ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মো. মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোখলেছুর রহমান। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের প্রয়াত সাংবাদিক শামসুদ্দীন মোল্লা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি। মোখলেছুর রহমান ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। লিখিত বক্তব্যে মোখলেছুর রহমান বলেন, একজন সংসদ সদস্য, তিনি প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়ণকারী। পরিতাপের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, বেড়ায় যখন খেতের ফসল খেয়ে ফেলে, তখন প্রজাতন্ত্রের স্থিতিশীল পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি একজন আইনপ্রণেতা হয়েও প্রতিনিয়ত তিনি আইন ভঙ্গ করে চলেছেন। মোখলেছুর রহমান বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য তার এলাকায় উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারবেন না। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নিজ বাসভবনে অবস্থান করে তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউছার ভূঁইয়ার পক্ষে অত্যন্ত সুকৌশলে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, তিনি (নিক্সন চৌধুরী) বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত মিটিং করছেন, অর্থ প্রদানসহ কাওছার ভূঁইয়ার পক্ষে ভোট দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোখলেছুর রহমান বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তিনি একাধিকবার রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ আকারে অবহিত করেছেন। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে নির্বিকার রয়েছে। এমপি সাহেবও তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অপর চার প্রার্থী হলেন নিক্সন চৌধুরী সমর্থিত আলগী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. কাওছার ভূঁইয়া (দোয়াত কলম প্রতীক), মো. সহিদুল ইসলাম (মোটরসাইকেল প্রতীক), খান মাইনুল ইসলাম (কৈ মাছ প্রতীক) ও মোখলেছুর রহমানের স্ত্রী লোপা রহমান (আনারস প্রতীক)। অভিযোগের বিষয়ে জানতে নিক্সন চৌধুরীর মুঠোফোনে গতকাল শুক্রবার বিকেল পৌনে ৪টা থেকে সোয়া ৪টার মধ্যে দুবার ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তবে এ বিষয়ে নিক্সন চৌধুরীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এ কে এম খায়রুল বাসার বলেন, মোখলেছুর রহমানের এলাকায় কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তার ভোটও নেই। তিনি বুঝে গেছেন, অবধারিতভাবে তিনি এ নির্বাচনে পরাজিত হতে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি মাননীয় সংসদ সদস্যের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন। নিক্সন চৌধুরীর বাড়িতে নির্বাচন নিয়ে সমাবেশ করার অভিযোগের বিষয়ে এপিএস খায়রুল বাসার বলেন, লিডার (নিক্সন) বাড়িতে এলে তার সঙ্গে কারও দেখা করতে প্রটোকল লাগে না। সবাই লিডারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এ জন্যই তারা ছুটে আসেন। তিনি (নিক্সন) বাড়িতে এলে পাঁচ শ-এক হাজার লোক সব সময়ই থাকেন। এটা নির্বাচন থাকলেও থাকেন, না থাকলেও থাকেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টিকে হয়তো ভুলভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন চেযারম্যান প্রার্থী মোখলেছুর রহমান। তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিয়াউল হক। মোখলেছুর রহমানের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াউল হক বলেন, মোখলেছুর রহমান আগে নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ দিয়েছেন, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে যেসব অভিযোগ করেছেন, এ জাতীয় কোনো লিখিত অভিযোগ তারা পাননি। লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
