
ব্যাটারি রিকশার কারণে সড়কে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ঘটনার হার
- আপলোড সময় : ১৮-০৫-২০২৫ ১২:০০:৫৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৫-২০২৫ ১২:০০:৫৭ অপরাহ্ন


দেশজুড়েই সড়কে ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম এখন চরমে। ব্যাটারিচালিত ওসব রিকশার কারণে সড়কে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সড়কে ২০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে দাবড়ে বেড়ানো অনুমোদনহীন অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বরং নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীর সড়কগুলো প্রায় ১২ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে। আর রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে চলছে আরো প্রায় ৬০ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। এই বাহনের কারণে সড়কে ক্রমেই বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। ট্রাফিক পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কের যেকোনো সিগন্যালে থাকা দু-একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য চাইলেও অবৈধ রিকশা বন্ধ করা সম্ভব নয়। বরং যাত্রীরাই অনেক সময় ব্যাটারিচালিত রিকশার পক্ষে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী শুধু গত মার্চ মাসেই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজি বাইকের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩.৯৫ শতাংশ। তবে বুয়েটের নতুন রিকশার মডেল করেছে। তাতে ঝুঁকিহীনভাবে ৩২৫ থেকে ৪২৫ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করা যাবে। তাছাড়া দুজন যাত্রী নিয়ে নিরাপদে রিকশাটি চালাতে পারবে চালক। াওই রিকশার চাকায় হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক ও বিকল্প পার্কিং ব্রেক সংযোজন করা যাবে। আর এর মাধ্যমে সহজ হবে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে শুধু রাজধানীতে প্রায় ১২ লাখ অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মোটরসাইকেলের চালকরা ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল মানছে না। বরং চালকদের খেয়ালখুশি মতো ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করে চলায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। তাছাড় উল্টো পথ ধরে চলাচলের প্রবণতা তো রয়েছেই। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানীতে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় সেখানকার চালকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং তা থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। শেষে তা রূপ নেয় সংঘর্ষে। তারপর থেকে অবৈধ ওসব বাহন গুলশান-বনানীর সব সড়কে প্রকাশ্যে চলতে শুরু করে। চলতি মে মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে আবারো কঠোর হয়। পুলিশের সহায়তায় অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে মোহাম্মদপুর, আসাদগেটসহ কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার নির্মাণ ও সংযোজন কেন্দ্র। বিশেষ করে পুরান ঢাকা, কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছোট ছোট ওয়ার্কশপে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি ও রূপান্তর করা হচ্ছে। ওসব ওয়ার্কশপে সাধারণত সাইকেল বা রিকশার ফ্রেমে ব্যাটারি ও মোটর সংযোজন করে ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করা হয়। কিন্তু সেগুলোর বেশির ভাগ নিরাপত্তার মানদণ্ড অনুসরণ না করায় বেড়ে চলেছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় একটা রিকশা হয়ে যায়। আর রিকশার উপকরণগুলো খোলাবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে রয়েছে মোটর, হর্ন, ব্রেক সিস্টেম ইত্যাদি। আর চাকা, সিট, রিকশার বডি লোকাল বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়।
সূত্র আরো জানায়, যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে সরকার কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সফল হয়নি। মালিকদের প্ররোচনায় চালকদের প্রতিবাদের মুখে প্রতিবারই সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে এসেছে। ফলে প্রতিদিন শুধু রাজধানীতেই তৈরি হচ্ছে কয়েকশ ব্যাটারিচালিত রিকশা। গত এক বছরে সরকার অন্তত দুইবার অটোরিকশা বন্ধের চেষ্টা করে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মূলত সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা উঠতে বাধা কিংবা জব্দ করার পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু যেখানে এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করা হয় ওই ওয়ার্কশপগুলোয় সরকারের নজরদারি নেই। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সর্বশেষ উদ্যোগ ব্যর্থ হলে সরকার এখন বিভিন্ন ভিআইপি সড়কে এর চলাচল আটকানোর চেষ্টা করছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও ফ্লাইওভারে পর্যন্ত যখন-তখন উঠে পড়ছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা। গত বছরের নভেম্বরে তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রতিবাদে অবৈধ যানটির চালকরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে ২০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধ রিকশা কোনো নীতিমালা বা যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় না রেখেই তৈরি করা হয়েছে। ফলে অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে সরকার দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ও সড়কে গণপরিবহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে। বুয়েটের সহায়তায় এরই মধ্যে ব্যাটারিচালিত নিরাপদ রিকশার নকশা প্রস্তুত করে কয়েকটি কোম্পানিকে প্রস্তুতর জন্য অনুমতি দিয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতাসহ বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ডাম্পিং ও জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু তবু বন্ধ করা যাচ্ছে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ