
ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির
গণপরিবহনে নৈরাজ্য, দাপটে চলছে লক্কড় ঝক্কড় বাস
- আপলোড সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ০৫:৪৮:২৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ০৫:৪৮:২৪ অপরাহ্ন


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর সবারই ধারণা ছিল গণপরিবহনে সবধরনের নৈরাজ্য-ক্ষমতার দাপট কিছুটা হলেও কমে আসবে। কিন্তু তাদের সেই ধারনাকে পাল্টে দিয়ে দেশে গণপরিবহন চলার ক্ষেত্রে আরেকধাপ বেড়েছে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা। রাজধানীজুড়ে দাপটের সঙ্গে চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস। যার মধ্যে অনেক আগেই অর্ধেকের বেশি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাড়া নিয়েও রয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাড়াবাড়ি। দূরপাল্লার বাসগুলোর মান কিছুটা ভালো থাকলেও রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে যাত্রীসেবা বা যাত্রী অধিকার এখনো উপেক্ষিত। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এদিকে ঈদযাত্রায় সব পথে যাত্রী দুর্ভোগ, দুর্ঘটনা, যানজট ও মানুষের ভোগান্তি কমাতে মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধের দাবি জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল সোমবার সকালে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান সংগঠনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জকরিয়া ও মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, প্রতিবছর ঈদে ফিটনেসবিহীন, লক্কড়-ঝক্কড় বাস, ট্রাক, লেগুনা, টেম্পু, মাইক্রোবাস, কার, নছিমন-করিমন ও সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাস দূরপাল্লার বহরে যাত্রীপরিবহনে নেমে পড়ে। মেয়াদ উত্তীর্ণ নৌযান দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে। রেলপথেও মেয়াদ উত্তীর্ণ কোচ, ইঞ্জিন, রেলপথের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও লাইনচ্যুতির ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি যানজট ও ভোগান্তি তৈরি করে। এবারের ঈদে সকলপথে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সারাদেশে প্রায় ৫ লক্ষাধিক যানবাহনের ফিটনেস নেই। ৫ লাখ ইজিবাইক, ৬০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা,৭ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ১ লাখ নছিমন করিমন, ২০ লাখ মোটরসাইকেল প্রতিদিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করছে। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে পশুরহাট, পশুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে যানবাহন দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের গতি কমানোর পাশাপাশি যানজটের সৃষ্টি করছে। এসব যানবাহন জাতীয় মহাসড়ক থেকে জরুরি ভিত্তিতে উচ্ছেদ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কের প্রতি ইঞ্চি বেদখলমুক্ত করে বাধাহীন যানবাহন চলাচলে উদ্যোগ নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ আনফিট নৌযানের চলাচল বন্ধ করা, প্রতিটি নৌযানের লোডলাইন অনুযায়ী অতিরিক্ত যাত্রীবহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। সবপথের প্রতিটি রুটে যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা বিধান করা, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, ও রেলস্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা, ব্যবহার উপযোগী প্রয়োজনীয় শৌচাগারের ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিধান নিশ্চিত করা জরুরি। বাসা থেকে বের হলেই পথে পথে ছিনতাই, অজ্ঞানপাটি, মলমপাটি, টানাপাটিসহ যে কোনও দুষ্কৃতিকারীদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো, গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীজুড়ে দাপটের সঙ্গে চলা লক্কড়-ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তবে পরিস্থিতির উন্নয়নে খুব বেশি কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৪ সালের হিসেবে, সারা দেশে গণপরিবহনের প্রধান বাহন বাসের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৪৪ হাজার ৫০৯টি। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৫টি বড় বাস এবং মিনিবাস ২৮ হাজার ৪৫৪টি। তবে দেশে নিবন্ধিত (রেজিস্ট্রেশন) বাসের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৮৪২টি বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে কেবল রাজধানী ঢাকায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার সড়কে যানবাহন চলাচলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। একটি বিআরটিএ, অন্যটি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে বিআরটিএ ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। বত্রিশটি বিষয় পর্যবেক্ষণের পর তাদের ফিটনেস সনদ দেয়ার কথা থাকলেও জীর্ণদশার ভাঙাচোরা বাসগুলো নিয়মিত সনদ পেয়ে যাচ্ছে। আবার রাস্তায় নামার পর লক্কড়-ঝক্কড় বা ফিটনেসহীন বাস জব্দ করার কথা থাকলেও ট্রাফিক বিভাগ থেকেও সেটি খুব একটা দেখা যায় না। বরং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই বীরদর্পে চলছে এসব বাস। তবে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত বাস ও মোটরবাইকসহ নানা ধরনের যানবাহনে মামলা ও জরিমানার কাজগুলো করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহন খাতে যাত্রীসেবা, শৃঙ্খলা-নিরাপত্তাসহ সবকিছুই আগের মতো চলছে। কোথাও সেভাবে পরিবর্তন হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেড়েছে। এর মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া পরিবহনকেন্দ্রিক যে চাঁদাবাজি হতো সেগুলোর কেবল হাতবদল হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বরাবর একইকথা বলছেন। তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন ও নানা অনিয়মে চলাচলকারী বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকার ও বাইকসহ এ ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাজধানীর ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিতভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে গত দুই দিনে (১৬ ও ১৭ জানুয়ারি) ৩ হাজার ২৫১টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এ ছাড়াও অভিযানকালে ১০২টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৪৩টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ