ঢাকা , শনিবার, ১৭ মে ২০২৫ , ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ডিবি অফিসে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যমুনার পাশে কাকরাইলে সমাবেশ, নির্বিকার পুলিশ জবির তিন দফা মেনে নিলো সরকার রাখাইনে করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে খেলাফত মজলিসের উদ্বেগ চায়ের দোকানে বাগবিতণ্ডা থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা জড়িতদের গ্রেফতারে আল্টিমেটাম শাহবাগ থানা ঘেরাও তিন বছর পর ইউক্রেন-রাশিয়ার প্রথম মুখোমুখি বৈঠক শুরু আঞ্চলিক রাজনীতিতে নতুন মোড় খুলনায় বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ আজ দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে-জামায়াত আমির সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-প্রধান উপদেষ্টা পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশ নেতৃত্বে ড. ইউনূস-দ্য ইকোনমিস্ট নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতায় জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’র ঘোষণাপত্র নারীর অধিকার আদায়ের ডাক অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বাপার ১৩ দফা দাবি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে বাধা কোথায়- নজরুল দায় চাপানোর রাজনীতি বন্ধের আহ্বান ছাত্রশিবিরের জনপ্রিয়তা পাচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ‘ব্রি ধান-১০৩’
* চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে এখন পর্যন্ত কোনো আইপিও আসেনি * দেড় যুগের মধ্যে ২০২৪ সালে সবচেয়ে কম আইপিও আসে বাজারে * আইপিও বন্ধ থাকলে খুলবে না বিনিয়োগের বিকল্প পথ * পুঁজিবাজারের গতি কমার সাথে নষ্ট হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা * পাবলিক ইস্যু রুলস সংস্কার হলেই আসবে আইপিও, আশা বিএসইসির

পুঁজিবাজারে নতুন আইপিও বন্ধ

  • আপলোড সময় : ১৬-০৫-২০২৫ ০৬:৫৪:০৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-০৫-২০২৫ ০৬:৫৪:০৬ অপরাহ্ন
পুঁজিবাজারে নতুন আইপিও বন্ধ
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওকে পুঁজিবাজারের ‘নতুন রক্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায় এক বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারে এই নতুন রক্তপ্রবাহ বা আইপিও আসা বন্ধ। এটাকে অস্বাভাবিক এবং দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারের জন্য ব্যাপক ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নতুন আইপিও এলে পুঁজিবাজারে বিকল্প বিনিয়োগের পথ সৃষ্টি হয় এবং তারল্য বাড়ে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আইপিও বন্ধ থাকলে বিনিয়োগের যেমন বিকল্প পথ খুলে না, তেমনি বাজারের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) নতুন আইপিও আনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
অন্যদিকে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমানে কোনো কোম্পানির আইপিও আবেদন কমিশনে জমা নেই। আবার আগে দুর্বল কোম্পানি কারসাজির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পেতো। এখন সেই সুযোগ নেই। যে কারণে দুর্বল কোম্পানি আইপিও’র জন্য আবেদন করছে না। আবার ভালো কোম্পানির জন্য বর্তমান কার্যকর থাকা পাবলিক ইস্যু রুলস খুব একটা উপযুক্ত নয়। যে কারণে পাবলিক ইস্যু রুলস সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংস্কার হলে আবার আইপিও আসা শুরু হবে।
দেশের পুঁজিবাজারে সর্বশেষ আইপিও এসেছে টেকনো ড্রাগসের। গত বছরের জুনে এ কোম্পানিটি আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে। এরপর আর কোনো কোম্পানির আইপিও আসেনি। অর্থাৎ প্রায় এক বছর ধরে পুঁজিবাজারে আইপিও আসা বন্ধ। দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এত দীর্ঘ সময় ধরে আইপিও না আসার ঘটনা আর ঘটেনি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ২০২০ ও ২০২১ সাল পর পর দুই বছর পুঁজিবাজার থেকে আইপিও মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলন হয়। তবে ২০২২ সালে আইপিও’র সংখ্যা কমে আসে। ২০২৩ সালে আইপিওতে রীতিমতো ধস নামে, যা অব্যাহত থাকে ২০২৪ সালেও। ২০২৪ সালে আইপিওতে পুঁজি বিক্রি করে মাত্র চারটি কোম্পানি অর্থ উত্তোলন করে। এর মধ্যে ছিল-এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও টেকনো ড্রাগস। এ চার কোম্পানির মধ্যে এনআরবি ব্যাংক স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে আইপিওতে পুঁজি বিক্রি করে। বাকি তিনটি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসে। এনআরবি ব্যাংক আইপিওতে পুঁজি ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। বাকি তিন কোম্পানির মধ্যে বেস্ট হোল্ডিং ৩৫০ কোটি টাকা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ৯৫ কোটি এবং টেকনো ড্রাগস ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। অর্থাৎ চারটি কোম্পানি আইপিওতে পুঁজি ছেড়ে মোট ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে।
এর আগে ২০২৩ সালে মিডল্যান্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, শিকদার ইন্স্যুরেন্স এবং ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড আইপিওতে আসে। অর্থাৎ ২০২৩ তালে তিনটি কোম্পানি ও একটি মিউচুয়াল ফান্ড আইপিওতে আসে। এর মধ্যে মিডল্যান্ড ব্যাংক ৭০ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি, শিকদার ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি এবং ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। চারটি প্রতিষ্ঠানের উত্তোলন করা অর্থের পরিমাণ ছিল ২০২ কোটি টাকা।
পরপর দুই বছর মাত্র চারটি করে প্রতিষ্ঠান আইপিওতে এলেও ২০২২ সালে ছয়টি প্রতিষ্ঠান আইপিও’র মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। এ ছয় প্রতিষ্ঠানের অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ৬২৬ কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। অবশ্য ২০২২ সালের আগের তথ্য দেখলে শেষ দুই বছরের আইপিও’র চিত্র খুবই হতাশাজনক। কারণ ২০২১ সালে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১৫টি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৫৮ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকই উত্তোলন করে ৪২৫ কোটি ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এছাড়া ২০২০ সালে ৮টি প্রতিষ্ঠান ৯৮৫ কোটি ৮৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ৯টি প্রতিষ্ঠান ৬৫২ কোট, ২০১৮ সালে ১৪টি প্রতিষ্ঠান ৬০১ কোটি, ২০১৭ সালে ৮টি প্রতিষ্ঠান ৪১৮ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৬ সালে ১১টি প্রতিষ্ঠান ৮৪৯ কোটি ৩০ লাখ, ২০১৫ সালে ১২টি প্রতিষ্ঠান ৮৩০ কোটি ৭২ লাখ ২১ হাজার, ২০১৪ সালে ২০টি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২৬৩ কোটি ৬২ লাখ, ২০১৩ সালে ১২টি প্রতিষ্ঠান ৮৩০ কোটি ৫০ লাখ, ২০১২ সালে ১৭টি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২০৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার, ২০১১ সালে ১৩টি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৬৭৭ কোটি ৭১ লাখ ৪৫ হাজার, ২০১০ সালে ১৮টি প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ১৮৬ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার এবং ২০০৯ সালে ১৭টি প্রতিষ্ঠান ৪৩৫ কোটি ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করে। অর্থাৎ গত দেড় যুগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পুঁজিবাজারে সব থেকে কম আইপিও আসে। হয়তো চলতি বছর এক বছরে সবচেয়ে কম আইপিও আসার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এরই মধ্যে চলতি বছরের প্রায় পাঁচ মাস পার হয়েছে আইপিও ছাড়া। আগামী জুন মাস পার হলেই চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছর শেষ হবে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে এখন পর্যন্ত কোনো আইপিও আসেনি। পুঁজিবাজারে আইপিও ছাড়া একটি অর্থবছর পার হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটতে যাচ্ছে।
আইপিও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আইপিও না আসায় পুঁজিবাজারের বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। আইপিও হলো পুঁজিবাজারের নিউ ব্লাড (নতুন রক্ত)। নিউ ব্লাড প্রবাহ যদি বাজারে বন্ধ হয়, তাহলে এটা দীর্ঘমেয়াদে বাজারের ব্যাপক ক্ষতি করে। বাজার অনেক পিছিয়ে যায়। সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন কোম্পানির আইপিও আনার উদ্যোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিতে হবে। কেন আইপিও আসছে না, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তার আলোকে কাজ করতে হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন আইপিও না আসা ভালো লক্ষণ না। সরকারি, বেসরকারি ভালো প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা করতে হবে। নতুন আইপিও না এলে বাজারের মূলধন বাড়বে না এবং বাজারে মূলধন না বাড়লে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাজারের ওপর থাকে না। সুতরাং চেষ্টা করতে হবে নতুন ভালো কোম্পানির আইপিও আনার। তিনি বলেন, দীর্ঘসময় ধরে আইপিও না এলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে গেলে তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়। ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতার বেশকিছু ঝুঁকি থাকে। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে এলে কোম্পানি ভালো লাভ করলে লভ্যাংশ দেবে এবং লাভ না করলে লভ্যাংশ দেবে না। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ দিতে হবে। কাজেই বিনিয়োগের দিক থেকে পুঁজিবাজার উপযুক্ত।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, বর্তমানে কমিশনে কোনো আইপিও আবেদন পেন্ডিং নেই। আর বিএসইসির কাজ হলো পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায়ী কেউ আবেদন করলে, এটার কমপ্লায়েন্স থাকলে অনুমোদন করবে। যেহেতু আইপিও আবেদন নেই, তাই অনুমোদন করতে পারছে না। তিনি বলেন, এখন আর যে কোনো কোম্পানি আইপিওতে আসতে পারবে না। বর্তমান কমিশন পাবলিক ইস্যু রুলস এবং অন্যান্য সব বিধান পূরণ করেই অনুমোদন দেবে। যার কারণে যাদের উদ্দেশ্য খারাপ তারা এখন আসছে না বা এলেও কোনো লাভ হবে না, জেনেই তারা আসছে না। আর ভালো কোম্পানিগুলো বর্তমানে যে পাবলিক ইস্যু রুলস রয়েছে, সে অনুযায়ী হয়তো তারা মনে করছে যথাযথ প্রাইস পাবে না। এ কারণে এ কমিশন জয়েন করার সঙ্গে সঙ্গে টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছে। সেই টাস্কফোর্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলো সংস্কার করা দরকার, তা নিয়ে কাজ করছে। আইপিও আনার জন্যই কমিশন পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার, যেটা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে হচ্ছে সেটা করছে। আশা করা যায়, সংস্কার হলেই আইপিও আসবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স