ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকারি চাকরি আইন বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভে কর্মচারীরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড ৬ জনের যাবজ্জীবন বহাল কালো টাকা সাদা করার বিধান সংস্কারের সম্পূর্ণ বিপরীত-টিআইবি দূরত্ব ঘুচিয়ে চমৎকার জুলাই সনদ তৈরির প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার সারাদেশে একযোগে ২৫২ বিচারককে বদলি টেকসই অর্থনীতির বাজেট এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না

‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’র ঘোষণাপত্র

  • আপলোড সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ০২:৫৮:৫২ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-০৫-২০২৫ ০২:৫৮:৫২ অপরাহ্ন
‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’র ঘোষণাপত্র
‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্রে নারীর বিরুদ্ধে যেকোনও সহিংসতা ও বৈষম্য প্রত্যাখ্যান করা হয়। গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন নারী সংগঠন ছাড়াও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী ও পুরুষ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। গান ও কবিতা, ব্যানার, লিফলেট, সেøাগানের মাধ্যমে নারীর অধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের দাবি তুলে ধরা হয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে আরও সক্রিয় হতে হবে। বিশেষ করে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে ঘিরে গুজব ও অপপ্রচার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কিংবা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাদের স্পষ্টভাবে জানাতে হবে-নারী, শ্রমিক, জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত ও লিঙ্গীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার ও মুক্তি সম্পর্কে তাদের অবস্থান কী। আসন্ন নির্বাচনসহ ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রার্থীদের মধ্যে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঘোষণাপত্রে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালিয়ে যাওয়ার যেকোনও অপচেষ্টা আমরা মেনে নেব না। মৌলিক অধিকার অস্বীকারের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানো হবে। বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস, সংস্কৃতি ও ধর্মকে দমনমূলক অস্ত্রে পরিণত করার অপচেষ্টা, এবং সংকীর্ণ মনোভাবকে সার্বজনীন করার প্রয়াস কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর নারীনীতি ও অবস্থান আমরা নজরদারিতে রাখবো। যারা ক্ষমতার কাঠামো ব্যবহার করে বৈষম্য ও সহিংসতা জিইয়ে রাখে, সেই কাঠামো ভেঙে দিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হুমকির মুখে মাথা নত করবো না, এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পিছপা হবো না। ঘোষণায় আরও বলা হয়, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে আজ আমরা এক জরুরি মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমাদের দাবি একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ, যেখানে বৈষম্যবিরোধিতা ও সাম্যের ভিত্তিতে সব নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে ঘোষণায় বলা হয়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, তেভাগা, টঙ্ক, নানকার, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, সুন্দরবন রক্ষা, নিরাপদ সড়ক ও ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন-প্রতিটিতেই নারীর সাহসী অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও নারীর পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে প্রতিক্রিয়াশীল ও পিতৃতান্ত্রিক শক্তি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা, ব্যক্তিগত আক্রমণ, অনলাইনে হয়রানি, যৌন নিপীড়ন, এবং প্রকাশ্য হামলার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিসরে নারীর অংশগ্রহণ নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে। নারী অধিকার বিষয়ক সংস্কার-প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ৪৩৩টি সুপারিশ পেশ করে। কিন্তু এসব সুপারিশের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা মূল দাবিগুলোকে আড়াল করে। এ ছাড়া কমিশনের সদস্যদের জনসমক্ষে অবমাননা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই ন্যাক্কারজনক আচরণের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি-এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। এতে স্পষ্ট হয়, সরকারের নির্লিপ্ততা আসলে মৌলিক অধিকারের দাবিদারদের দমন করারই বার্তা বহন করে। ঘোষণায় বলা হয়, সংবিধান বা সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে নারী ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকার অস্বীকার করা যাবে না। কৃষকের ভূমি-অধিকার থেকে শুরু করে পরিবেশগত ন্যায্যতা সবকিছুই নারীর অধিকারের সঙ্গে যুক্ত। তাই সমাজের সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত না করে কোনোভাবেই ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সরকার ও ভবিষ্যৎ যেকোনও সরকারের উদ্দেশে বলা হয় নারী, শ্রমিক, সংখ্যালঘু, হিজড়া ও লিঙ্গীয় বৈচিত্র্য সম্পন্ন নাগরিকদের রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কোনও শর্তসাপেক্ষ নয়। ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়, আমাদের লড়াই শুধু নারীর মর্যাদার জন্য নয়, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সংগঠনের অধিকার, ভূমি ও সম্পত্তির অধিকার, যৌন ও প্রজনন স্বাধীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অধিকার, এবং প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্যও। পরিবেশ ধ্বংস, বিচারহীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্বের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর অনেকটিই এসব মৌলিক দাবির অন্তর্ভুক্ত, ফলে কমিশন বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা এবং সদস্যদের প্রতি আক্রমণ নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ঘৃণা, হুমকি, সংঘবদ্ধ সহিংসতা চালিয়ে এই আন্দোলনকে দমন করার প্রচেষ্টা চলছে এ অভিযোগ করে প্রশ্ন তোলা হয়, সরকার কাদের তুষ্ট করতে চাইছে? সংখ্যাগরিষ্ঠের উগ্র জাতীয়তাবাদী অংশকে? নাকি সংস্কারের নামে বৈষম্যমূলক কাঠামো টিকিয়ে রাখার পরিকল্পনাকারীদের? অবশেষে ঘোষণা দেয়া হয়-অধিকার চেয়ে নয়, আদায় করেই নিতে হয়। আর সেই লড়াইয়ে ভয় নেই-পিছু হটার কোনও জায়গা নেই।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স