ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ , ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ইসরায়েলি হামলায় নিন্দার ঝড় ইসরায়েলের হামলায় ছিন্নভিন্ন ইরান ৬ পরমাণু বিজ্ঞানীসহ নিহত ৭৮ কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ভিড় বাস-ট্রেন-লঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে বড় পরিবর্তন নির্বাচনের ট্রেনে বাংলাদেশ তাপপ্রবাহের কবলে চুয়াডাঙ্গা গরমে হাঁসফাঁস খিলগাঁওয়ে শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার দেশে ফিরেছেন ১২ হাজার ৮৭৭ হাজি, মৃত্যু ২৬ জনের রাজধানীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত ২ বান্দরবান ঝিরিতে ভেসে যাওয়া ৩ পর্যটকের দ্বিতীয় জনের লাশ উদ্ধার কৃষিগুচ্ছের চতুর্থ ধাপের চূড়ান্ত ভর্তি ১৮ জুন নিজ এলাকায় অবরুদ্ধ নুর, সেনাবাহিনী যাওয়ার পর ফিরলেন কমলাপুরে মাইকিং করেও মাস্ক পরানো যাচ্ছে না বন্ধ হওয়ার দুদিন পর দর্শনার্থীদের জন্য আবারও উন্মুক্ত রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি ঢাকায় সংগ্রহ হয়েছে ৭৫ হাজার চামড়া ‘আওয়ামী দোসর নয়, কর্মজীবী নারীর স্বীকৃতি চাই’ টিকা থেকে বঞ্চিত দেশের বিপুল সংখ্যক শিশু ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে মাছ আহরণে প্রস্তুত জেলেরা বরগুনায় ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু উত্তরায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে হত্যা মামলার আসামি মার্জিয়া

কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ভিড় বাস-ট্রেন-লঞ্চে

  • আপলোড সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ১২:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৪-০৬-২০২৫ ১২:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ন
কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ ভিড় বাস-ট্রেন-লঞ্চে

* ঈদের ছুটি কাটিয়ে সড়কে মৃদু অস্বস্তি-যানজট সহ্য করে ফিরছে নগরবাসি
* অস্বস্তি ছিলো ঈদযাত্রা তবে কর্মস্থলে ফিরতে স্বস্তি

পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। পরিবারের সঙ্গে আনন্দমুখর দিন কাটিয়ে আবারও ছুটতে হচ্ছে কর্মব্যস্ত নগর জীবনের দিকে। অন্যান্য বছরের চেয়ে কিছুটা কম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। তবে গত দুইদিনের মতো শুক্রবারও বাস-ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। যদিও অস্বস্তি ছিলো ঈদযাত্রা তবে কর্মস্থলে ফিরতে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন অনেকে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও গাবতলী ঘুরে দেখা গেছে গ্রাম ছেড়ে আসা মানুষের ভিড়। প্রত্যেকেই পরিবারের মায়া, ঈদের আনন্দ আর গ্রামের স্মৃতি বুকে নিয়ে ফিরছেন ঢাকায়। হাতে লাগেজ, চোখে ক্লান্তি তবুও সামনে এগিয়ে চলার তাড়া যেন সবাইকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা। স্টেশনজুড়ে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। রাহাত নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ঈদের লম্বা ছুটি কাটালাম পরিবারের সঙ্গে। এবার কাজে যোগ দেয়া পালা। পরিবার রেখে কাজে ফেরা বরাবরের মতোই কষ্টের। মায়ের মুখটা বারবার ভেসে উঠে। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা তো মানতেই হবে। সদরঘাটেও দেখা গেছে একই চিত্র। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে লঞ্চে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। একই চিত্র বাস টার্মিনালগুলোতেও যাত্রীরা ফিরছেন কুড়িগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফিরোজ আলম বলেন, এই ক’দিন গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ছিলাম। এখন আবার ফিরলাম কর্মস্থলে। যানজট এড়াতে আগে আগেই ফিরলাম। ঈদের আনন্দ শেষ, এখন জীবনযুদ্ধ শুরু। পরিবার ফেলে ফিরে আসার বেদনা সবার চোখেমুখে স্পষ্ট। তবে জীবিকার তাগিদে আবার ছুটে চলা ছাড়া উপায় নেই।
রেলওয়ে, বিআইডব্লিউটিএ ও বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈদ ও ঈদ পরবর্তী যাত্রীচাপ সামাল দিতে বাড়তি ট্রেন, লঞ্চ ও বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মোতায়েন রয়েছেন। কমলাপুর স্টেশন মাস্টার মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফিরতি পথে ট্রেনের কোনো সংকট নেই। তবে ঢাকায় ফেরা এই কর্মজীবীদের ঢল আগামী কয়েকদিন চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শহর আবারও ফিরে পাচ্ছে তার চেনা গতি, কর্মচাঞ্চল্য আর ব্যস্ততা।
গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আমিনবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীতে বাসে প্রবেশ ও প্রস্থান দুই দিকেই যাত্রীর সংখ্যা প্রায় সমান। গতকাল ভোর ও রাতে কিছুটা চাপ থাকলেও সারাদিনে পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী অর্ধেকের মতো। কাউন্টার মাস্টাররা বলছেন, অনেকে এখনও ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন, আবার ফিরেও আসছেন অনেকে। গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রবেশের শুরুতেই থাকা হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার থেকে জানানো হয়, এখনো প্রচুর পরিমাণে লোকজন ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। ভোরের দিকের বাসগুলোতে যাত্রীসংখ্যা একটু বেশি থাকে। এরপর সকাল দশটা থেকে মোটামুটি বিকাল পর্যন্ত যাত্রীর চাপ একটু কম থাকে। তবে বিকাল-সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্তর গাড়িগুলোতে ঈদের ছাড়া স্বাভাবিক দিনগুলোর মতোই যাত্রী আছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। ৪০/৪৫ সিটের বাসগুলোতে ১৫-২০ জন করে যাত্রী রয়েছেন। এদিন সকাল ১০টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে শ্যামলী এন. আর. ট্রাভেলসের একটি নন-এসি বাস ছেড়ে যায়। জানতে চাইলে বাসের হেলপার নজরুল বলেন, বাসে এই মুহূর্তে ১২ জনের মত যাত্রী আছে। আরও যাত্রী পথে পাওয়া যাবে। যাওয়া আসায় যাত্রী সংখ্যা প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। আসার সময় একদম যাত্রী ভরে আসে। তবে যাওয়ার সময় কিছু সিট খালি থাকে। বাসের যাত্রী খবির আহমেদ বলেন, আমি একটি বাসায় কেয়ারটেকারের কাজ করি। ঈদে তো প্রায় সব ভাড়াটিয়ারায় চলে গিয়েছিল বাড়িতে। ফলে বাড়ি পাহারা দিতে তখন আর মালিক ছুটি দেয়নি। এখন ভাড়াটিয়ার আসতে শুরু করেছেন। এখন ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে।
এদিকে আমিনবাজার সেতু পার হয়ে কিছু সময় পরপরই ঢাকায় প্রবেশ করছে বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলো। বাসগুলো আসার পথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী নামালেও বেশি সংখ্যক যাত্রীদেরই আমিনবাজার সেতু পার হয়ে কাউন্টারগুলোর সামনে নামতে দেখা গেছে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত পাশে কাউন্টারের সামনে এসে। গাড়ির চালক জানান, গতকাল রাতে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে মাত্র ঢাকায় আসলাম। বাস যাত্রী বোঝাই ছিল। আশুলিয়া, সাভারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে তারা নেমেছে। তিনি আরও জানান, গত ২/১ দিন যাবত দিনাজপুর যাওয়ার সময়ও মোটামুটি ভলোই যাত্রী হচ্ছে। বাসের যাত্রী নীরব হাসান বলেন, আসার সময় কোন যানজটে পড়তে হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তা ফাঁকা ছিল, দূরের পথ হলেও দ্রুত আসা গেছে। আমাদের বাস ভর্তি ছিল। মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরেছেন মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাবা-মা ও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে গিয়েছিলাম। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও ঈদ করেছি, কোরবানি দিয়েছি। এখন চাকরিতে যোগ দিতে ফিরতে হলো ঢাকায়। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ফিরেছেন আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের একদিন আগে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। আজ ফিরে এসেছি। আসার পথে তেমন জ্যাম ছিল না। চাকরিজীবী সাব্বির আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটি শেষ। কাজে যোগ দিতে ফিরে এসেছি ঢাকায়।  পল্লবীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, এবার দীর্ঘ সরকারি ছুটি থাকলেও বেসরকারি অফিসের ছুটি একটু কম ছিল। তাই চাইলেও বেশি দিন বাড়িতে থাকার উপায় ছিল না। কাজে যোগ দিতে ফিরে আসতে হয়েছে। হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আবদুল আওয়াল বলেন, বাড়িমুখী যাত্রীর সংখ্যা এখন কম। আমাদেরও অল্প যাত্রী নিয়েই বাস ছাড়তে হচ্ছে। তবে ঢাকায় যে বাসগুলো ফিরছে, সেগুলোর কোনোটিই খালি আসছে না।
গত ২৪ ঘণ্টায় টোল আদায় দুই কোটি ৭৯ লাখ : দীর্ঘ যানজটের অবসান ঘটিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে বাসের ছাদ, পশুবাহী ট্রাক-পিকআপে নারী ও শিশুদের নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে। ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়ীতে অপেক্ষা করেছেন ঘরে ফেরা উত্তরের মানুষ। তবে ঈদ উদযাপন শেষে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে ফিরছেন স্বস্তিতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে নেই যানবাহনের ধীরগতি বা যানজট। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ঢাকাগামী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কোথাও কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। ঈদ যাত্রায় বাড়ি ফেরার সময় এবার অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, অপর্যাপ্ত যানবাহন, সেতুর উপর দুর্ঘটনা, টোলপ্লাজায় বিকল টোলমেশিন, দীর্ঘদিনের গলার কাটা এলেঙ্গা হতে যমুনা সেতু পূর্ব পর্যন্ত অসমাপ্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তা, ঢাকা থেকে আসা লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি মহাসড়কে বিকল, বিকল যানবাহন তড়িৎ অপসারনে অপারগতাসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। ফলে ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তি হয়েছে। তবে ফিরতি পথে এখন পর্যন্ত স্বস্তি রয়েছে।
এদিকে যমুনা সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ হাজার ৫৩৯ যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৭৯ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা। তবে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, যমুনা সেতুর দুই পাশ দিয়ে ৯টি করে মোট ১৮ বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। এছাড়া মোটরসাইকেলের জন্য দুইপাশেই দুটি আলাদা বুথ রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি আজ  ১৪ জুন পর্যন্ত হওয়ায় এখন পর্যন্ত রাজধানীমুখী যাত্রা রয়েছে স্বস্তিকর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। মানুষজন আরও দুই তিন দিন আগে থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন। ১৫ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্ম দিবস শুরু হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স