ঢাকা , রবিবার, ০১ জুন ২০২৫ , ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সুগন্ধি চাল রফতানির অনুমতি পেলো আরও ৫২ প্রতিষ্ঠান ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঈদযাত্রায় ভোগান্তির শঙ্কা আম উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে : কৃষি সচিব বনানীতে পেট্রোল ঢেলে প্রাইভেটকারে আগুন বনানীতে পেট্রোল ঢেলে প্রাইভেটকারে আগুন সেনাবাহিনীর হাতে এনসিপি নেতা গ্রেফতার সিরাজগঞ্জে ১৬ টন সরকারি চাল জব্দ আটক ৮ ঝিনাইদহ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত বাংলাদেশির মৃত্যু টাঙ্গাইলে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা, স্বামী পলাতক যশোরের শার্শা সীমান্তে বিদেশি অস্ত্রসহ দুই ব্যবসায়ী আটক শৈশবের ক্লাবে ফিরে গেলেন ডি মারিয়া রোনালদোর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে চায় আল নাসর ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে উঠলো নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উইন্ডিজের বিপক্ষে ইংলিশদের রানের পাহাড় ৯ বছর পর ফাইনালের টিকেট পেলো আরসিবি পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতাতে চান হাসান আলি সাবেক বিসিবি সভাপতি ফারুকের দেশ ছাড়ার গুজব বিসিবির নতুন সভাপতি হলেন বুলবুল হোটেলে কথা কাটাকাটির জের বালিশচাপা দিয়ে প্রেমিকাকে হত্যা বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ ঝড়ো হাওয়া ভারী বৃষ্টি
* স্বরাষ্ট্র ও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি করেছে ইনকিলাব মঞ্চ * জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রত্যাহার, বরখাস্ত ২

সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা

  • আপলোড সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:৩৫:৪৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:৩৬:৩০ অপরাহ্ন
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগের পর রাজনীতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে সমালোচনা-তর্ক ও বির্তকের ঝড়। তিনি হত্যা মামলার আসামি হয়েও গভীর রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ত্যাগ করেছেন। তার সঙ্গে শ্যালক ডা. নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদও দেশ ত্যাগ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে তারা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। তাদের দেশ ত্যাগে এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে একজন আসামি রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারেন।
সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট টিকিট অনুযায়ী, ৬ মে তার টিকিট বুক করা হয়। পাসপোর্ট অনুযায়ী, তিনি ৮ মে ঢাকা ত্যাগ করবেন ও আগামী ৭ জুন দেশে ফিরবেন। তারপরও তিনি কীভাবে এত সহজে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পেলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। এ ঘটনা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, খুনিকে নিরাপদে দেশ ত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়। পুলিশ ধরলেও আদালত জামিন দেয়। পাসপোর্ট বাসায় গিয়ে করে দেয়া হয়। আপনারা বলেন বিচার করবেন-কোথায় সে বিচার? তিনি আরও লেখেন, দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল জানুয়ারিতে হওয়ার কথা থাকলেও মে মাসে এসেও শুরু হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো বিচার বা সংস্কার হয়নি।
যদিও টিকিটে ফেরার তারিখ উল্লেখ রয়েছে ৭ জুন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আবদুল হামিদের দেশে ফেরার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। অনেকেই বলছেন, এটি একটি ‘পরিকল্পিত পালায়ন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিক, ছাত্রনেতা, সক্রিয় নাগরিক-সবাই প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে একজন হত্যা মামলার আসামিকে দেশের বাইরে যেতে দেয়া হলো।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান লিখেছেন, আমি শুরু থেকেই এই সরকারের সমালোচনা করে এসেছি। কারণ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে বসে আছে ওয়ান-ইলেভেনের দোসররা। তারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। ২০১৮ সাল থেকে সরকারে থাকা কিছু উপদেষ্টার সঙ্গে তার পরিচয় আছে। এ উপদেষ্টারাই সরকারের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। ওবায়দুল কাদেরসহ যেসব নেতা পালিয়েছে, তারাও ‘সরকারের সবুজ সংকেত’ পেয়েই দেশ ছেড়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন-আবদুল হামিদ তো সরকারি বিধি মেনেই বিদেশে গেছেন। অনুমতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাহলে হাসিনাও চাইলেই দুদকের তলবে হাজির হয়ে আবার সরকারি বিধি মেনে ভারত যেতে পারে। শুধু পরিচিত রাজনীতিবিদ বা নেতারা নন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ছাত্রনেতারাও সোচ্চার। তাদের বলেন, এ ঘটনা দেখিয়ে দেয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনেক সদস্য এখনো ‘পূর্ববর্তী শাসকের ছায়াতে পরিচালিত হচ্ছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগে দায় উপদেষ্টাদের নিতে হবে বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র ও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছেন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে ‘নিজে চলে যাবো।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগের দায় উপদেষ্টাদের নিতে হবে বলে দাবি তুলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদী। সম্মেলনে ওসমান হাদী তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে সরকারকে বলতে হবে, কার ফোনে সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদকে বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও ছাত্র উপদেষ্টাদের জবাবদিহি নিশ্চিতের জোর দাবি জানান তিনি।
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে ‘নিজে চলে যাবো (দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন)’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের তিনি এ কথা বলেন। এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটের সামনে বসে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সব আসামিকে ঘটনার পরে ধরা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঘটনার আগেও ধরা হচ্ছে, পরেও ধরা হচ্ছে। আমি তো অস্বীকার করিনি। ঘটনার আগেও ধরা হচ্ছে, ঘটনার দুদিন পরেও ধরা হচ্ছে। আমি এটা এখানে আসার পর জানতে পারছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের শুধু পদত্যাগ না, তদন্ত করে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো। এটা নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কোনও অবস্থাতেই এটা ছাড় দেয়া যাবে না। এই ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
এ নিয়ে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া আন্দোলনকারীরা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বেশ কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। গতকাল বৃহস্পতিবার ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানান। পোস্টে হান্নান লেখেন, আব্দুল হামিদকে বিমানবন্দরে আটকানো হলো, তারপর নাকি চুপ্পুর অফিস থেকে ফোন কল পেয়ে ছেড়ে দেয়া হলো। এরপরও কি ইন্টেরিমকে জুলাই বিপ্লবীরা সাপোর্ট করে যাবে! তিনি আরও লেখেন, সরি, হয় চুপ্পুকে সরান-লীগকে ব্যান করেন, আর না হয় নিজেরা সরে যান।
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রত্যাহার, বরখাস্ত ২: সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার ও ২ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সদর দফতর থেকে এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার এবং মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও এসবির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এ কর্মকর্তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ সদর দফতর।
গত ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর থানায় আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। মামলায় শুধু তিনিই নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ওবায়দুল কাদেরসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম রয়েছে। মামলাটি ছাত্রনেতা হত্যাকাণ্ডসংক্রান্ত। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন থাকলেও বিচার কাজ শুরু হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও খুনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। অনেকে এরই মধ্যে আত্মগোপনে চলে গেছেন বা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এ প্রেক্ষাপটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ব্যাংকক গমনের ঘটনাকে অনেকে দেখছেন ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ বা ‘পালানোর সূচনা’ হিসেবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স