ঢাকা , সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫ , ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নগর ভবন খুলে দেবেন ইশরাকের সমর্থকরা এভাবে চলতে থাকলে কিয়ামত পর্যন্ত শতভাগ ঐকমত্য হবে না : নুর কিছু বিষয় ‘অমীমাংসিত’ সব দলকে ছাড় দেয়ার আহ্বান আলী রিয়াজের প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে একমত জামায়াত-এনসিপি সায় নেই বিএনপির সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ল ১০ হাজার কোটি টাকা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্র কি ইরাকের ভুল এবার ইরানে করছে-প্রশ্ন চীনের আমরা ইসরায়েলের জন্য সব হুমকি গুঁড়িয়ে দিয়েছি-ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ আগ্রাসন এর নিন্দা জানিয়েছে হামাস যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সংঘাতের তীব্রতা বাড়ার শঙ্কা জাতিসংঘের চট্টগ্রামে করোনায় ২ জনের মৃত্যু কুমিল্লায় কোভিড ও ডেঙ্গুতে ঝরলো ২ প্রাণ সড়কে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ঢাকা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সবার মধ্যে স্বস্তি এসেছে- আমির খসরু ভারতীয় ‘রিপাবলিক বাংলা’ টিভির সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টের রুল ১৮ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করলো বিএসএফ

ফেনীর ১৮০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংকট

  • আপলোড সময় : ২৩-০৫-২০২৫ ০৯:৪৪:২৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৩-০৫-২০২৫ ০৯:৪৪:২৪ অপরাহ্ন
ফেনীর ১৮০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংকট
ফেনী থেকে মফিজুর রহমান
ফেনীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর সংকট দেখা দিয়েছে। নানা উদ্যোগ নিলেও বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির হার বাড়ছে না। শিক্ষকরা বলছেন, মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেনে অভিভাবকদের আগ্রহই এর প্রধান কারণ। তবে অভিভাবকদের দাবি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মান ভালো হওয়ায় তারা সেদিকেই ঝুঁকছেন। জেলার ছয় উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ফেনীর ৫৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮০টিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০০-এর নিচে। এর মধ্যে ১২টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মাত্র ৫০-এর নিচে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ৩ থেকে ১২ জন শিক্ষক থাকলেও মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। তবে এসব বিদ্যালয়ের সরেজমিন চিত্র আরও খারাপ। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৪৬ শিক্ষার্থী, যা গত বছরের তুলনায় ১১ হাজার ৬২৪ জন কম। তবে উপজেলা পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা মাত্র ৭২ হাজার ৭৯৫ জন। ফলে জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যের সঙ্গে মিলছে না ৯৯ হাজার ১৫১ শিক্ষার্থীর হিসাব। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ৯ এপ্রিলের আপডেটকৃত তথ্য বলছে, ফেনী সদর উপজেলায় ৭৪ হাজর ৪৮১ জন, সোনাগাজী উপজেলায় ২৯ হাজর ৯২৮ জন, দাগনভুঁঞা উপজেলায় ২৭ হাজার ৩৮৪ জন, ফুলগাজী উপজেলায় ১৫ হাজার ৩৩৩ জন, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১১ হাজার ৫০ জন, পরশুরাম উপজেলায় ১৩ হাজার ৭৭০ শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাবে, ফেনী সদর উপজেলায় রয়েছে ২৩ হাজার ৩৮৪ জন, সোনাগাজীতে ১৩ হাজার ৬৬৯ জন, দাগনভুঁঞায় ১৬ হাজার ৮২২ জন, ফুলগাজীতে ৬ হাজার ৭৮৫ জন, ছাগলনাইয়ায় ৪ হাজার ৮১৫ জন ও পরশুরাম উপজেলায় ৭ হাজার ৩২০ শিক্ষার্থী। কাজে আসছে না ১৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ। সম্প্রতি সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অপ্রতুল। যেমন: ফুলগাজীর দেবীপুর ফেরদৌস আক্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২২ জন ছাত্রছাত্রী থাকলেও তৃতীয় শ্রেণির কেউ স্কুলে নেই। সোনাগাজীর পূর্ব বড়ধলী বিদ্যালয়ে পাঁচ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ২৭; এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র ৩ জন শিক্ষার্থীকে চোখে পড়ে। উপকুলীয় চরাঞ্চলের শিশুরা তাদের বাবার সঙ্গে পরিবারের কাজ করে থাকে। কিছু পরিবার আবার ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করেন। ত্ইা সরকারি এই বিদ্যালয়গুলো খালি পড়ে থাকে।  ফেনী শহরের রামপুরের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে আমি শাহীন একাডেমিতে দিয়েছি, সেখানে পড়ালেখা ভালো হয়।’ পাশেই রামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থাকলেও সেখানে কেন দেননি—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। শিক্ষকরা মনোযোগ দিয়ে পড়ান না। ফুলগাজীর দেবীপুর ফেরদৌস আক্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জীবন চন্দ্র দাস বলেন, ‘বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক, দূরত্বের কারণে শিক্ষকরা আসতে চান না।’ বিদ্যালয়ে মাত্র ২২ শিক্ষার্থী থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিবাবকরা মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেনমুখী। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব মহি উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘অনেক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি কিন্ডারগার্টেন ও মাদরাসা থাকা, ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক পাঠ্যবই ও ধর্মীয় শিক্ষক না থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, যত্রতত্র গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন ও নুরানি মাদরাসার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হওয়ায় অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকদের অনীহা তৈরি হয়, যার প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। সোনাগাজী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তাহেরুল ইসলাম বলেন, উপকুলীয় চরাঞ্চলের শিশুরা তাদের বাবার সঙ্গে পরিবারের কাজ করে থাকে। কিছু পরিবার আবার ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করেন। তবে সরকারি প্রাথমিকে শিক্ষার্থী বাড়াতে শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী সংগ্রহ, মা সমাবেশসহ নানামুখী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। সচ্ছল ও বিত্তবান পরিবারের সন্তান কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াতে হিমশিম খেলেও অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বাড়ির পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার নিম্নমান ও শিক্ষার্থী সংকট কাটাতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক বলে মনে করেন তিনি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফিরোজ আহাম্মদ বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। এছাড়া স্থানীয় মক্তবগুলোও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকরা মাদরাসামুখী হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ চিত্র হতাশাজনক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য