
আদালতে কাঁদলেন নুসরাত ফারিয়া কারাগারে প্রেরণ
- আপলোড সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০২:১২:৩১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০২:১২:৩১ অপরাহ্ন


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভাটারা থানার এনামুল হক হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন না পেয়ে এজলাসে কাঁদলেন চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। গতকাল সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হকের আদালতে কান্না করেন তিনি। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় তাকে হাজতখানায় হাজির করে পুলিশ। এরপর বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট ও হাতকড়া পরিয়ে সকাল ১০টায় তাকে দ্বিতীয় তলায় ২৭ নম্বর কোর্টে তোলা হয়। পরে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। শুনানি চলাকালীন তিনি আদালতের কাঠগড়ার সামনের অংশে ছিলেন। শুনানি শেষে সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তখন তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তার চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। আগামী ২২মে ফের তার জামিন শুনানির জন্যে ধার্য করেছেন আদালত। গত রোববার বিমানবন্দর থেকে নুসরাত ফারিয়াকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই ভাটারা থানাধীন এলাকায় জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন এনামুল হক। এদিন আসামিদের ছোঁড়া গুলি ভুক্তভোগী পায়ে লাগে। পরে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে এ বছরের ৩ মে মামলা করেন তিনি। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১৭ শিল্পীসহ ২৮৩ জনকে এজাহারনামীয় করা হয়। এ মামলায় ২০৭ নম্বর আসামি নুসরাত ফারিয়া। মামলায় তাকে আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে, নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী ফারহান মোহাম্মদ আয়াজ বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় আমার মক্কেল দেশে ছিলেন না। আন্দোলনের পরও তিনি সিনেমা ও শুটিংয়ের কাজে ৩ বার দেশ থেকে বিদেশে গিয়েছেন। তার পালিয়ে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না। গতকাল সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ্ ফারজানা হকের আদালতে তিনি এসব কথা বলেন। পরে বিচারক বলেন, আপনার মক্কেলের পক্ষে বিদেশে যাওয়ার যে সাবমিশন দাখিল করেছেন, সেটা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাচাই করে দেখবেন। আজ (গতকাল সোমবার) জামিন শুনানি হচ্ছে না। পরে বিচারক আগামী ২২ মে জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক মো. বিলাল ভূইয়া তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামি পক্ষের কয়েকজন আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। তাদের মধ্য ফারহান মোহাম্মদ আয়াজ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিনি বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য নায়িকা। তার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্যও না। জুলাই আন্দোলনের সময় আমার মক্কেল দেশে ছিলেন না। সেজন্য আমরা তার পাসপোর্ট আদালতে পেশ করেছি। আন্দোলনের পরও উনি সিনেমা ও শুটিংয়ের কাজে ৩ বার দেশ থেকে বিদেশে গিয়েছেন। তার পালিয়ে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না। তিনি জানতেন, তিনি কোন অপরাধ করেননি। আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এরপর রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এই সেই স্বনামধন্য নায়িকা। যার মতো অনেকেই ফ্যাসিস্টের দোসর ছিলেন। তার মতো ফেরদৌসকেও আমরা খুঁজছি। ফ্যাসিস্টরা এসব নায়ক-নায়িকার নাম বিক্রি করে ক্ষমতাশালী হয়। সে জুনাইদ আহমেদ পলকের হাত ধরে উপরে উঠে নায়িকা হয়। বায়োপিকে সে হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করে। অভিনয় করা দোষের নয়, কিন্তু সে যে বক্তব্য দিয়েছে সেটা দোষের। সে বলেছে, প্রতিটি ঘরে ঘরে হাসিনা আছে। আমাদের মা-বোনরা কী খুনি হাসিনা? ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজ অনলাইন জুয়ায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সে অনলাইন জুয়ার অ্যাম্বাসেডর। তার একটা গান মারাত্মক-সবাই মিলে খেলবো। যুব সমাজকে নষ্ট করার জন্য সে কাজ করছে। আন্দোলনের সময় এই অভিনেত্রীরা ফ্যাসিজমকে রক্ষার জন্য গান, নাটকের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছে। আমরা ফ্যাসিস্টের সহযোগীদের দেখেছি, আমার বোনেরা শাহবাগে যখন দাঁড়িয়েছিল, তখন তারা আমার বোনেদের ওপর গরম পানি ফেলার কথা বলেছে। দেশে বিদেশে থেকে প্ররোচনা চালিয়ে, ফ্যাসিস্টের সহযোগী, ফলোয়ার্স যারা আছে, যারা আর্থিক, টেলিফোনে সহযোগিতা করেছে তাদের একজন নুসরাত ফারিয়া। হত্যাচেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাকে আমরা খুঁজছিলাম। তাকে পেয়েছি। বর্তমানে ফ্যাসিস্টকে সহযোগিতা করার জন্য অনেকে বিভিন্ন জায়গায় গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে,মিছিল করছে। সে যদি জামিন পায় তাহলে ফ্যাসিস্টকে পুনরুদ্ধারে কাজ করবে। পরে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য: এদিকে, অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং সেই মামলার তদন্ত চলছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, তাকে যদি ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে বলতেন, ছেড়ে দিয়েছে। আর এখন বলছেন কেন ধরা হলো। তিনি বলেন, তার নামে মামলা থাকলে আপনি কী করবেন? বিদেশ যাত্রার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একটি পলিসি আছে। এই পলিসির আওতায় যারা পড়ে তাদেরই আটকানো হয়। গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মিটিং শেষে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শুধু দুষ্কৃতকারী যেন আইনের আওতায় আসে এবং শাস্তি ভোগ করে, নিরীহ কোনও লোক যেন কোনও অবস্থাতেই শাস্তি ভোগ না করে সে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। ‘নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনা বিব্রতকর’ উল্লেখ করে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সংস্কৃতি উপদেষ্টা কী বলেছেন জানি না। তিনি যা বলেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত মত। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবার আছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ