ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বঞ্চনার গল্প যেন অরণ্যেরোদন চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলে ৩ উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিলেন কর্মচারীরা রাষ্ট্র সংস্কারে উপেক্ষিত নারী তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু-আইন উপদেষ্টা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি প্রথমবারের মতো বিটিভির স্টুডিও থেকে হচ্ছে বাজেট ঘোষণা ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নতুন বাজেট আজ দুধ শুধু পণ্য নয় এটি সংস্কৃতির অংশÑ মৎস্য উপদেষ্টা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি পাহাড় ধসের ঝুঁকি সিলেটে টিলা ধসে একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু বিজিএমইএ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ‘ফোরাম’ প্যানেল বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ জাপা চেয়ারম্যানসহ ২৮০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা ঝিনাইদহে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত আহত ৪ কেএনএফের ইউনিফর্ম জব্দের ঘটনায় কারখানা মালিক রিমান্ডে মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই আরও ১১ জনকে পুশইন, মোট সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে নয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিমি. বেগে ঝড়ের আভাস সিলেট-মৌলভীবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
নৌ-যোগাযোগের মাধ্যমে সড়কপথের ওপর চাপ কমানোর লক্ষ্য

কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালের প্রবাহ ফেরাতে ভাঙতে হবে ২০ সেতু

  • আপলোড সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ০৬:৫৬:৫১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ০৬:৫৬:৫১ অপরাহ্ন
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালের প্রবাহ ফেরাতে ভাঙতে হবে ২০ সেতু
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এজন্য একটি প্রকল্পও অনুমোদন করেছে সরকার। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ চলমান রয়েছে। বাপাউবো বলছে, খালটির ওপর নির্মিত ২০টি সেতু পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই শুভাঢ্যা খালের প্রবাহ ফেরাতে হলে ওই ২০টি সেতু ভাঙতে হবে। এজন্য লিখিতভাবে সুপারিশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শুভাঢ্যা খালের দৈর্ঘ্য সাত কিলোমিটার। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এ খাল ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চর কালীগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ও তেঘরিয়া এ দুই ইউনিয়নের ওপর দিয়ে গেছে এ খাল। একটা সময় খালটি প্রবাহিত ছিল। এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত এবং ব্যবসায়িক মালামাল পরিবহনে খালটি প্রধান মাধ্যম ছিল। তবে বর্তমানে খালটিতে কোনো পানিপ্রবাহ নেই। এজন্য খালটির ওপর নির্মিত ২০টি সেতু দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাপাউবোর সূত্রমতে, শুভাঢ্যা খালের ওপর ২০টি সেতু রয়েছে। সেতুগুলো কোথাও খাল দখল করে গড়ে উঠেছে, আবার কোথাও একেবারেই নিচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এসব খালের কারণে পানি ও নৌ-যোগাযোগ দু’টোই বন্ধ হয়ে গেছে। সেতুগুলো হলো পাড়গেণ্ডারিয়া সেতু, খেজুরবাগ সেতু, চরকালীগঞ্জ সেতু, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি সেতু, মুরগিপট্টি সেতু, আলম মার্কেট সেতু, আলম মার্কেট জোড়া সেতু, চরকুতুব সেতু, কদমতলি সেতু, ঝাউবাড়ি সেতু, বেগুনবাড়ি সেতু, সামসুর পোল, পিকে রয় স্কুল সেতু, শুভাঢ্যা স্কুল সেতু, শুভাঢ্যা শ্মশান সেতু, আলিয়াপাড়া সেতু, পাইনা খালপাড়, পুরাহাটি রেলসেতু, আলম মার্কেট-১ ও আলম মার্কেট-২ সেতু।
বাপাউবোর তথ্যে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোর অন্যতম এ শুভাঢ্যা খাল। কারণ এটি বুড়িগঙ্গা নদী থেকে যাত্রা শুরু করে কেরানীগঞ্জের একটি বড় বাণিজ্যিক এলাকা ও একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে অতিক্রম করার পর অবশেষে ধলেশ্বরী নদীতে গিয়ে মিশেছে। বাপাউবো ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ উপজেলাধীন শুভাঢ্যা থেকে আগানগর পর্যন্ত ‘শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণমূলক কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকরণ প্রকল্প’সহ একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু ক্রমাগত জবরদখল, অপব্যবহার এবং কঠিন ও তরল বর্জ্য নিক্ষেপে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে খালটিকে পুনঃখননের জন্য পুনরায় বাপাউবো আরেকটি (শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা) প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে শুভাঢ্যা খাল ও খাল পাড়ের সুরক্ষাকরণ; খাল খনন এবং উন্নয়ন ও সংরক্ষণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ; খালের অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু; স্থানীয় জনগণের জন্য খালের পাড়ে বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিকরণ; খালের পাড়ে হাঁটার রাস্তা ও শহীদ স্মৃতি অঙ্গন নির্মাণ; পাবলিক টয়লেট ও বসার আসন; রাস্তার আলোকসজ্জা ও ড্রেনেজ পাইপলাইন; ওয়াচ টাওয়ার, ভূ-নৈসর্গিক কাজ ও ডাস্টবিন স্থাপনসহ অন্যান্য উন্নয়ন।
ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সহিদুল ইসলাম দৈনিক জনতাকে বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খাল। ময়লা-আবর্জনায় দূষণ আর কতিপয় লোকের দখলে প্রায় বিলীন হতে চলেছে এটি। এক সময় খালটি দিয়ে চলাচল করত ছোট-বড় নৌযান। আর এর স্বচ্ছ পানি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করত দু’পাড়ের মানুষ। এখন আর সেই অবস্থায় নেই খালটি। পুনরায় উদ্ধার করে খালটির ঐতিহ্য ও গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার দাবি করছি। আমি মনে করি প্রথমে এলাকার ময়লা ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধান প্রয়োজন, তা না হলে নতুন করে খালটিকে রক্ষায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপ বাধা হয়ে দাঁড়াবে এসব ময়লা-আবর্জনা।
তিনি আরও জানান, ময়লা সংগ্রহকারীরা স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রতিমাসে নির্ধারিত ফি নিলেও নিয়মিত ময়লা নিতে আসে না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলছে মানুষ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু সমাধান ছাড়া খালটি সংস্কার করলেও তা আবার ভরাট হয়ে যাবে।  ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের খালটি রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে ধলেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। দখলের কবলে পড়ে খালটির প্রস্থ এখন কোথাও কোথাও ১০ ফুটে পরিণত হয়েছে। কালীগঞ্জ জোড়া ব্রিজ থেকে কৈবর্ত্যপাড়া পর্যন্ত খালের জায়গা দখল করে অনেকেই বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। ইতিপূর্বে কয়েকবার সংস্কার করা হলেও গার্মেন্টসের ঝুট ও ময়লা-আবর্জনায় পুনরায় খালটির মুখ ভরাট হয়ে যায়। এতে বুড়িগঙ্গার পানি খালে প্রবেশ করতে পারে না। তাই প্রথমে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের ঝুট ও ময়লা আর্বজনা ফেলা বন্ধ না করলে সংস্কার কোনো কাজে আসবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপাউবোর ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এমএল সৈকত বলেন, শুভাঢ্যা খাল নিয়ে আমাদের একটা বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এখানে প্রাথমিকভাবে আমরা ২০টি সেতু চিহ্নিত করেছি। খালের পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হলে এ সেতুগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। এখন খালের প্রথম পর্বের কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজের সময় সেতুগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। অদূরে বুড়িগঙ্গার ওপারে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খাল পুনরুদ্ধারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাপাউবো। প্রকল্প অনুযায়ী শুভাঢ্যা খালে চলবে নৌকা, দুই পাড়ে হাঁটবে সাধারণ মানুষ। বর্তমানে কঠিন ও তরল বর্জ্যে খালের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে হয়ে পড়েছে। এ খালের পাড় যেটুকু বাকি আছে সেখানে অবৈধ দখলদারদের হাতে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়িঘর, দোকানপাট, কলকারখানা ও মসজিদ ইত্যাদি। এসব রোধে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জোগান দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বাপাউবোকে। ২০২৬ সালের ৩০ জুন নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। প্রকৌশলী এমএল সৈকত আরও বলেন, ?আমরা শুভাঢ্যা খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছি। প্রবাহ ফেরাতে হলে অনেকগুলো ব্রিজ ভাঙতে হবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ব্রিজ ভাঙার কাজ শুরু হবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স