা চলছিল। গত বৃহস্পতিবার ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলে হামলা চালায় হুতিরা।
ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতিরা দাবি করেছে, তারা ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে তেলআবিব অঞ্চলে সংবেদনশীল ইসরায়েলি শত্রু লক্ষ্যবস্তুতে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। দাবি সত্ত্বেও সামরিক কর্মকর্তারা টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইয়েমেন থেকে কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়ে আইডিএফ অবগত নয়। কেবল শুক্রবার হুতিদের দ্বারা ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিম তীরের একটি ফিলিস্তিনি শহরে আঘাত হানে। যার ফলে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তবে ফিলিস্তিনি শহরে আঘাত হানা এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের দায় গোষ্ঠীটি স্বীকার করেনি। তারা বলেছে, ইসরায়েলের স্থাপনা ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য।
বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে গতকাল রোববার সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গত কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা দেখা গেছে। বিশেষ করে দেশটির সুপরিচিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ চাপে পড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন একজন বিশ্লেষক। দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের গবেষক মুহাম্মদ সেলুম বলেন, আয়রন ডোম মূলত স্বল্পপাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর জন্য তৈরি। কিন্তু এখন ইরান থেকে যেসব হামলা হচ্ছে, তা হচ্ছে ক্রুজ মিসাইল, ব্যালিস্টিক মিসাইল ও হাইপারসনিক মিসাইল যেগুলো আটকানো আয়রন ডোমের সক্ষমতার বাইরে। তবে তিনি জানান, ইসরায়েলের কাছে আরও উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। যেমন, ‘অ্যারো ১’ এবং ‘অ্যারো ৩’ যেগুলো প্রায় ১০০ কিলোমিটার উঁচুতে গিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে। ‘ডেভিড সিøং’ নামের আরেকটি ব্যবস্থা রয়েছে, যা মাঝারি দূরত্বে ২০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত আসা হামলাও প্রতিহত করতে সক্ষম। মুহাম্মদ সেলুম বলেন, ইসরায়েলের এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত এবং সমন্বিত হলেও তা চরম মাত্রার হামলায় ভেঙে পড়তে পারে। আর গত ৪৮ ঘণ্টায় আমরা তারই উদাহরণ দেখেছি।
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে কথা বলেছেন। ম্যাক্রোঁ তাকে উত্তেজনা এড়াতে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইরানকে পারমাণবিক আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে ইরান আলোচনার টেবিলে বসবে না। রোববারের নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা বাতিলের ঘোষণা করার পরই ইরান এই কথা জানান।
অপরদিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও জোরদারের হুমকি দিয়েছে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। গতকাল রোববার আইআরজিসির দেয়া এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলের সামরিক জ্বালানির অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। এ হামলা ইসরায়েলের আগ্রাসনের জবাবে দিয়েছে তারা। গত শুক্রবার ভোরে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর মধ্যে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়। এমনকি তেহরান শহর ও আশেপাশের আবাসিক ভবনেও বোমা ফেলে ইসরায়েল। এতে ইরানের অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাও নিহত হন। এ হামলার পরে ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েল নিজেই নিজের জন্য ‘তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি’ ডেকে এনেছে। ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের জবাবে আইআরজিসি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বড় ধরনের একটি অভিযান চালায়। তারা ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থাপনায়ও হামলা চালায়। এই অভিযানের নাম রাখা হয়েছে ‘ট্রু প্রমিজ থ্রি’। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তিনটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, দশটি ড্রোন এবং অনেক ছোট শত্রু ড্রোনকে ভূপাতিত করেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েল যদি হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে পারমাণবিক আলোচনার টেবিলে বসবে না তেহরান। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পেজেশকিয়ানকে ফোন করে উত্তেজনা কমাতে ও পারমাণবিক আলোচনা আবার শুরু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সংঘাত এড়াতে সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম থাকতে হবে। কিন্তু পেজেশকিয়ান স্পষ্ট করে বলেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার প্রশ্নই আসে না। রোববার নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পারমাণবিক আলোচনা এরই মধ্যে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার, পাকিস্তান, ভেনেজুয়েলাসহ আরও অনেক দেশ ইসরায়েলকে উত্তেজনার জন্য দোষারোপ করেছে। তারা শিগগিরই ইসরায়েলকে দখলদারি মনোভাব পরিহার করে শান্তির পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। সংঘাত বন্ধে উদ্যোগটি গ্রহণ করার চাপ দিচ্ছে তেহরানকে।
রয়টার্সের বরাতে দ্য টাইম অব ইসরায়েল জানায়, জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে ইরানের সঙ্গে তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনা করতে প্রস্তুত।
এদিকে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানার কাছাকাছি বসবাসরত নাগরিকদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। গতকাল রোববার ইসরায়েল এমন নির্দেশ জারি করে জানিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব স্থাপনায় যেকোনও সময় ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, আমরা তেহরানসহ ইরানের সব পারমাণবিক সক্ষমতা ও অস্ত্র ব্যবস্থায় হামলা করবো। এমন ঘোষণার পরই ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। গতকাল রোববার মধ্যরাতে হামলা চালানো হয়। এই হামলায় সদর দফতরের একটি ভবন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলি হামলা পর পাল্টা জবাব দিচ্ছে ইরান। একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
এর আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (আরবি ও ফার্সি ভাষায়) পোস্টে বলেন, তেহরানের আশপাশসহ ইরানের সব অস্ত্র উৎপাদন ও সহায়তাকারী কারখানাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত শুক্রবার ইরানের ওপর ইসরায়েল সর্ববৃহৎ সামরিক হামলা চালায়। ইসরায়েল জানায়, তাদের এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংস করা। দুই দেশের মধ্যে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র পাল্টাপাল্টি হামলা এখনও চলমান। ইরানের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র?্যাচেল রিভস। তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান পাঠানোর সিদ্ধান্তটি মূলত ব্রিটিশ ঘাঁটি ও সেনা সদস্যদের সুরক্ষার জন্য নেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী তা ইসরায়েলকে সহায়তা দিতেও ব্যবহৃত হতে পারে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানে হামলা বন্ধ করে, তবে আমাদের প্রতিক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যাবে। তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর থেকে এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশ্য বক্তব্য। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
 
                           
                           
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
                            
                       
     
                            
                        ইরানের হামলায় তছনছ ইসরায়েল
- আপলোড সময় : ১৫-০৬-২০২৫ ১০:১৩:৫৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৫-০৬-২০২৫ ১১:৩৭:১৪ অপরাহ্ন
 
                                  
                     
                             
                            
                             কমেন্ট বক্স 
                            
 
                          
                       
                        
                                      সর্বশেষ সংবাদ
                                
                                 
  দৈনিক জনতা ডেস্ক :
 দৈনিক জনতা ডেস্ক :  
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                