শেরপুর গারো পাহাড় থেকে ফিরে
শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় বেড়েছে বন্য হাতির সংখ্যা। ফলে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় খাদ্যে সন্ধানে বন্য হাতির দল চলে আসছে লোকালয়ে। খাদ্যের সন্ধানে নামছে কৃষি জমিতে। বিনষ্ট হচ্ছে কৃষকের রোপন করা ধানক্ষেত। এ অবস্থায় কৃষি জমি রক্ষায় বন এলাকায় হাতি খাদ্য উপযোগী গাছ রোপনের তাগিদ দিয়েছেন স্থানীয়রা। তার বলেছেন একসময়ের ন্যাড়া পাহাড় গুলোতে নতুন করে বনায়ন করা হয়েছে। ফলে এক দুখে যেরকম গাছ বেড়েছে অন্যদিকে জংলি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে হাতিরা দল বেঁধে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করছে। অথচ হাতির খাদ্য উপযোগী গাছ গাছালি সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। এ কারণে হাতির দল গারো পাহাড় এলাকা পেরিয়ে খাদ্যের সন্ধানে ছুটে আসছে লোকালয়ে। এ অবস্থা একদিকে স্থানীয়রা বন্য হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ঘুরছেন তেমনি কৃষিজমি রক্ষায়ও হতাশায় ভুগছেন।
সরেজমিন ভারতের মেঘালয় সীমান্ত বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বিস্তীর্ণ গারো পাহাড় এলাকায় ঘুরে এবং চিত্র চোখে পড়ে।
নালিতাবির মধুটিলা ইকোপার্কে কোথায় বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেওয়ান আলী জানান, ২০১৮ সাল থেকে ২০ সালে মধুটিলাসহ আশপাশের পাহাড় গুলোকে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করা হয়েছিল সঠিক পরিচর্যার মধ্য দিয়ে এই চারা গুলো এখন বড় হয়ে গাছে পরিণত হয়ে বন সমৃদ্ধ করেছে। সবুজেঘেরা পাহাড়ে নির্বিঘ্ন পরিবেশ পেয়ে বন্য হাতির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। অপরদিকে হাতির খাবার উপযোগী গাছের সংখ্যা তেমনভাবে বাড়েনি বলে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সুফল প্রজেক্টর আওতায় এই এলাকার স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরে গভীর নলকূপ ও রাস্তাঘাট তৈরি করে দেয়া হয়েছে এছাড়া। এছাড়া বননির্ভর মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য ঋণ দেয়া হয়েছে। বনাঞ্চলের মানুষ এখন সেই সকলের ঋণের অর্থ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করে অনেক স্বাবলম্বী হচ্ছেন এ কারণে স্থানীয় মানুষের সাথে বনের গভীর সম্পর্ক হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি হয়েছে তারা জীবন বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য কাজ করছেন ।
অন্যদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙ্গাটিলা রেঞ্জ অফিসার এসবি তানভীর আহাম্মেদ ইমন ? বলেছেন, সুফল প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন বাগান সৃজন করা হয়েছে। বননির্ভর মানুষকে স্বাবলম্বী করার জন্য আমার রেঞ্জ এলাকায় এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার জন্য কাজ করা হয়েছে। স্থানীয়রা স্বাবলম্বী হচ্ছে। তারা সবুজারনের জন্য সহযোগিতা করছে বন বিভাগকে। সারা বছরই ঘুরেফিরে বুনো হাতি বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বিচরণ করছে গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। এই হাতি এখন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বুনো সম্পদ। দেশের সবচেয়ে বেশি হাতির বসবাস শেরপুরের গারো পাহাড়ে তিন উপজেলায়। এসব হাতির খাদ্য উপযোগী গাছ আরো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনার কথা ভাবছে স্থানীয় বন বিভাগ। এ বিষয়ে উদ্বোধন কর্তৃপক্ষদের জানানো হয়েছে।
অপরদিকে শ্রীবরদী উপজেলার বালিয়াজুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া জানিয়েছেন, সুফল প্রজেক্টে মাধ্যমে ৪৩ প্রজাতির গাছের চারা রোপন করা হয়েছে এই এলাকার নির্দিষ্ট বনাঞ্চল এলাকায়। এসব আগে যেসব পাহাড় গাছ বিহীন ছিল সেসব পাহাড়ে প্রাণ ফিরে এসেছে। গাছের চেয়ে বড় হয়ে এখন বড় গাছে পরিণত হয়েছে। নতুন নতুন গাছ জন্ম নিচ্ছে। এলাকার বনায়ন সমৃদ্ধ হয়েছে। গারো পাহাড়ের বন নির্ভর মানুষ এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। সুফল প্রকল্পের সুফল মানুষ ভোগ করছে। গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলে বিভিন্ন প্রকারের ফুল জন্মে আর সেখান থেকেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। তাই বন মধু চাষের উপযুক্ত স্থান।
এখানে কেউ মৌচাষ করে মধু উৎপাদন করতে চাইলে বন বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে তা করতে পারে। শ্রীবরদী উপজেলার পাহাড় ঘেরা মালাকুচা ঝুল গ্রামের বাসিন্দা শওকত আলী (৫৫) তিনি বলেন, এরকম বাগান কোথাও নেই এই বাগানে কাজুবাদাম গাছ আছে। নানা প্রজাতির ফলের গাছ আছে। হাতিরা দল বেঁধে এই বাগানে এসে তাদের খাদ্য খায়। স্থানীয় মানুষ তাদের বিরক্ত করেন না। এ কারণে হাতির সাথে মানুষেরও সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ব্যতিক্রম আছে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়িতে। ওইসব এলাকার গারো পাহাড়ে বন্যহতির খাবারের সংকট রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

গারো পাহাড়ের সবুজায়ন বেড়েছে বন্য হাতির সংখ্যা
- আপলোড সময় : ০২-০৫-২০২৫ ০৭:২৩:৪৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০২-০৫-২০২৫ ০৭:২৩:৪৮ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ