ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকারি চাকরি আইন বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভে কর্মচারীরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড ৬ জনের যাবজ্জীবন বহাল কালো টাকা সাদা করার বিধান সংস্কারের সম্পূর্ণ বিপরীত-টিআইবি দূরত্ব ঘুচিয়ে চমৎকার জুলাই সনদ তৈরির প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার সারাদেশে একযোগে ২৫২ বিচারককে বদলি টেকসই অর্থনীতির বাজেট এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা

ঈদের পর রাজপথ কাঁপাবে জামায়াত

  • আপলোড সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০২:৩৯:০২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৬-২০২৫ ০২:৩৯:০২ অপরাহ্ন
ঈদের পর রাজপথ কাঁপাবে জামায়াত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার। আওয়ামী শাসনের প্রায় পুরো সময় সরকারের ব্যাপক দমন-পীড়নের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এবার সে অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে রাজধানীতে বড় সমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি। হাসিনা সরকারের পতনের পর আগামী ২১ জুন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদন করেছে জামায়াত। গতকাল শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, আগামী ২১ জুন দুপুর ২টায় রাজধানীতে আমরা জনসভা করব। প্রাথমিকভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য ডিএমপির কাছে আবেদন করা হয়েছে। সমাবেশে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। সভায় সদ্য কারামুক্ত এটিএম আজহারুল ইসলামের উপস্থিত থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন জামায়াত নেতারা। জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে জনসভার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান নেতৃবৃন্দ। জনসভায় সমসাময়িক রাজনীতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও জামায়াতের অবস্থান জানানো হবে বলে নিশ্চিত করেছে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। জুবায়ের জানান, এখনো স্থান নির্ধারণ চূড়ান্ত হয়নি। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সমাবেশ আয়োজনের স্থান বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষেই পরবর্তী প্রস্তুতি ও আনুষ্ঠানিক ঘোষণাগুলো দেয়া হবে। আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের জনগণকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ এক মোড় হবে। জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, এই জনসভাকে ঘিরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে দলীয়ভাবে সাংগঠনিক প্রচার, জনমত গঠনের কাজ এবং কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশকে ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি ও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে রাজনৈতিক বার্তা পৌঁছানোর একটি ঐতিহাসিক সুযোগ’ হিসেবে বিবেচনা করছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে বিরাজ করছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও নতুন সম্ভাবনার যুগ। রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিএনপি ও বিভিন্ন বাম-ডানপন্থী দল রাজধানীতে একাধিক জনসমাবেশ করেছে। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে নিষিদ্ধ রাজনীতির ধারা পেরিয়ে জামায়াত এই প্রথম রাজধানীতে একটি বড় সমাবেশ করতে যাচ্ছে, যা তাদের রাজনৈতিকভাবে পুনরায় দৃশ্যপটে আবির্ভূতেরই ইঙ্গিত দেয়। এ বিষয়ে কথা হয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিগত দিনে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের কীভাবে অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে সেই চিত্র দেশবাসীকে জানাতে আমরা এ জনসভার আয়োজন করেছি। সেখানে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দীর্ঘদিন কারাবাসের পর আদালতের রায়ে মুক্ত এটিএম আজহারুল ইসলাম উপস্থিত থাকবেন। একইসুরে কথা বলেছেন দলটির অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, দেশের বিচার ব্যবস্থাকে কীভাবে ধ্বংস করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে এবং অন্যায়ভাবে আমাদের নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামসহ অনেককে কারা অন্তরীণ রাখা হয়েছিল সেই ইতিহাস জাতিকে জানাতে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সমসাময়িক রাজনীতি এবং জামায়াতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করা হবে। জন-ভোগান্তির কথা চিন্তা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সমাবেশের মাধ্যমে জামায়াত নিজেকে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় অভিযোজিত করার পাশাপাশি অতীতের বিতর্কিত অধ্যায় থেকে বের হয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালাবে। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে দলটি কেবল রাজধানীতে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি জানাতেই চায় না, বরং এটি হতে পারে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের সূচনা। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনায় রেখে জামায়াত এখন থেকে মাঠে সক্রিয় থাকতে চায়। তারা দেশের জনগণের কাছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ইসলামী রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করবে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের সামনে এখনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একদিকে দলটির অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য জনমনে কিছু নেতিবাচক ধারণা রয়ে গেছে, অন্যদিকে ২০১৩ সালে দলীয় নিবন্ধন বাতিলের পর থেকে তাদের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যদিও জামায়াত এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নতুন করে নিবন্ধনের জন্য আইনি লড়াই শুরু করেছে, সেই প্রক্রিয়ার ফলাফল এখনও অনিশ্চিত। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কর্তৃপক্ষের কড়া নজর থাকবে। অতীতে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে যেসব বিতর্ক ছিল, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়েও প্রশাসন সতর্ক থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ২১ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের এই ঘোষণা রাজধানী ঢাকায় এক নতুন রাজনৈতিক আবহের জন্ম দিতে পারে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ফাঁকা হয়ে পড়া রাজধানীর রাজপথ আবারো নানা রাজনৈতিক শক্তির মুখোমুখি অবস্থান এবং নতুন জোট ও মেরুকরণের দিকে এগোতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর এই উদ্যোগ শুধু তাদের সংগঠন পুনর্গঠনের অংশ নয়, বরং এটি হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এখন দেখার বিষয়, সরকার প্রশাসনিক দিক থেকে এই সমাবেশের অনুমতি দেয় কিনা এবং সেই সমাবেশ কতটা সুশৃঙ্খল ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স