
স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
ভারতের বাজার হারানোর শঙ্কায় রফতানিকারকরা
- আপলোড সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০২:০৯:২২ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২০-০৫-২০২৫ ০২:০৯:২২ অপরাহ্ন


বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। ঘোষণার পরের দিনই গত রোববার সীমান্তে আটকে গেছে অনেক পণ্য। এতে বিপাকে পড়েছেন রফতানিকারকরা। পাঁচগুণ বেশি খরচ করে রফতানি আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় অনেকে।
রফতানিকারকরা বলছেন, স্থলবন্দর বন্ধ হলে ভারতে পণ্য রফতানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, বিকল্প হিসেবে সমুদ্রপথে বাড়বে খরচ ও সময়। সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতের কলকাতা ও মুম্বাই বন্দরে পণ্য খালাস করে স্থলপথে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে যেতে হবে। এতে মূল ভুখণ্ডে কিছুটা রফতানি হলেও সবচেয়ে বড় বাজার সেভেন সিস্টার্স নামে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।
বেশ কয়েকজন রফতানিকারক জানান, এর আগে তারা সব সময় ভারতের স্থলবন্দর ব্যবহার করেই পণ্য রফতানি করেছেন। কখনো সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করেননি। কারণ এতে পরিবহন খরচ প্রায় পাঁচগুণ হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই সব রাজ্যে পণ্য পাঠাতে প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সমুদ্রপথে কলকাতা পণ্য পাঠাতে হবে। পরে পুরো বাংলাদেশের সীমান্ত ঘুরে আসাম, মেঘালয়, করিমগঞ্জ ও আগরতলায় যাবে পণ্যের চালান।
ড্যানিশ ফুডের হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ বলেন, মূলত সেভেন সিস্টার্সের বাজারে ভারতের নিজস্ব পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্যের আধিক্য বেশি ছিল। কারণ ভারতের মূল ভূখণ্ডের কোম্পানিগুলোর চেয়ে আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো কম খরচে সেখানে পণ্য পৌঁছাতে পারতো। সে সুযোগ বন্ধ করার জন্য এই পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। এদেশের কোম্পানিগুলোর জন্য বড় দুঃসংবাদ এটি।
ভারতে রফতানির জন্য আমরা ছয়টি স্থলবন্দর ব্যবহার করি জানিয়ে বলেন, এর সবগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ভারত এখন কেবল কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির সুযোগ দিচ্ছে। এ দুটি বন্দর রফতানিকারকদের একদম কাজে আসবে না, ওইসব দিয়ে রফতানিও হয় না। এতদিন রফতানিকারকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, মৌলভীবাজারের চাতলাপুর, সিলেটের শেওলা, তামাবিল স্থলবন্দরের মতো ছয়টি বন্দর দিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সে পণ্য পাঠিয়েছে। এতে ২০ ফুটের একটি কার্গোর জন্য ভাড়া গুনতে হয়েছে ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা। যেখানে এখন একই ভাড়া দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পণ্য নেয়া যাবে। এরপর অতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া ও কলকাতা থেকে আবারও পণ্য আসাম, মেঘালয়, করিমগঞ্জ বা আগরতলায় নিতে প্রায় এক লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে। বাংলাদেশ প্লাস্টিকপণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, এত খরচ করে সমুদ্রপথে পণ্য নিয়ে সেটা কোনোভাবে প্রতিযোগিতা সক্ষম হবে না। আগে কখনো সমুদ্রপথে আমরা পণ্য পাঠাইনি। এখন সেটা করতে হলে আমাদের পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে যাবে। দেশ থেকে প্রায় ৫০টির বেশি কোম্পানি শুধু প্লাস্টিকপণ্য রফতানি করতো, সেগুলো একটি বড় বাজার হারাবে।
ভারতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কোমলপানীয় রফতানি করতো আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং মাইদুল ইসলাম বলেন, ভারতের এ সিদ্ধান্তের পর আজ আমরা ভারতের যে অর্ডারগুলো ছিল, সে উৎপাদন স্থগিত করেছি। আমরা ভারতে চার থেকে পাঁচ লাখ কার্টন পণ্য রফতানি করতাম বছরে। এ সিদ্ধান্তের ফলে আমরা অনিশ্চয়তায় পড়েছি। মাইদুল ইসলাম বলেন, এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, ভারতের ভোক্তারাও কিন্তু স্বল্পমূল্যে ভালো পণ্য থেকে বঞ্চিত হবেন। ফলে আমরা আশা করছি উভয় দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি ভালো সিদ্ধান্ত আসবে শিগগির।
ড্যানিশ ফুডের দেবাশীষ সিংহ এখন অন্যভাবে (সমুদ্রপথে) রফতানি করার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশি কোম্পানি খরচে পোষাতে পারবে না। কারণ আমরা আগে বর্ডার পার হলেই আসাম, গৌহাটি, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে পণ্য পৌঁছাতে পারতাম স্থলপথে। ওই পথে না গেলে নৌপথে অনেক ঘুরে, বারবার ট্রান্সপোর্ট পরিবর্তন করে খরচে টিকতে পারবো না। রফতানিকারকরা আরও জানান, নতুন ব্যবস্থায় সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দর বা মোংলা বন্দর থেকে কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পাঠাতে হবে। তারপর সেখান থেকে সেভেন সিস্টার্স যেতে হবে আলাদা পরিবহনের মাধ্যমে। এতে প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লাগবে, যা আগে একদিনে করা যেত স্থলবন্দরের মাধ্যমে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ