ঢাকা , রবিবার, ১১ মে ২০২৫ , ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রাতভর নাটকীয়তার পর সকালে গ্রেফতার কারাগারে আইভী তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ উত্তাল শাহবাগ, যেন ফিরে এসেছে ‘জুলাই’ নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণই রাস্তায় নামবে- ফারুক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে কঠোর শাস্তিÑ নৌ-উপদেষ্টা সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জেলায় ৬ জনের মৃত্যু হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী লিখে সংবাদ, খুলনায় পত্রিকা অফিসে আগুন ময়মনসিংহে হত্যার আসামির ছুরিকাঘাতে যুবক খুন টাঙ্গাইলে চলন্ত মোটরসাইকেলে ককটেল নিক্ষেপ দুই ভাই আহত পেঁয়াজ-ডিম-সবজির দাম চড়া নাভিশ্বাসে ক্রেতা এআই দক্ষতায় পিছিয়ে বাংলাদেশ পুঠিয়ায় প্রশাসনের যোগসাজশে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক আধুনিকতার প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার মাটির চুলা স্থানীয়দের বাধায় পিছু হটলো বিএসএফ মৌলভীবাজারে সীমান্তে ১৫ জনকে ‘পুশইন’ বিএসএফের আমতলীতে দুই বছরে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে আইনজীবীর লাশ উদ্ধার আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন চয়নিকা চৌধুরী রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি

উত্তাল শাহবাগ, যেন ফিরে এসেছে ‘জুলাই’

  • আপলোড সময় : ১০-০৫-২০২৫ ১২:৩২:০০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১০-০৫-২০২৫ ১২:৩২:০০ পূর্বাহ্ন
উত্তাল শাহবাগ, যেন ফিরে এসেছে ‘জুলাই’
* আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার * ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা এনসিপির, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে
* নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ : আসিফ মাহমুদ
* আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে পারে : আসিফ নজরুল
* আ’লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে পল্টন মোড় অবরোধ গণঅধিকার পরিষদের
* ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে : মঞ্জু


স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়ন, অর্থ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের নিরাপত্তায় বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ-সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। তবে সাধারণ মানুষ বলছে, যারা গুম-খুনে জড়িত দেশের কথা চিন্তা করে না, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। গতকাল শুক্রবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে এবি পাটি। এদিন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উত্তাল শাহবাগ, যেন ফিরে এসেছে ‘জুলাই’।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী সড়ক থেকে সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই অবরোধে যেন ফিরে এসেছে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের উত্তাল দিনগুলো, যা ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আহমেদ এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিসহ এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদিন বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকেই জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তাদের কণ্ঠে ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন সেøাগান। তার মধ্যে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ ‘নাহিদ, আক্তার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘একটা একটা ছাত্রলীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘২৪ বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, প্রভৃতি বলে সেøাগান দেয়া হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের হাতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে লেখা প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের কারণে বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশ করা হয়। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপযার্য়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে বলা হয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে ছাত্রলীগের পর এবার নিষিদ্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের পার্শ্ববর্তী সড়কে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি আয়োজিত গণসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সেদিন থেকে শুরু হবে, যেদিন বাংলাদেশ টাইটেল পাবে ‘বাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ’। আমরা সেই টাইটেল দেয়ার জন্য কিছুক্ষণ আগে মানুষের সমাগম করার জন্য এ জায়গা বেছে নিয়েছিলাম। এ জায়গা থেকে আমরা এখন রাস্তা ব্লকেড করব। ইন্টারিমের কানে আমাদের কথা পৌঁছায় নাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কানে আমাদের আওয়াজ পৌঁছায় নাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আহতদের আওয়াজ পৌঁছায় না, আহতদের আর্তনাদ পৌঁছায় না, আমরা এখান থেকে গিয়ে শাহবাগে অবরোধ করব। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত আমরা জায়গা ছাড়ব না। এর আগে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ ছাত্র-জনতাকে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে অংশ নিতে দেখা গেছে।  এরআগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। রাত পেরিয়ে শুক্রবার সকালে এবং এখনো এনসিপির নেতাকর্মীদের যমুনার প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা সেøাগান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ শুক্রবার বাদ জুমা মিন্টু রোডের পানির ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েতের ঘোষণা দেন। এ বিক্ষোভ সমাবেশে দলমত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি। পোস্টে সারজিস লিখেছেন, আছি যমুনার সামনে। বাদ জুমা যমুনা সংলগ্ন ফোয়ারার পাদদেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও লিখেন, এতে অংশ নেবে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দলসমূহ, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন ও নিপীড়নের শিকার পরিবারগুলো এবং সর্বশেষ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলছে এবং চলবে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে পল্টন মোড় অবরোধ করেছে গণঅধিকার পরিষদ। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে পল্টন মোড়ে গণমিছিল শুরু হয়। এ সময় পুলিশ তাদের মিছিলে হামলা করে। এতে ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন। এরপর মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় ও বিজয়নগর ঘুরে আবার পল্টন মোড় অবরোধ করে গণঅধিকার পরিষদ। এসময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী সড়কের সমাবেশ সমাপ্ত করে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান। আসিফ মাহমুদ পোস্টে লেখেন, নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তিনি আরও লেখেন, গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার। এর আগে, ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ওই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষিদ্ধের বিষয়ে জানানো হয়। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বর্তমান সরকার শিগগিরই পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, প্রথমত এটা অত্যন্ত ইতিবাচক, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ তৈরি হয়। দেশের মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন ওই দলের অগণতান্ত্রিক এবং একগুয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি বলেই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের মধ্যে দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য তৈরি হলে সরকারের জন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সহজ হবে
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ‘গুরুত্বের সঙ্গে’ বিবেচনা করার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার’ উদ্যোগ নিয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত থেকে সরকারপ্রধানের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ নেতৃত্বাধীন একদল বিক্ষোভকারী। তাতে সংহতি প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার জুমার পর সেখানে ‘বড় জমায়েতের’ আয়োজন হয়েছে। এরইমধ্যে দুপুরের পর প্রধান উপদেষ্টার দফতর সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতি দেয়া হল। সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। এ ব্যাপারে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে। এ বিষয়ে সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ‘জনদাবির’ প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রচলিত আইনের অধীনে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমন সম্পর্কে জনমনে ক্ষোভের বিষয়ে সরকার অবগত। এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণের পক্ষ থেকে স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠেছে, তা সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এ বিষয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সর্বদলীয় সভা ডেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে যারা গুম-খুন ও অর্থ-পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বলেছি, এটা জনগণের ব্যাপার, জনগণ যদি চায়। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, যে কোনো রাজনৈতিক দল সেটা নিষিদ্ধ হবে কি হবে না তাতে জনগণের দায়িত্ব রয়েছে। যদি আইন ভঙ্গ হয়ে থাকে, তাহলে বিচার বিভাগ দায়িত্ব নিতে পারে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমি আরেকটা রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ করার কথা বলি না। জামায়াতে ইসলামীর মত দলকেও আওয়ামী লীগ যখন নিষিদ্ধ করেছে, আমরা বিরোধিতা করেছি। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কথা বলতে হবে। আমি দেখতে পারি না, সেজন্য আপনি খারাপ, আপনার উপর সব চাপিয়ে দিলাম, এটা ঠিক নয়। তিনি বলেন, আমরা কখনই এ কথা বলিনি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই।
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি সমাজে প্রবলভাবে রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানকালে গণহত্যার পরও তাদের মধ্যে অপরাধবোধের উপস্থিতি নেই। ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন হীন কর্মকাণ্ড ও পলাতক শেখ হাসিনার চরম উসকানিমূলক বক্তব্য দেখার পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সমাজে আরও সোচ্চারভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগ বা তাদের অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। অনেকগুলো মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। অচিরেই কিছু মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স