ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫ , ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
বিএসএফ মহাপরিচালকের ব্যাখ্যায় দ্বিমত বিজিবির ডিজির ১৪ সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন মৎস্য ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের শিশু ধর্ষণ আশঙ্কাজনক বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ সিলেটে পুকুর থেকে সাদাপাথর উদ্ধার ভোলাগঞ্জের পাথর লুট করে ১৫০০-২০০০ ব্যক্তি বাংলাভাষী লোকজনকে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে দেশছাড়া করতে দেব না- মমতা রোডম্যাপকে স্বাগত জানাই-জোনায়েদ সাকি ইসির রোডম্যাপে খুশি বিএনপি-মির্জা ফখরুল ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা মেসির জোড়া গোলে ফাইনালে ইন্টার মায়ামি টাইব্রেকারে গ্রিমসবির কাছে হেরে বিদায় নিলো ম্যানইউ নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন হামজা ‘মুসলিম হওয়ার কারণে অনেকে আমাকে টার্গেট করেন’ ভারতের ২৬ বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ দেখছেন না শ্রীকান্ত নতুন ক্যাটাগোরিতে বেতন কত কমল বাবর-রিজওয়ানের? বড় ব্যবধানে হারলো সাকিবের ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে না: স্কট এডওয়ার্ডস রাকসু নির্বাচনের তফসিল ৩য় বারের মতো পুনর্বিন্যস্ত পিছিয়েছে ভোট জকসু নির্বাচনে বয়সসীমা থাকছে না

দীর্ঘদিনেও শিক্ষাঙ্গনে ফিরে আসছে না স্বাভাবিক অবস্থা

  • আপলোড সময় : ২২-০৫-২০২৫ ০৫:৩৫:৪৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-০৫-২০২৫ ০৫:৩৫:৪৮ অপরাহ্ন
দীর্ঘদিনেও শিক্ষাঙ্গনে ফিরে আসছে না স্বাভাবিক অবস্থা
দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিনেও শিক্ষাঙ্গণে ফিরে আসেনি স্বাভাবিক অবস্থা। বরং সংঘর্ষ-আন্দোলনের জেরে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। বর্তমানে পাবলিকের সঙ্গে সঙ্গে অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিপীড়ন, সংঘর্ষ, আন্দোলনের ঘটনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই বেশি দেখা যেত। ওই ধরণের অস্থিরতা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন ছিল না। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রায় নয় মাস পার হলেও অনেক শিক্ষাঙ্গনে এখনো স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরেনি। শিক্ষাখাত এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষার্থীদের হাত ধরে দেশে একটি বড় পরিবর্তন ঘটেছে। ওই ঘটনা তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে এবং কিছু জায়গায় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ নিজেদের সুপিরিয়র ভাবছে। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই অংশটাই মব জাস্টিসসহ বিভিন্ন সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। গত নয় মাসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে অন্তত ১৯টি সংঘর্ষ, ৯টি আন্দোলন এবং ৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে শুধু ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাই তুচ্ছ ঘটনায় ১৩ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এপ্রিল মাসে ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনটি সংঘর্ষ ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২১ এপ্রিল ধানমন্ডিতে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিক্রিয়ায় ২২ এপ্রিল সংঘর্ষ হয়। তাছাড়া ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজ, যাত্রাবাড়ীতে তিন কলেজ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং চট্টগ্রাম কলেজসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। সূত্র জানায়, অতিসম্প্রতি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । ওই প্রতিষ্ঠানের একদল শিক্ষার্থী ভিসির পদত্যাগ দাবিতে অনশন শুরু করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। ফলে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষক পদত্যাগপত্র জমা দেন। আর ১৯ এপ্রিল বিকালে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে নিহত হন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় কিছু কিশোর ও যুবক জড়িত। ঘটনার পরের দিন নিহতের ফুফাতো ভাই বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্রসহ আটজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী গণপিটুনিতে নিহত হন। একই দিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে এক যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। দুই ঘটনায়ই মামলা চলমান রয়েছে। তাছঅঢ়অ কুয়েটে ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের জেরে ১৪ এপ্রিল ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য অন্যায়ভাবে ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছেন এবং ছাত্রদলকে সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। ২১ এপ্রিল থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ৩২ শিক্ষার্থী আমরণ অনশন শুরু করে। তাদের ওই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, বিক্ষোভ, প্রতীকী অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। পরিস্থিতি সমাধানে ২৩ এপ্রিল কুয়েটে পৌঁছান শিক্ষা উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। পরে ২৪ এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে কুয়েট উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশে নেতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজে এক ধরনের বিভাজন তৈরি করে রেখেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এর প্রভাব পড়েছে। আর ওই বিভাজনই শিক্ষঅ প্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষের একটি বড় কারণ। তাছাড়া দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শৃঙ্খলা কাঠামোতেও দুর্বলতা রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেকটা নির্ভয়েই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। যদি এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে ওসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। তাছাড়া বিভিন্ন আন্দোলন শিক্ষাঙ্গনে বিগত কয়েক মাসে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত নয় মাসে এইচএসসি পরীক্ষার অবশিষ্ট পরীক্ষা বাতিল, সাত কলেজ পৃথককরণ বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, কুয়েট ভিসির পদত্যাগের দাবি এবং কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ বিভিন্ন দাবিতে ৯টি আন্দোলন হয়েছে। সর্বশেষ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা একযোগে সব পলিটেকনিকে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে শিক্ষাঙ্গনের ওসব আন্দোলন ও সংঘর্ষের ঘটনায় কারো ইন্ধন আছে কিনা সে বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন। কারণ ওসব ঘটনার পেছনে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা, নৈতিক অবস্থান, রাজনৈতিক-সামাজিক পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এসএমএ ফায়েজ জানান, শিক্ষাঙ্গনে একটি বড় সমস্যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থার সংকট। বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থীরা নানাভাবে নিপীড়িত হয়েছেন। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শিক্ষাঙ্গনকে স্বাভাবিক করতে হলে সবার আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এ বিষয়ে ইউজিসি কাজ করছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। ওসব ক্ষেত্রে মূলত রাজনৈতিক বিষয়ই প্রধান কারণ। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ সংঘাত বন্ধে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স