ঢাকা , সোমবার, ০২ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা ঝিনাইদহে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত আহত ৪ কেএনএফের ইউনিফর্ম জব্দের ঘটনায় কারখানা মালিক রিমান্ডে মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই আরও ১১ জনকে পুশইন, মোট সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে নয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিমি. বেগে ঝড়ের আভাস সিলেট-মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতায় জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ

  • আপলোড সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ০৩:০২:১৪ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ০৩:০২:১৪ অপরাহ্ন
নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতায় জনমনে আতঙ্ক  ও উদ্বেগ
খবরের কাগজ খুললেইচোখে পড়ে নারী ও শিশুর ওপর সংঘটিত বর্বর নির্যাতনের দৃশ্য। এসব ঘটনার অধিকাংশের ভুক্তভোগী নারী ও শিশু। প্রকাশ্যে নারীর ওপর সহিংসতা, কিশোরীদের অপহরণ ও খুনের মতো ঘটনার ভিডিও ও প্রতিবেদন জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অপরাধ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ের পরিবেশগত পরিবর্তন এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এ ধরনের ঘটনার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে প্রায় ২০ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়। মাসে গড়ে দেড় হাজার, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫০টিরও বেশি মামলা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে সারা দেশে ৪ হাজার ৯২৪টি মামলা হয়েছে—এর মধ্যে মার্চে ২ হাজার ৫৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৪৩০টি এবং জানুয়ারিতে ১ হাজার ৪৪০টি। ২০২৪ সালে ১৭ হাজার ৫৭১টি, ২০২৩ সালে ১৮ হাজার ৯৪১টি এবং ২০২২ সালে ২১ হাজার ৭৬৬টি মামলা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, গত ৯ মাসে মোট ১৩ হাজার ৮৮০টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মার্চ ও এপ্রিলেই সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। এপ্রিল মাসেই ঘটেছে ২ হাজার ৮৯টি। এই হিসাবের বাইরেও রয়েছে অজস্র অঘোষিত নির্যাতনের ঘটনা। বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে নারীর চলাফেরার অধিকার সংকুচিত হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলছে, নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন জরুরি। নারী অধিকার সংরক্ষায় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ১২ মে রাজধানীর তেজকুনি পাড়ায় নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু রোজা মনি। পরদিন একটি ময়লার স্তূপ থেকে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং বুকে গরম পানির ফোসকার দাগ পাওয়া যায়। ৯ মে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে পিকনিকে অংশ নেওয়া নারীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে পেটানো হয়। শতাধিক পুরুষ দর্শকের সামনে ঘটনাটি ঘটে এবং কেউই বাধা দেয়নি—বরং মোবাইলে ভিডিও ধারণ ও স্লোগান দেওয়ার দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। একইদিন রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুই বোন মরিয়ম বেগম ও সুফিয়া বেগমকে খুন করে তাদেরই ভাগনে। সাইকেল কেনার জন্য টাকা চুরির সময় ধরা পড়ে যাওয়ায় সে টেবিলে থাকা ছুরি ও শিলপাটা দিয়ে খালাদের হত্যা করে। হত্যার পর জানাজায়ও অংশ নেয় ওই কিশোর। ১৫ এপ্রিল পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকায় গ্যারেজে শিশু আবু বকরের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। তার ভাই গ্যারেজে কাজ করতেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে এক কিশোরকে গ্রেফতার করে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকিতে কবর জিয়ারত শেষে বাড়ি ফেরার পথে কিশোরী লামিয়াকে অপহরণ করে সাকিব ও সিফাত নামের দুই দুর্বৃত্ত। তাকে ধর্ষণের পর নগ্ন ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানোর হুমকি দেয় তারা। ২৬ এপ্রিল ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে। এই ধরনের আরও বহু ঘটনা রয়েছে, যা সমাজে নারী ও শিশুর নিরাপত্তাহীনতা স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের পেছনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, জেন্ডার বৈষম্য ও সামাজিক অবিচার রয়েছে। অনেক সময় মানুষ নিজেই বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।’ পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন ঠেকাতে পুলিশ বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। হটলাইন চালু করা হয়েছে, যাতে ভুক্তভোগীরা দ্রুত সহায়তা পান।’ এছাড়া থানা পর্যায়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের ঘটনায় অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। নারী নির্যাতনকারীরা কেউ পার পাবে না—আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।’

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স