
বেড়েই চলেছে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকির পরিমাণ
- আপলোড সময় : ০৫-০৫-২০২৫ ০৫:১৭:৩৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৫-২০২৫ ০৫:১৭:৩৬ অপরাহ্ন


গ্যাস-বিদ্যুৎ ও সার খাতে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ওই তিন খাতে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে সংশোধিত বাজেটে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা বেড়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ভর্তুকি দাঁড়াচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে তিন খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার কোটি টাকা। মূল বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সংশোধিত বাজেটে তা ৬২ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। সারে ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এলএনজিতে ভর্তুকির প্রাক্কলন ৬ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। কেননা সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহে চার কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকার বাড়তি ভর্তুকি দেয়া হয়। যদিও ভর্তুকি কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে। এমনকি সরকারও ভর্তুকি কমাতে চায়। ভর্তুকির কারণেই এখনো আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের সুরাহা হচ্ছে না। অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিলো। এর পরের বছর বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই খাতে খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয় ৫৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তবে গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি ও কিছু ভুল নীতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে অস্বাভাবিক ভর্তুকি বেড়েছে। বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে শুধু দাম বাড়িয়ে নয়, ক্যাপাসিটি চার্জসহ অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও অপচয় রোধ করে এ খাতের ভর্তুকি কমানো প্রয়োজন। তবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সারে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা জরুরি। যদিও বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা হয় বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের সরবরাহ এবং বিপণন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে। মূলত মূল্যম্ফীতি ও জনসাধারণের ওপর বিরূপ প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সরকার পণ্য ও সেবার দাম নির্ধারণ করা হয়। ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য সহনশীল রাখতে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই ওসব খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। সমপ্রতি ৫ টাকা দাম বাড়ানোর পরও বর্তমানে সরকারকে প্রতি কেজি ইউরিয়ায় প্রায় ২১ টাকা, ডিএপিতে ৪৯ টাকা, টিএসপিতে ২৩ টাকা ও এমওপিতে ৪০ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ খাতে ভর্তুকি বাড়াতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও সারে উচ্চ ভর্তুকি চাহিদার পাশাপাশি আগের অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগের চেয়ে বেশি গ্যাস সরবরাহের কারণে আমদানিতেও ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে নানা সংস্কারের মাধ্যমে ১০ শতাংশ খরচ কমিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমে আসবে।
সূত্র আরো জানায়, সারে ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি থেকে সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হলেও কৃষি মন্ত্রণালয় ওই খাতে আরও বরাদ্দ চেয়েছে। সমপ্রতি অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বকেয়া ভর্তুকি বাবদ চলতি অর্থবছরে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তাছাড়া চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার চাহিদা এসেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে আরো অর্থের প্রয়োজন। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও এ খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে অর্থ বিভাগ ১৭ হাজার কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারের চুক্তি ফের দরকষাকষির মাধ্যমে নবায়ন করে ভর্তুকি কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। কন্তিু তা না করে বর্তমান সরকারও আইএমএফের শর্ত মনতে গিয়ে জ্বালানির মূল্য বাড়াচ্ছে। আর দাম বাড়িয়েও সঠিকভাবে ভর্তুকি ব্যবস্থাপনা করতে না পারায় বাজেটের ওপর চাপ বাড়ছে। তাছাড়া এলএনজি আমদানি ব্যয়বহুল। তবে স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলনে জোর দেয়া হলে এতো বেশি ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। গ্যাস স্বল্পতার কারণে সার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। তাই খাদ্য নিরাপাত্তায় কৃষি উৎপাদনের অন্যতম উপাদান সারও আমদানিনির্ভর পড়েছে। সার্বিকভাবে অভ্যন্তরীণভাবে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ