ঢাকা , বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫ , ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ক্ষুধার্ত ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়বে বাজেট ব্যবসাবান্ধব গ্যাস কূপ খনন বাড়াতে কেনা হবে নতুন রিগ ঈদ উপলক্ষে সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করলো রেলওয়ে ঈদে অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান চাঁদাবাজি ও এক হাটের পশু অন্য হাটে নিলে কঠোর ব্যবস্থা- র‌্যাব শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ২৫ পুলিশভ্যানে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা ৪ গাড়ি খাদে ঋণের বোঝা কমাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য কমাল সরকার ঋণের বোঝা কমাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য কমাল সরকার এক টাকা আয় করতে আড়াই টাকা ব্যয় তামান্নার উজ্জ্বল ত্বকের গোপন টিপস এক সিনেমায় দুই ক্লাইম্যাক্স! পাকিস্তানে টিকটকারকে গুলি করে হত্যা এবার এক সিনেমাতেই সাতটি চরিত্রে দেখা যাবে ইধিকাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় অভিনেত্রী তানিন সুবহা এবার ঈদে মুক্তি পাচ্ছে নতুন ৭ সিনেমা এবার ঈদে মুক্তি পাচ্ছে নতুন ৭ সিনেমা প্রকাশ পেলো ‘তাণ্ডব’ এর ২য় গান বিশেষ ভাতা পাবেন হাওর-চর দ্বীপ এলাকার শিক্ষকরা
২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি

টেকসই অর্থনীতির বাজেট

  • আপলোড সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ১২:৫৩:৪০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৩-০৬-২০২৫ ১২:৫৩:৪০ পূর্বাহ্ন
টেকসই অর্থনীতির বাজেট
* রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা * বাজেটে ভ্যাটের প্রভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়বে মধ্যবিত্ত * করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত, বাড়তি সুবিধা পাবে জুলাই যোদ্ধারা * স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ৫০১ কোটি টাকা, সার্বজনীন সেবায় জোর * সুদ পরিশোধে ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা * কারিগরি শিক্ষায় উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে বাজেটে বিশেষ জোর

বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জাতির সামনে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় জাতির সামনে এই বাজেট তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। সম্পদের সুষম বণ্টন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এবারের বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য বলে জানান তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আয় ও সরকারি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটা যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নও এ বাজেটের অন্যতম উদ্দেশ্য। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি। বাজেটে ভ্যাটের প্রভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়বে মধ্যবিত্ত। করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত, বাড়তি সুবিধা পাবে জুলাই যোদ্ধারা। স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ৫০১ কোটি টাকা, সার্বজনীন সেবায় জোর দেয়া হয়েছে বাজেটে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণসহ মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, কর অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা, করজাল সম্প্রসারণ, বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবায় যথাসম্ভব একই হারে ভ্যাট নির্ধারণের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত কোনো বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। আগামী অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে উল্লেখ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেট থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
এদিকে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অংকের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।  ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বা জিডিপির ৯ শতাংশ রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের ব্যয়ের খাতের মধ্যে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ ব্যয় ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদ্যুৎ ও সার বাবদ ভর্তুকি দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের উপর ভরসা করছে সরকার। এছাড়া বিশাল এ ঘাটতি পূরণে সরকার কোন খাত থেকে কত টাকা ঋণ নেবে তারও একটি ছক তৈরি করেছে। ছক অনুযায়ী, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা, এছাড়া বৈদেশিক ঋণ হিসাবে নেবে ৯৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা আছে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার নিতে চায় ব্যাংক খাত থেকে, যার পরিমাণ ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এরপর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে।
অপরদিকে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের মাঝে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বাজেট টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬২%। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে। এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেয়া হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় বেশকিছু পণ্যের ওপর কর, শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এর প্রভাবে বাজারে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা মধ্যবিত্তের জন্য দুঃসংবাদ। যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রিজ, এসি, রড, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন, কসমেটিক্স পণ্য, ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য প্রভৃতি। মাত্র ছয় মাস আগে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারকদের ওপর কর্পোরেট কর দ্বিগুণ করার পর এবার তাদের পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে সরকার। ফলে দেশীয় উৎপাদনকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিতে পারে। বর্তমানে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারের উৎপাদন পর্যায়ে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে। তবে এনবিআর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে। সব মিলেয়ে ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারের দাম বাড়তে যাচ্ছে। এছাড়া এবারের বাজটের ফলে বাড়ি নির্মাণের খরচ বাড়বে। পরোক্ষভাবে নির্মাণ শিল্পের অন্যতম উপাদান হলো রড। রাজস্ব আদায়ে প্রস্তাবিত বাজেটে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে এটি আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে শুল্ক-ভ্যাট ৪০ শতাংশের বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিতে শুল্ক ২০-২৩ শতাংশ ও উৎপাদনে ভ্যাট ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বাতিল হতে পারে বিদ্যমান ফিক্সড আমদানি শুল্ক। শুল্ককর বাড়ানো হলে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি টনে রডের দাম বাড়তে পারে প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা। সব মিলিয়ে বাড়ি করাসহ সব ধরনের নির্মাণ কাজের খরচ বাড়বে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। তাদের জন্য মোটরসাইকেল ক্রয় এবং পরে সার্ভিসিংয়ের মাধ্যমে মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দাম বাড়বে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৩ শতাংশের অতিরিক্ত সব আমদানি, নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু এতে মোটরসাইকেলের দাম সেই অর্থে কমতে দেখা যায়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক-ভ্যাট কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ২০১৮ সালের পর দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদনে ১০টির বেশি কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের হোন্ডা, ইয়ামাহা ও সুজুকি এবং ভারতের উত্তরা মোটরস, টিভিএস অটো ও হিরোর মতো প্রতিষ্ঠান। দেশীয় ব্র্যান্ড হিসেবে রয়েছে রানার অটোমোবাইলস।
অন্যদিকে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজনে হ্রাসকৃত ভ্যাটহার বাড়ানো হচ্ছে। উৎপাদনের ক্যাটাগরিভেদে ২ থেকে আড়াই শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এর ফলে দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মধ্যবিত্তের অনেকেই কম টাকায় মধ্যে হওয়ায় দেশি তৈরি মোবাইল কিনে থাকেন। বাজেটের পর এসব মোবাইল ফোনের দাম বাড়বে। বাজটে সব ধরনের কসমেটিক্স পণ্যে বাড়তি খরচ গুণতে হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য। নারীদের সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহৃত লিপস্টিক, লিপলাইনার, আইলাইনার, ফেসওয়াশ, মেকআপের সরঞ্জাম আমদানির ন্যূনতম মূল্য বিভিন্ন হারে বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি কেজি লিপস্টিক আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার আছে। সেটি বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে। একইভাবে অন্য সব কসমেটিক্সের ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ হবে ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ান টাইম) প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে চা-কফি কাপ, প্লাস্টিক প্লেট ও বাটির মতো পণ্যের ওপর ভ্যাট বেড়ে ১৫ শতাংশে পৌঁছাবে। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এসব পণ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত পরিবেশবান্ধব এবং প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি পণ্যের ওপর কোনো ভ্যাট আরোপ করা হবে না। পরিবেশ সুরক্ষায় এমন প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মধ্যেবিত্তের ব্যবহারের গামছা, লুঙ্গিসহ পোশাকের দাম বাড়তে যাচ্ছে। দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত সুতার ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। প্রতি কেজি কটন সুতা ও ম্যান মেইড ফাইবারে তৈরি সুতার সুনির্দিষ্ট কর তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হচ্ছে। এতে দেশীয় সুতায় তৈরি গামছা, লুঙ্গিসহ পোশাকের দাম বাড়তে পারে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬২%। এই ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার তিন লাখ ৫০ হাজার টাকাই রাখা হয়েছে এবারও। তবে পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধারা। এক বছর পর অর্থাৎ ২০২৬-২৭ করবর্ষে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা পাবেন তারা।
তবে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ সামান্য হলেও বেড়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৫০১ কোটি টাকা বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। গতকাল সোমবার বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনায় এসব তথ্য উঠে আসে। জাতির সামনে তিনি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি নাগরিককে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে সেবার পরিধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং দক্ষ জনবল নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের শূন্য পদ পূরণে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, ফার্মাসিস্ট ও স্বাস্থ্য সহকারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন পদ সৃষ্টির জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন অর্থবছরে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী কেয়ারগিভার (সেবাপেশাজীবী) প্রশিক্ষণের উদ্যোগ। উন্নত দেশগুলোতে এই খাতে চাহিদা বাড়ছে। সেই চাহিদা পূরণে দেশীয় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে একদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, অন্যদিকে প্রবাস আয়ের নতুন দ্বারও খুলবে। এছাড়া নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি কোর্স চালু এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে একটি ‘নার্স শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলেও বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শুধু ঋণের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা, যা বাজেটের মোট ব্যয়ের ১৫.৪৪ শতাংশ। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে নেয়া ঋণের সুদ মেটাতে খরচ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের সময় পর্যন্ত মোট ১৮ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ রেখে যায়। এ ঋণ পরিশোধে এখন ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সুদ পরিশোধে ব্যয়ও বেড়েছে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ উৎস— সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বেশি থাকায় সুদের বোঝাও ভারী হচ্ছে। আগামীতে রাজস্ব আদায়ের হার না বাড়লে ভবিষ্যতে সরকারের আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার চিন্তা রয়েছে সরকারের। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস হতে পূরণ করা হবে।
শক্তিশালী ও টেকসই অর্থনীতির জন্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মোপযোগী শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলা এবং যুবদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও প্রযুক্তি দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলেও প্রত্যাশা জানানো হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে কারিগরি শিক্ষায় এনরোলমেন্টের হার ১৯ শতাংশ। ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ২০ শতাংশে উন্নীত করতে প্রতিটি বিভাগীয় পর্যায়ে মহিলা পলিটেকনিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জেলা পর্যায়ে পলিটেকনিক এবং উপজেলা পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ১ হাজার ১৩৫টি মাদরাসা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫১৩টি বহুতল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। ৪৯৩টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, ইবতেদায়ী পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদরাসাগুলোর এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি। তিনি আরও জানান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স