ঢাকা , বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ , ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
নতুন লুকে নজর কাড়লেন ব্লেক লাইভলি ভারতীয় অভিনেতার রহস্যজনক মৃত্যু পরিচালক সাজিদ খানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বক্স অফিসে কেমন পারফর্ম করছে ‘কেসারি চ্যাপ্টার টু’? ঋতুপর্ণার নতুন সিনেমার পোস্টার নিয়ে চলছে বিতর্ক ‘আমাকে এতো খোলামেলা পোশাকে দেখার ইচ্ছা কেন?’ প্রেক্ষাগৃহে আসছে জয়ার নতুন সিনেমা অবশেষে ‘তাণ্ডবে’ শাকিবের নায়িকা হচ্ছেন সাবিলা নূর মার্চ মাসে নির্যাতনের শিকার ৪৪২ জন নারী-কন্যা শিশু সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবি শিক্ষকদের মানহানির মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন বাসস এমডি ড্যাপ সংশোধন নিয়ে মতপার্থক্য ত্রয়োদশ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় ভুল থাকার শঙ্কা নকশাবহির্ভূত সব রেস্টুরেন্টের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ৬ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু শেখ হাসিনাকে চুপ রাখতে পারবেন না বলে জানান মোদি স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন দিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হচ্ছে আইন উচ্চ আদালতের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই-আইন উপদেষ্টা দেশকে ভালোবাসলে কেউ পালাতে পারে না-জামায়াত আমির

প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হচ্ছে আইন

  • আপলোড সময় : ২৯-০৪-২০২৫ ০২:১২:০৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৯-০৪-২০২৫ ০২:১২:০৬ অপরাহ্ন
প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর হচ্ছে আইন
প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। আইনে অনমনীয় সব বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে বাতিল হওয়া কঠিন শাস্তির ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’ কার্যকর করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ ছিল। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেদিকে না গিয়ে বিদ্যমান ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় প্রশাসনে। নাজুক পরিস্থিতির সুযোগে দাবি-দাওয়া আদায়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে দাবি আদায়ের আন্দোলনে সংকটে পড়ে প্রশাসন। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক কাজকর্ম। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় একটি অংশ এখনো কাজে অনুপস্থিত। রাতারাতি তাদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্তও নেয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছিল সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতেই আইন সংশোধন করে কঠোর করার বিষয়টি সামনে আসে। কর্মচারী আইন সংশোধন করে শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর সংশোধিত আইনের অধ্যাদেশ জারি হলে মাত্র আটদিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। এমন বিধান সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশে ছিল। সম্প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আইন কঠোর করার পক্ষে মত দিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারাও। তবে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাতে রাজি হননি। গণঅভ্যুত্থানের পর সুযোগ বুঝে অনেক সরকারি কর্মচারী কিছু অযৌক্তিক দাবি তুলে আন্দোলনে নামেন। সচিবালয়ের ভেতরে মিছিল হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে পড়তে হয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলন মোকাবিলায় নাজেহাল হতে হয় সরকারকে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া দেখান কর্মকর্তারা। তারা নিজের মধ্যে হাতাহাতিতেও জড়ান। সিনিয়র কর্মকর্তাদের দিকে তেড়ে যান। তখন এটা নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা করায় ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তির সুপারিশ করে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। দাবি আদায়ে আনসারদের সচিবালয় ঘেরাও করে রাখার কর্মসূচির মুখোমুখিও হতে হয় প্রশাসনকে। আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন সচিবকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন, তাদের তোপের মুখেও পড়তে হয় তাকে। এরপর উপসচিব পদে পদোন্নতির কোটা সংক্রান্ত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ঘিরে প্রশাসন ক্যাডার ও ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। উত্তাল হয়ে ওঠে প্রশাসন। কর্মবিরতি, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তা। সমাবেশ-সেমিনার করেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও। নজিরবিহীনভাবে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ করতে থাকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়। আন্দোলন-বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই সম্প্রতি ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’ ফের কার্যকর করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিদ্যমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নানা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে এবং কেউ কেউ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আইনসঙ্গত আদেশ/নির্দেশ পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন। এতে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ সরকারি কর্মকাণ্ড সম্পাদনে শৈথিল্য প্রদর্শিত হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, আনুগত্য প্রতিষ্ঠা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিহতকরণ এবং দ্রুত আইনগত কার্যক্রম গ্রহণের ব্যবস্থা হিসেবে রহিত করা ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’ পুনরায় কার্যকর করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, অধ্যাদেশটি কার্যকর করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশের আদলে সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিশেষ বিধান অধ্যাদেশ কার্যকর করার পথে যায়নি। বরং বিশেষ বিধান অধ্যাদেশের কঠিন বিধান কর্মচারী আইনে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। সরকারি কর্মচারীদের কোনো অপরাধের দ্রুত শাস্তি বিধানের জন্য কর্মচারী আইন কিংবা শৃঙ্খলা আপিল বিধিমালায় কোনো বিধান নেই। কোনো অভিযোগ উঠলে নানান প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শাস্তি নিশ্চিতে কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছর লেগে যায়। সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী এমন কার্যকলাপে লিপ্ত হন, যা সহকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে, শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে, অন্যদের কাজে বাধা দেয়, অনুমোদিত ছুটি বা বৈধ কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকে বা কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকে, অন্যদের কাজ থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে বা তাদের কর্তব্য পালনে বাধা দেয় এবং অন্যকে অফিসে যোগদান বা তাদের নির্ধারিত কাজ সম্পাদনে বাধা দেয়, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এসব অপরাধের জন্য প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বরখাস্ত, অপসারণ এবং পদাবনতি বা বেতন কমানো-এ তিন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। তাকে অবহিত হওয়ার দুই থেকে পাঁচদিনের মধ্যে অভিযোগের জবাব দিতে হবে বা ব্যক্তিগতভাবে শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হবে। অভিযুক্ত কর্মচারী যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দিতে ব্যর্থ হন বা জবাব দেয়ার পরেও দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে কর্তৃপক্ষ শাস্তি নির্ধারণসহ তাকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে ব্যর্থ হন বা কর্তৃপক্ষের কাছে যদি জবাব সন্তোষজনক না হয়, তাহলে চূড়ান্ত শাস্তি দেয়া হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এমন বিধান ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশেও রয়েছে। তবে খসড়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাতদিনের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বা বিশেষ ক্ষেত্রে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আপিলের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। তবে শাস্তির বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ বিশেষ বিধান অধ্যাদেশে ছিল না। সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, যদি ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানের আলোকে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করা হয়, তবে সেটি দরকার আছে। কারণ আমাদের মতো দেশে আমরা কোনো আইন, নিয়ম-কানুন মানতে চাই না। নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বুঝি না। নিজেরটা পাওয়ার জন্য আমরা যত রকমের আউট অব দ্য ওয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সেজন্য এ রকম কড়াকড়ি দরকার আছে। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধানে আছে যে, প্রথম নোটিশ পাঁচদিন পরের নোটিশ তিন দিন। তাহলে আটদিন হয় (শাস্তি দিতে)। সেখানে তদন্তের দরকার নেই। এখন পুলিশের অনেকে কাজে অনুপস্থিত। এদের ধরার জন্য তো কোনো আইন নেই। এদের ধরার উপায় হলো ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধান বা এমন কোনো আইন করা। এদের বিষয়টি সুরাহা করতে না পারলে নতুন লোকও নেয়া যাবে না, আর যারা চাকরিতে আছেন তাদের মনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, আইন প্রয়োগ করা মানেই কিন্তু শাস্তি দেয়া নয়। মূল হলো বার্তা দেয়া যে, আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। নাম প্রকাশ না করে একজন সাবেক সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, কিছুদিন আগে শিক্ষা ক্যাডার বা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যা করলেন, প্রশাসন ক্যাডারের সচিবালয়ের বারান্দায় শুয়ে রইলেন-এগুলো তো কোনোভাবে মানা যায় না। শিক্ষা ও প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা একে অপরকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এমনটা কখনো হয়েছে বলে শুনিনি। এগুলোর অবশ্যই প্রতিকার হওয়া উচিত। এজন্য আইন কঠোর করার বিকল্প নেই। আইন সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি) এ এন এম মঈনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব স্যারের এখতিয়ারাধীন।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স