
মধুখালীতে বৃষ্টির অভাবে লিচুর ফলন কম হওয়ায় হতাশ কৃষক


মধুখালী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
মধুখালীতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে লাভজনক লিচু চাষ। কম খরচে অধিক মুনাফার আশায় প্রতি বছরই কৃষকরা ঝুঁকছেন লিচু চাষাবাদের দিকে। তবে চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়ার অভাবে এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে গাছে লিচু কমধায় আশানুরূপ ফলন হয়নি, আকারেও ছোট হয়েছে। ফলে চাষিদের কপালে হতাশা ছাপ। উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের জাহাপুর, দোস্তরদিয়া, টেংরাকান্দি, মনোহরদিয়া, চর মনোহরদিয়া, খাড়াকান্দি ও মির্জাকান্দি গ্রামে ব্যাপকভাবে লিচুর চাষ হয়ে থাকে। মোজাফফরি জাতের পাশাপাশি গুটি, বোম্বাই এবং চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাষ দেখা যায় এসব এলাকায়। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মধুখালী উপজেলার প্রায় শতাধিক বাগানে এ বছর ৯৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে শুধু জাহাপুরেই রয়েছে ৪০ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে গড় ফলন ধরা হয়েছে ৪.১ টন প্রতি হেক্টরে। জাহাপুর গ্রামের বাগান মালিক আক্কাস আলী এ প্রতিবেদককে জানান, “গত কয়েক বছর ধরে লিচু আবাদ করছি। চাষের পাশাপাশি এ বছর একটি বাগান কিনেছি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায়। শুরুতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও এখন বুঝতে পারছি এটি লাভজনক। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় এ বছর ফলন সন্তোষজনক হয়নি। ” তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি লিচুর সংগ্রহ মূল্য ৭০-৮০ পয়সা। তবে কীটনাশক, লেবার, পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি লিচুর গড় খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২ টাকা। ” নাটোর থেকে আসা মৌসুমি শ্রমিক শাওন জানান, প্রতিদিন ১৫-২০টি গাছ থেকে গড়ে ২ হাজারের মতো লিচু সংগ্রহ করেন তারা। একদিনের মজুরি হিসেবে তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পান। টেংরাকান্দি গ্রামের পারভীন আক্তার বলেন, “প্রতি বছরই লিচুর চাষ করি। ভালো দাম পাওয়ায় এ চাষে আগ্রহ বেড়েছে। এখানকার লিচু দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ” একই গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মৌলিক জানান, “লিচু চাষে যত্ন বেশি নিতে হয়, তবে একবার বাগান তৈরি করলে কয়েক বছর ফলন পাওয়া যায়। অনেক কৃষক এখন ধান বা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে লিচু চাষে ঝুঁকছেন। ” মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব এলাহী বলেন, “এ বছর বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হওয়ায় গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। ফলনও অন্যান্য বছরের তুলনায় কম হয়েছে। তবে প্রযুক্তি নির্ভর পরিচর্যা এবং জলসেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। ”মধুখালীর লিচু ফরিদপুর ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পুরোদমে লিচু সংগ্রহ শুরু হয় এবং জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে ৫-৭টি পূর্ণবয়স্ক লিচুগাছ থেকে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করা যায়, যদি আবহাওয়া সহায় হয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ