
ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ
- আপলোড সময় : ০২-০৬-২০২৫ ০৪:০১:২১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৬-২০২৫ ০৪:০১:২১ অপরাহ্ন


* ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হবে
* করের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা
* বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা
* মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা
* জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে
* বাজেটের মূল লক্ষ্য রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ
* শঙ্কা থাকছে খরচ বৃদ্ধির
দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরেই মন্দাক্রান্ত সময় পার করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। ডলার সংকট, রিজার্ভের বড় ক্ষয়সহ বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিপদে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আগামী বাজেটে সাধারণ করদাতাদের আয়করে বড় কোনো ছাড় দেয়ার পরিকল্পনা নেই সরকারের। ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমায় কোনো পরিবর্তন আসছে না। অর্থাৎ করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হবে। করের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজেটে। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা এই বাজেটে। এছাড়া এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সক্ষমতা বাড়াতে করনীতিতে এসেছে বড় পরিবর্তন। শিল্পখাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ ৩০ জুনের পর আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।
জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটের মূল লক্ষ্য রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে ঘাটতি কমানো এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ করা। প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়ানোর একগুচ্ছ প্রস্তাব এবং ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে দেশের সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ী মহলের ওপর চাপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেয়া হলেও এতে শিল্প খাত ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। এমনিতেই দীর্ঘ দুই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ মাস মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। বর্তমানে তা ৯ শতাংশে নামলেও তাতেও স্বস্তি নেই। সীমিত আয়ের মানুষ এখনও ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। চলমান খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে ২০২৫ সালে আরও ৩০ লাখ মানুষ অতিদারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। এই বাস্তবতায় আজ সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে আজ বিকেল ৩টার দিকে বাজেট ঘোষণা করবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম হলেও সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতার পাশাপাশি বর্তমানে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও খরা চলছে। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থায় রাজস্ব কর্মকর্তারা। এ পরিস্থিতিতেও এনবিআরকে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এনবিআর ও কর-বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ পালিয়ে যাওয়া অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দেয়া বাজেটের মতোই ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের পাশাপাশি দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এ ঘাটতি পূরণ করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনার গড়ে তোলা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় অপ্রয়োজনীয় অনেক মেগা প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। উন্নয়নের কথা বলে ঋণনির্ভর সেসব প্রকল্প নেয়া হলেও এক্ষেত্রে লুটপাটই মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বলে অন্তর্বর্তী সরকারের তৈরি করা শ্বেতপত্রে তুলে ধরা হয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী বাজেটে এডিপি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের এডিপি বরাদ্দও ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে পরিচালন ও নন-এডিপি খাতে। চলতি বাজেটে এ খাতে ৫ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, সংশোধিত বাজেটে যা কমিয়ে ৫ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়।
রাষ্ট্রের নাগরিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সুরক্ষা, মৌলিক সেবার নিশ্চয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সর্বোপরি বৈষম্য প্রশমনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রণীত বাজেটগুলো পরিচিত জনকল্যাণমুখী বাজেট হিসেবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ বহু বছর ধরে জনকল্যাণমুখী বাজেটবঞ্চিত হয়ে আসছে। এতদিন বাজেট মানেই ছিল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে জনগণের অর্থের যথেচ্ছ তছরুপ। আর পরিচালন ব্যয়ের নামে সরকারি কর্মকর্তাদের অপব্যয় ও দুর্নীতি। অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে সুযোগ ছিল জনকল্যাণমুখী বাজেট দিয়ে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার, দেশী-বিদেশী ঋণনির্ভর ঘাটতি বাজেট থেকে বেরিয়ে আসার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বৈষম্য কমিয়ে আনার। কিন্তু এখন পর্যন্ত যতটুকু তাতে স্বস্তির কোনো আভাস মেলেনি। রাজনৈতিক কোনো চাপ না থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার জনতুষ্টির বাজেটের দিকেই হাঁটছে।
গত দেড় দশকজুড়ে ঘোষিত বাজেট ছিল অনেকটাই ঋণনির্ভর। প্রতিবারই আকার বাড়িয়ে বাজেট ঘোষণা করা হলেও কোনো অর্থবছরেই তার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ছিল ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল, বছর শেষে এর ১৪-১৫ শতাংশ অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। পরে এ অবাস্তবায়িত বাজেটের অংশ আরো বড় হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করায় সরকারের ঋণের বোঝা কেবলই স্ফীত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছরের জুন শেষে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ছিল অন্তত ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। অথচ ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন, তখন সরকারের ঋণ স্থিতি মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা ছিল। সে হিসাবে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলেই সরকারের ঋণ স্থিতি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বেড়েছে, যা সরকারের মোট ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশ। সরকারের নেয়া এ ঋণের সুদ পরিশোধেই চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৯৬ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৫৩১ কোটি টাকার সুদ পরিশোধ হয়েছে দেশী উৎস থেকে নেয়া ঋণের বিপরীতে। বাকি ১৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকার সুদ বিদেশী ঋণের জন্য পরিশোধ করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাজেটের আকার দ্বিগুণ-তিন গুণ হলেও আনুপাতিক হারে বরাদ্দ কমেছে জনগুরুত্বপূর্ণ খাত স্বাস্থ্য ও শিক্ষায়। শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশের কাছাকাছি। অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দামও। জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা এসব গণদ্রব্যের দাম কমানোর সুযোগ ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। অথচ বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেল ও পানির মতো গণদ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ চলছে আগের পদ্ধতিতেই।
২০০৭ ও ২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ ও ব্যাপ্তি বাড়িয়েছিলাম। স্থানীয় শিল্প সংরক্ষণে শুল্ক কাঠামোয় পরিবর্তন ও কিছু ক্ষেত্রে করহার কমানো হয়েছিল। সরকারের অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করেছি। আমার সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। এখন দেশের ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজার খুবই দুর্বল। আবার সরকারের ঋণের বোঝাও অনেক বড়। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষ। তাই মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও একই নীতি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে নীতি সুদহার উন্নীত করা হয়েছে ১০ শতাংশে। যদিও এখন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি।
অতিসংকোচনমূলক মুদ্রানীতির প্রভাবে বেসরকারি খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। ঋণের সুদহার উঠে গেছে ১৫-১৬ শতাংশে। আর তৈরি পোশাক খাতসহ প্রায় সব শিল্পেই অসন্তোষ ও স্থবিরতা চলছে। গত দেড় দশকে দেশে পরিবহন ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। এক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল বিপুল অংকের চাঁদাবাজির। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ শ্রমিক নেতা পালিয়ে গেলেও পরিবহন ভাড়া কমেনি। এখনো বহাল রয়েছে জমি, প্লট-ফ্ল্যাটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগও। আগামী অর্থবছরের বাজেটেও একই সুযোগ বহাল রাখা হচ্ছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।
সাধারণ মানুষের জন্য বাজেটে বড় ধাক্কা হতে যাচ্ছে ভ্যাট বৃদ্ধি ও কর কাঠামোর রদবদল। এই বাজেটের প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষ করে প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, হাইজেনিক সামগ্রী এবং টয়লেটসামগ্রীর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলেও করহার বৃদ্ধির কারণে সব শ্রেণির করদাতার ওপর করের চাপ বাড়বে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহার ও কর বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের জীবনযাত্রাকেও ব্যয়বহুল করে তুলবে। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শিল্প ও ভোক্তা সুরক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো বাজেট ঘোষণা করেনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত যেটুকু আভাস পাওয়া গেছে, তাতে এটি গতানুগতিক একটি বাজেটই হতে যাচ্ছে। বিগত সময়ে আমরা যেসব অবাস্তব বাজেট দেখেছি, এটি তারই ধারাবাহিকতা হবে বলেই মনে হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে সরকারের কাছে যে বিপুল প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছিল, সেটি অন্তত অর্জিত হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আগে যেভাবে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতো, এবারের বাজেটেও একইভাবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা চলছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। নতুন বিনিয়োগ কিংবা কর্মসংস্থানের পরিস্থিতিও খুবই খারাপ। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা উচ্চ মূল্যস্ফীতিও চলমান। অথচ এনবিআরকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়ার ক্ষেত্রে এগুলোকে বিবেচনায়ই নেয়া হয়নি। একটি স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এনবিআরকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হতো, সেভাবেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। অতীতের মতো আগামী অর্থবছরের বাজেটও অবাস্তবায়িতই থেকে যাবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, এবারের বাজেট দর্শন হলো একটা সমতাভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলা। আমাদের লক্ষ্য হলো একটা বাস্তবভিত্তিক বাজেট করা। সীমিত সম্পদ নিয়ে উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়ন করব না। বড় কোনো প্রকল্প নেয়া হবে না। মানুষের প্রত্যাশা বাড়াতে চাই না। এবারের বাজেট দর্শন হলো একটা সমতাভিত্তিক কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলা। এতদিন আমরা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির কথা বলে এসেছি, কিন্তু এ প্রবৃদ্ধির সুফল জনগণ ন্যায্যভাবে পায়নি। কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হওয়ার পথে আমরা এগোতে পারিনি। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দিতে চাই। তরুণ ও যুবকদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা মনোযোগ দিতে চাচ্ছি, উন্নয়নশীল দেশে যা খুবই প্রয়োজন। এসব প্রেক্ষিত মাথায় রেখে নিজস্ব সম্পদ এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ